উচ্চ শিক্ষা শেষ করে চাকুরিজীবী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বড় হলেও মহামারি করোনা লন্ডভন্ড করে দিয়েছে সব স্বপ্ন। তবে উদ্যমী শাহামা কে ক্যারিয়ারে থামাতে পারেনি। চারদিকে চাকরি হারিয়ে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হতাশায় ডুবেছে কোটিখানিক মানুষ। তবে ভিন্ন গল্প তৈরি করেছে শাহামা। ভিন্ন গল্প তুলে ধরতে টেকজুম থেকে কথা বলেছেন মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপার কাচেরকোল গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন ফারহানা শাহামা। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে স্নাতকোত্তর করতেছেন হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে। করোনার ছুটিতে সময় নষ্ট না করে গ্রাম থেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন ই-কমার্সে দেশি পণ্য বিক্রি করে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আয়ের উৎস হয়েছে দেশি পণ্যের ই-কমার্স।
ব্যাংকে চাকরি নেওয়ার আকাশ চুম্বী স্বপ্ন নিয়ে গত বছর সেপ্টেম্বরে ভর্তি হয় দেশের নামকরা কোচিং সেন্টারে। করোনার কারণে চলতি বছরের মার্চে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে, চলে আসতে হয়েছে বাড়িতে। বাবা এবং বড় বোন সহ সকলের আয় বন্ধ হয়ে পরিবারে তৈরি হয় নতুন সংকট। এর থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া শাহামা।
মে মাসের শেষ দিকে বড় বোনের ফেসবুকে সন্ধান মিলে উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এর। ৩০ জুন জয়েন করে শাহামা। গ্রুপের মনোরম পরিবেশ তাকে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে। আইডিয়া পেয়ে যান ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করার। ১২ দিন পর প্রথম অর্ডার পাওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় ক্যারিয়ারের নতুন অধ্যায়। তৈরি করেন ”বনেদি আহার” নামে ফেসবুকে পেজ।
চারদিকে যখন শাড়ি, থ্রি-পিস, আর বিভিন্ন দেশি পন্যের সয়লাব, শাহামা চিন্তা করল ভিন্ন পণ্যে কাজ করলে মন্দ হবে না। তার পণ্য ই-কমার্সের উপযোগী যাচাই করতে কারিগরের সাহায্যে তৈরি করেন নতুন ডিজাইনের মিষ্টি। আলমারিতে মিষ্টির বক্স ৩ দিন রেখে দিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেয় পণ্যের জীবনকাল সম্পর্কে। তারপর শুরু করেন প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ই-কমার্সে পণ্য বিক্রি।
অর্ডার পাওয়ার পর তৈরি হয় নতুন চ্যালেঞ্জ। গ্রাম থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে (আসা যাওয়ায় ২ ঘন্টা করে ৪ ঘন্টার পথ) শহরে গিয়ে বুকিং দিতে হয় কুরিয়ারে। গ্রাম থেকে শহরের দূরত্ব, সামাজিক কুসংস্কার, মানুষের মন্দ কথা কোন কিছুই তাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। তার সকল ক্রেতা উই ফেসবুক গ্রুপের। ১১ জুলাই থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৩১ গ্রাহকের কাছে মোট বিক্রি করেন তিন লাখ ৬৩ হাজার ১২৫ টাকা।