আজ আন্তর্জাতিক নারী উদ্যোক্তা দিবস। বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বাড়ছে নারীদের পদচারণা।উদ্যোক্তা খাতেও নারীদের অংশগ্রহণ সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে অন্যান্য উন্নত অনেক রাষ্ট্রের তুলনায় নারী ব্যবসায় মালিকানা বাংলাদেশে বেশি। নারী উদ্যোক্তাদের বৈশ্বিক সূচকের হিসেবে বর্তমানে ৩৬.১৪ শতাংশ নারী দেশের শ্রমবাজারে কর্মরত। আনুষ্ঠানিক খাতে ৯ শতাংশ এবং অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করছেন প্রায় ৯১ শতাংশ নারী। একই সাথে দেশিপণ্যের প্রতি নারীদের আগ্রহ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে ব্যাপক হারে।
সংসার, সন্তান পালনের পাশাপাশিও উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব সঠিক নিয়মানুবর্তিতা এবং সদিচ্ছা থাকলে। তেমনই একজন হলেন কাকলী’স অ্যাটায়ারের স্বত্ত্বাধীকারী- কাকলী রাসেল তালুকদার। বাংলাদেশের বিখ্যাত পণ্য জামদানী নিয়ে কাজ করছেন তিনি এবং জামদানীশিল্পকে নিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বপ্ন দেখেন।তিনি নারী উদ্যোক্তা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে টেকজুমকে বলেন, “নারী উদ্যোক্তা দিবসে সকল নারী উদ্যোক্তাকে অভিনন্দন এবং শুভকামনা জানাচ্ছি।আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের মনে রাখা উচিত যে,যে কোনো উদ্যোগ বা ব্যবসা আর সব কাজের মতই একটি সিরিয়াস বিষয়, শখের কাজ নয়। তাই আমাদের সময় দিতে হবে প্রতিদিন এবং এদিকে যতটা সম্ভব শেখার দিকে মন দিতে হবে। এটি সাময়িক কোন কাজ নয় বরং লম্বা সময় টিকে থাকার মানসিকতা থাকতে হবে। অল্পতে হতাশ হলে হবে না। যতটা সম্ভব এদিকে জানতে হবে শিখতে হবে এবং সাহসীকতার সাথে এগিয়ে যেতে হবে।”
২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে ই-কমার্স উদ্যোক্তা বেড়েছে। বেড়েছে দেশিপণ্যের প্রতি মানুষের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া আকর্ষণ।ফলে ই-কমার্স ভিত্তিক উদ্যোগে আগ্রহী হচ্ছেন নারীরা। এই আগ্রহের কারণ দেশিপণ্যের কাঁচামাল সহজলভ্য, জেলাব্র্যান্ডিং পণ্য গুলো নিয়ে কাজ করার মাধ্যমে পরিচিতি পাওয়ার সুযোগ, অর্থনীতিতে পরোক্ষ/প্রত্যক্ষ ভাবে অবদান রাখার সুযোগ ইত্যাদি। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্যকে বয়ে নিয়ে চলা পণ্য।টাঙ্গাইলের খেশ, ঢাকাই জামদানী, সাতক্ষীরার মাদুর, রংপুরের শতরঞ্জি, সিলেটের শীতলপাটি, মুক্তাগাছার মন্ডা, পাবনার ঘি, শেরপুরের তুলসীমালা চাল সহ হাজার রকমের পণ্য নিয়ে কাজ করছেন বর্তমানের নারী উদ্যোক্তারা।
বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এবং বেশিরভাগের কাছেই নতুন এমন দেশিপণ্য নিয়েও কাজ করছেন দেশের নারীরা। যেমন আরিয়া’স কালেকশনের স্বত্ত্বাধীকারী নিগার ফাতেমা। তিনি দেশের টাঙ্গাইল জেলার বিখ্যাত খেশপণ্য নিয়ে কাজ করছেন এবং খেশের বিভিন্ন ফিউশন ভিত্তিক কাজও করছেন। নারী উদ্যোক্তা দিবস নিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে টেকজুমকে তিনি বলেন, “আমি একজন দেশিপণ্যের উদ্যোক্তা হিসেবে বলতে চাই বাংলাদেশের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে দেশিপণ্যের সম্ভাবনা অনেক এবং নারী উদ্যোক্তারাই পারবে দেশিপণ্যকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।ঘর, সংসার সামলে নারী উদ্যোক্তারা পরিশ্রম করে যাচ্ছে এবং আয় করছে। সংসার ও অর্থনীতির হাল ধরছে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে একজন নারী শুধু চাকরির বাজারে নয়, বরং নিজে উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।নারী উদ্যেক্তা দিবসে,সকল নারী উদ্যোক্তা দের শুভেচ্ছা।”
নারী উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ গ্রহণে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়।মূলধন এখনও প্রধান প্রতিবন্ধকতা। সরকারি ভাবে ব্যবসায়িক অনুমতি অর্থাৎ ট্রেড লাইসেন্স, করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর(TIN), ঋণসুবিধা সহ বিভিন্ন ডকুমেন্টেশনের শর্ত পূরণে নানান ভাবে ভোগান্তিতে পড়তে হয় নারী উদ্যোক্তাদের।বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা ও প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে।বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আর্থিক সহায়তা-ঋণসুবিধা দানকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রতি ১০শতাংশ হারে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ প্রদানের নির্দেশ রয়েছে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক।দেশিপণ্যের উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারি ভাবে এই ধরণের সুযোগ সুবিধা আরো বৃদ্ধি পেলে এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আরো এগিয়ে যাবে নারী উদ্যোক্তারা।এগিয়ে যাবে দেশিপণ্য,সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ।