ব্যবসায়ী বাবা ও মায়ের মেয়ে বনি জন্ম ও বড় হওয়া মাগুরাতে। রাজশাহীতে পড়াশোনার জন্য থাকা ২০১৬ সাল থেকে। মাগুরা জেলার মহাম্মাদপুর উপজেলায় প্রত্যন্ত এলাকার একটি গ্রামে তাদের বসবাস । করোনাকালীন সময়ে পড়াশোনা নেই, আবার চাকুরী করার সুযোগও নেই। গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হতে গিয়েও হতে পারেনি করোনার জন্য। স্বাধীনভাবে কাজ করে মেধার ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর চিন্তা থেকে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা। বনির উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প নিয়ে টেকজুমের এবারের আয়োজন।
টেকজুম: উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু কিভাবে?
বনি: মূলত গতানুগতিক চাকরি আমার কখনোই পছন্দ নয়, নিজে কিছু করার অনেক ইচ্ছা ছিল, করোনাকালীন সময়ে কলেজ নেই, পড়াশোনা নেই, বাসায় বসে মনে হচ্ছিলো কিছু করতে পারলে মন্দ হত না, নিজের যদি আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করতে পরি তাহলে ভাল হয় ঠিক তখনি নিজে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করার চেষ্টা করি! ঠিক এই সময় একদিন আমি ফেসবুকে ব্যবহার করতে করতে উই গ্রুপের সন্ধান পাই, সেখানে হাজারও উদোক্তা। তাদের দেখে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হই। আমার টিউশনির কিছু জমানো টাকা দিয়ে শুরু করি এরপর আম্মু ও প্রিয় কিছু ব্যাক্তি আমাকে সাপোর্ট করায় ২২ জুলাই ২০২০ আমার পেজ খুলি Moukhi-মৌখি নামে।
টেকজুমঃ ক্যারিয়ারে ই-কমার্স কেন বেছে নিলেন?
বনি: চাকরী কখনই পছন্দ ছিল না আমার,কারন চাকরীতে ব্যাক্তিস্বাধীনতা কম, আবার চাকরী করলে আমি হয়ত অল্প কিছু সংখ্যক ব্যাক্তির সাথে পরিচিত হতে পারব, সেখানে আমি উদ্যোক্তা হয়ে উঠে সারাদেশেই পরিচিত হতে পারব, আমার প্রোডাক্ট ছড়াবে সারাদেশে এই ভাবনা থেকেই আমার আগানো।
টেকজুম: কি কি পণ্য বিক্রি করেন?
বনি: প্রথমে আমি বেশ কিছুদিন চিন্তা করি আমি কোন বিষয়ে দক্ষ। এই ভাবনা থেকে আমি হ্যান্ডমেড জুয়েলারি নিয়ে কাজ শুরু করার চিন্তা করি। এরপরে রাজশাহী সিল্ক, মসলিন শাড়ি ও তাঁতের শাড়ি নিয়ে কাজ এগিয়ে চলার চেষ্টা করছি।
টেকজুম: Moukhi-মৌখি কে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন?
বনি: মাত্র ৫০০০ টাকা থেকে শুরু করেছিলাম আমার স্বপ্ন , তারপর আমি উই তে রাজীব স্যারের কথা মত একটিভ থেকে সুফল পেয়েছি । বর্তমান আমার প্রোডাক্ট লাইনে আছে আমার নিজের বানানো গহনা, রাজশাহী সিল্ক, মসলিন ও তাঁতের শাড়ি । ভবিষ্যৎ এ আমি রেশম পোকার সাথে সম্পর্ক রাখতে চাই, মানে রাজশাহী সিল্ক ও মসলিনের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চাই এবং আমার প্রোডাক্ট সারাদেশ সহ বিদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই।
নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছিঃ
বনি: নারী উদ্যোক্তা মানেই চ্যালেঞ্জ, কারন আমাদের সমাজ আর যাই হোক নারী কিছু করবে সেটা ভাল ভাবে গ্রহন করে না। বিশেষ করে যারা পরিবার সামলিয়ে উদ্যোক্তা হন। তবে আমার ক্ষেত্র পারিবারিক বাধা ছিল না, প্রথম থেকেই আমি পারিবারিক সাপোর্ট পেয়েছি, বাট সামাজিক বাধা টা বেশি ছিল, কটু কথা, সমালোচনা এইগুলা যত হয়েছে তত আমার জেদ টাও বেড়েছে।
টেকজুমঃ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) কিভাবে আপনার উদ্যোগে ভূমিকা রেখেছে?
বনি: আমার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে বড় অবদান উই এর। কারন আমি প্রথমে আমার পরিবার কেও বলি নাই আমি উদ্যোক্তা হতে চাই, কিন্তু ভার্চুয়ালি অনুপ্রাণিত হয়েছি উই থেকে। উই আসলে আমাদের মত নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদিনের জাদুর প্রদীপের মত কারন নিজের পরিচিতি বাড়িয়ে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরী করার মত এত বড় একটা সুযোগ দিয়েছে উই। পার্সোনালি আমি উই এর প্রতি অনেক বেশি ই কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ রাজিব স্যার, নিশা আপুর প্রতি। আমি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে একটু একটু করে গড়ছি উইতে এসে । কিভাবে একজন উদ্যোক্তা হওয়া যাই, কিভাবে আমার পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরী করব, কিভাবে পরিচিতি বাড়াব সব উই থেকেই শেখা। উই ছিল বলেই শূন্য জ্ঞান থেকে শিখতে শুরু করেছি, প্রতিনিয়তই শিখছি। উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) এর কারণে আজ আমার উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে । আমি আমার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি ।