আমাদের দেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রতিটি ঋতুর রয়েছে তাঁর নিজস্ব কিছু রুপ। পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস নিয়েই আমাদের দেশের শীতকাল কিন্তু শীতকাল আসার আগেই আমরা শীত শীত অনুভব করি। শীতকাল এলেই প্রকৃতি এক নতুন রুপে সাজে। গ্রামগুলো সেজে উঠে এক নতুন রুপে। গ্রামের মাঠ পেরলেই শীতের শিশিরবিন্দুতে ভিজে যায় পা। দুর থেকে কুয়াশায় মধ্যে দেখা যায় গাছি তাঁর কাজে বাস্ত সময় পার করছে। তাঁর নেই কোন ঠান্ডা কিংবা শীত কিন্তু আসলে কি তাই?
শীতকাল এলেই আমরা শুরু করি পিঠা পুলি খাওয়ার উৎসব। পিঠার প্রধান উপকরণ হয়ে উঠে খেঁজুরের গুড়। কিন্তু আগেই মত আমরা কেউ আর খেঁজুরের গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণ পাইয়া। দিন পরিবর্তনের সাথে যেন খেঁজুরের গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু কেন এমন হলো?
আমাদের দেশের জনসংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে, এই জনসংখ্যা বাড়ার কারণে সবকিছুর চাহিদা বাড়ছে কিন্তু যোগান বাড়ছে না। অনুরুপভাবে খেঁজুরের গুড়ের চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে কিন্তু উৎপাদন কমছে। আমাদের দেশের ১৩-১৪ টি জেলার কিছু কিছু জায়গায় এই গুড় উৎপাদন করা হয়, যা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রুতুল।
আজ থেকে ৫-১০ বছর আগে এমন চাহিদা লক্ষ্য করা যায়নি। তখন একটি গাছ থেকে ৩-৪ দিন রস সংগ্রহ করে আবার ৩-৪ দিন শুকাতে দেয়া হতো। তাইতো তখন গুড়ের ছিল মিষ্টি একটি ঘ্রাণ। এক বাড়িতে গুড় বানালে পাঁচ বাড়ি পর থেকে বুঝা যেত। এখন চাহিদা বাড়ার কারণে সেই ভাবে আর গাছ শুকানো হয় না। আগে খেঁজুরের গুড়ের বাণিজ্যিক চাহিদা এতো না থাকার কারণে বাড়ির আশেপাশে এবং আত্মীয় স্বজনদের বাইরে এই গুড় বিক্রি হতো না। তাছাড়া সেই সময় বাণিজ্যিক উদ্দ্যেশ্যে গাছ না লাগানোর কারণে গাছ লাগাতো যথেষ্ট যত্নসহকারে কিন্তু এখন সেইভাবে আর গাছ লাগানো হয় না।
আমি ২ বছর থেকে খেঁজুরের গুড় নিয়ে কাজ করার কারণে আমার চাষিদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছি খেঁজুরের গুড়ের অতীত ও ভবিষ্যৎ। রাজশাহী জেলার দূর্গাপুর উপজেলার জনাব আলি ৬০ বছর থেকে গাছ লাগানোর কাজে জড়িত, তিনি বলেন আগে যে জায়গায় ১০০ টি খেঁজুরের গাছ ছিল এখন আছে ১০ টি। সময়ের সাথে সাথে আমের বাগান এবং জমি চাষের জন্য গাছগুলো কাটা হচ্ছে কিন্তু সেই পরিমাণ গাছ লাগানো হচ্ছে না। তাই দিন দিন গাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। আবার অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে।
আরেকজন গুড় চাষি কামাল উদ্দিন, তাঁর কাছে জানতে চাই? গুড়ের ঘ্রাণ ও স্বাদ কেন আগের মত পাওয়া যাচ্ছে না! সে বলেন, গুড়ের চাহিদা বেশি কিন্তু যোগান কম থাকার কারণে গুড়ের সাথে অতিরিক্ত চিনি মিশানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সে সকল বড় ব্যবসায়ীরা গুড় কিনতে আসে তাঁরা চিনি মিশানোর পরামর্শ দিয়ে থাকে, যাতে গুড় দীর্ঘদিন সংরক্ষরণ করা যায়।
ঐ একই এলাকার গুড় চাষি আব্দুর রহমানের কাছে ভেজালমুক্ত গুড় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবাই এখন দেখতে ভাল গুড় চাই, তাইতো হাইড্রোজ ও চিনি দেয়া হয়। ভাল গুড় দেখতে কালো ও বেশিদিন সংরক্ষরণ করা যায় না।
আমরা নিজেরা সচেতন হলে এবং চাষিদের নায্য মূল্যায়ন করলে আগের দিনের সেই খেঁজুরের গুড়ের স্বাদ ও ঘ্রাণ ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করি।
আব্দুর রাজ্জাক
ফাউন্ডার : বনলতা ফুড