শারমিন সাঈদ । নিজের আত্মপরিচয়ের জন্য কিছু করতে হবে সেই সুবাদেই বিজনেস এ আসা তার । তিনি মনে করেন উদ্যোক্তা হতে গেলে স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্ন হতে হবে বড় আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে থাকতে হবে বিশ্বাস। পরিবার ও সমাজ বাঁধা পেরি নিজেকে তৈরি করছেন একজন সফল উদ্যোক্তা হিসাবে।
টেকজুম: উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু কিভাবে?
শারমিনঃ বাবার কাছে টাকা চেয়ে নিতে ভালো লাগতো না।বাবা বেসরকারি চাকরিজীবী এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি তাই সব সময় চাইতাম কিছু একটা করি যাতে বাবার সাপোর্ট হতে পারি। তাই কলেজ জীবন থেকে টিউশনি শুরু করি। পরবর্তীতে মাস্টার্স পরীক্ষার আগেই বিয়ে হয়ে যায়। পরে আর কিছু করা হয়নি যদিও স্বপ্ন ছিলো ব্যাংকার হবো কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারনে তা হয়ে উঠেনি। বিয়ের পরেই মনে হলো যেহেতু চাকরি করতে পারছি না তাহলে নিজের আত্মপরিচয়ের জন্য কিছু করতে হবে এবং সেই সুবাদেই বিজনেস এ আসা।
টেকজুমঃ ক্যারিয়ারে ই-কমার্স কেন বেছে নিলেন?
শারমিন : চাকরি করতে না পারার পেছনে একটা বড় কারন হচ্ছে বাইরে যেয়ে কাজ করার নিষেধাজ্ঞা, কনজারভেটিভ পরিবারের যা হয় আরকি। অনলাইন বিজনেস ঘরে বসেই করা যাবে এই কারনে কারো নিষেধ ছিলো না আর আমিও উপলব্ধি করলাম চাকরিতে একটা গন্ডির মাঝে নিজেকে খুঁজে পাবো সেখানে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে দেশের ৬৪ জেলার মানুষের মাঝে খুঁজে পাই।
টেকজুম: কি কি পণ্য বিক্রি করেন?
শারমিন : শুরুতে আমি ব্লকের পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করি।কিন্তু ছোট বেবি নিয়ে ব্লকের কাজ করা খুব কষ্টদায়ক হয়ে যাচ্ছিল। আর উইতে জয়েন হবার পর যখন রাজিব স্যার বললেন কোনো কাজ করার আগে শিখতে হবে,এক্টিভ থাকতে হবে, পারসোনাল ব্র্যান্ডিং তৈরি করতে হবে। তখন আমি কাজ টোটালি বন্ধ করে দেই কারন ই কমার্স নিয়ে জ্ঞান ছিলো একদম কম।তখন শুধু পড়াশোনায় ফোকাস করি তারপর ছয় মাস আগে নতুন করে তাঁতের পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করি এবং মাঝে মাঝে ব্লকের কাজ করারও চেষ্টা করি । এখন তাঁতের থ্রি পিস,শাড়ি এবং জামদানী শাড়ি inoventic fashion এর মূল ফোকাসড পণ্য। পাশাপাশি জেলা ব্র্যান্ডিং এর জন্যও আমি মুন্সিগঞ্জের প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য বাহী মিষ্টি জাতীয় খাবার পাতক্ষীর নিয়ে কাজ করছি।
টেকজুম: inoventic fashion কে নিয়ে কি স্বপ্ন দেখেন?
শারমিন : inoventic fashion এর যাত্রা শুরু হয়েছিল দুই বছর আগে কিন্তু নতুন করে এর জন্ম হয় আবার একবছর আগে। মায়ের কাছ থেকে ৭০০০ টাকা নিয়ে শুরু করেছিলাম নতুন ভাবে।মাত্র ছয় মাসে দেশের ২৭ টি জেলায় inoventic এর পণ্য পৌঁছেছে, স্বপ্ন দেখি ভবিষ্যতে এটি ৬৪ জেলায় পৌঁছবে এবং দেশের বাইরেও যাবে ইনশাআল্লাহ।
টেকজুমঃ নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কি কি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছিঃ
শারমিন : উদ্যোক্তা মানেই চ্যালেঞ্জ,সেখানে নারী উদ্যোক্তাদের আরো বেশি চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে হয়।কারন আমাদের প্রথম বাঁধা টাই আসে পরিবার ও সমাজ থেকে। আমার চ্যালেঞ্জটাও শুরু হয় পরিবারকে মানাতেই।ইকোনমিক্সে মাস্টার্স করে কাপড়ের বিজনেস এটা মানতেই চায়নি। আবার আমাদের সমাজে নারী কিছু করবে সেটা ভাল ভাবে গ্রহন করে না। সব কিছু নিয়ে যতটুকু আলোচনা সমালোচনা হয়েছে তা থেকে শিক্ষা নিয়েছি।শুধু এতটুকু মাথায় ছিলো নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, যেদিন সফল হবো সেদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। সেটা মাথায় রেখেই পরিশ্রম করেছি,করছি। আমি ঢাকার বাইরে থাকার কারনে কাচামালের সহজলভ্যতা ছিলো না তার উপর বিজনেস শুরুর সাথে সাথে পুরো দেশ লকডাউন। ঐ সময় টা তে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে পণ্য সোর্সিং এর জন্য তার উপর তখন আমার বেবির বয়স ছিলো মাত্র তিন মাস। বাসা থেকে কুরিয়ার অফিস অনেক দূরে ইত্যাদি সব কিছু ম্যানেজ করেই কাজ করতে হয়েছে।
টেকজুমঃ উইমেন এন্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) কিভাবে আপনার উদ্যোগে ভূমিকা রেখেছে?
শারমিন : আমার উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে বড় অবদান উই এর। বিনা সাপোর্টে তিন মাস শুধুমাত্র উই এর জন্য নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছি। উই এর জন্য ই পরিবারেরও সাপোর্ট পাচ্ছি এখন।আমার শূন্য জ্ঞান থেকে শুরু হয়েছে, উই বিভিন্ন ট্রেনিং এর সুযোগ করে দিয়েছে , রাজিব স্যারের নির্দেশনা পেয়েছি উই এর মাধ্যমেই,একটা বিজনেস রানিং করাতে যা যা প্রয়োজন সব কিছু উই থেকে পেয়েছি আমি। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে একটু একটু করে গড়ছি উই এর কল্যাণেই ।এমনকি উই এর জন্য আমি আমার পরিবারের পাশে দাঁড়াতেও পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ। কৃতজ্ঞতা নাসিমা আক্তার নিশা আপু ও রাজিব আহমেদ স্যারের প্রতি।এমন একটা প্লাটফর্ম তৈরী করে দিয়েছেন যেখানে ৬৪ জেলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য বাহী দেশীয় পণ্য নতুন করে সকলের কাছে পরিচিতি পাচ্ছে এবং আমার মতো হাজারো নারী উদ্যোক্তা তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারছে।
আমি রাজিব স্যারের সকল নির্দেশনা মেনে কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও করবো। আজকে আমি শারমিন সাঈদ নিজের স্বপ্ন পূরণ করার স্বপ্নও দেখতে পারি স্যারের জন্য। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা স্যারের প্রতি।