ব্যবসায় মুনাফা যখন বাড়তে থাকে তখন অনেক উদ্যোগতা মুনাফার একটি অংশ সঞ্চয়ের জন্য বিনিয়োগ করেন। আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ এর ধারা ৪৪(৪)(খ) অনুযায়ী নির্দিষ্ট কয়েকটি খাতে করদাতার বিনিয়োগ বা চাঁদা থাকলে তিনি বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত পাবেন। কর রেয়াত হচ্ছে প্রদেয় করের উপর ছাড়। অনুমোদিত খাতে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করলে ১৫% রেয়াত পাওয়া যায় এবং ১৫ লক্ষ টাকার উপরে হলে অনুমোদনযোগ্য অংকের উপর ১০% পর্যন্ত রেয়াত পাওয়া যায়।
করদাতার বিনিয়োগজনিত কর রেয়াত পরিগণনা করা হয় যেভাবে:
এক্ষেত্রে আমাদেরকে প্রথমে দুটো বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। একটি হলে করদাতার মোট আয় আর অন্যটি হলো রেয়াতের জন্য অনুমোদনযোগ্য অংক।
মনে করি সায়মা একজন জামদানী শাড়ীর উদ্যোগতা। তিনি ২০২০-২১ কর বর্ষে ২০ লক্ষ টাকার শাড়ী বিক্রি করলেন। বিক্রিত পন্য ক্রয়ের খরচ, অনুমোদিত খরচ, অবচয় খরচ বাদ দিয়ে তার নীট আয় হলো ৮ লক্ষ টাকা। ঐ কর বর্ষে সায়মা ৫০ হাজার টাকা জীবন বীমা প্রিমিয়ামে এবং ১ লক্ষ টাকা সঞ্চয় পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ করলেন।
সায়মা যেহেতু নারী উদ্যোগতা তাই প্রথম ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার জন্য তার করের হার শূন্য।
পরবর্তী ১ লক্ষ টাকায় কর দিবেন ৫০০০ টাকা
পরবর্তী ৩ লক্ষ টাকার কর দিবেন ৩০০০০ টাকা
পরবর্তী ৫০ হাজার টাকায় কর দিবেন ৭৫০০টাকা
মোট কর দায় ৪২৫০০০ টাকা।
সায়মা সরকার কর্তৃক অনুমোদিত খাতে বিনিয়োগ করেছেন ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এজন্য তিনি কর দায়ের পর বিনিয়োগজনিত রেয়াত বা ছাড় পাবেন।
বিনিয়োগ রেয়াত হিসেব করবেন যেভাবে :
প্রথমে কর রেয়াতের জন্য অনুমোদনযোগ্য অংক হিসেব করে বের করতে হবে। নীচের( ক), (খ) ও (গ) এর মধ্যে যে অংকটি সবচেয়ে কম হবে সেটি রেয়াতের জন্য অনুমোদিত অংক হিসেবে গণ্য হবে।
ক) রেয়াত পাওয়ার যোগ্য খাতে করদাতার প্রকৃত বিনিয়োগ/ চাঁদার পরিমান যা সায়মার ক্ষেত্রে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা
(খ) করযোগ্য মোট আয়ের [ ৮২ গ ধারার (২)উপধারায় বর্ণিত উৎস/ উৎসসমূহ হতে প্রাপ্ত আয় এবং কর অব্যাহতি প্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত করহার প্রযোজ্য এমন আয় থাকলে তা ব্যতীত] ২৫% যা সায়মার ক্ষেত্রে ২ লক্ষ ।
(গ) ১ কোটি ৫০ লক্ষ
সবচেয়ে কম হলো (ক) প্রকৃত বিনিয়োগ। তাই ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার উপরই তিনি কর রেয়াত পাবেন। অনেজের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যদি সায়মা আরো বেশি বিনিয়োগ করে তখন সে কত টাকার রেয়াত পাবে? সাময়ার করযোগ্য আয় ৮ লক্ষ টাকা এবং এর ২৫% হলো ২ লক্ষ টাকা। তাই সায়মা যদি ৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতো সেক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকার উপর সে রেয়াত পেতো। বাকী ১ লক্ষ টাকার উপর কোন রেয়াত পেতো না।
এখন সায়মা হিসেব করবেন ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার উপর তিনি কত কর রেয়াত পাবেন। যেহেতু ১৫ লক্ষ টাকার কম বিনিয়োগ করেছেন তাই ১৫% রেয়াত বা ছাড় পাবেন। ২২ হাজার ৫০০ টাকা তিনি রেয়াত পাবেন।
সায়মার নীট আয়ের উপর কর ছিলো ৪২৫০০ টাকা। আর বিনিয়োগজনিত রেয়াত পেয়েছে ২২৫০ টাকা। তাই তার নীট প্রদেয় কর হবে ( ৪২৫০০ -২২৫০০) ২০ হাজার টাকা।
করদাতা নীম্নোক্ত খাতগুলোতে বিনিয়োগ করলে উপরে বর্নিত হারে রেয়াত পাবেন :
জীবন বীমা প্রিমিয়াম।
সরকারি কর্মকর্তার প্রভিডেন্ট ফান্ডে চাঁদা
স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে নিয়োগকর্তা ও কর্মকর্তার চাঁদা।
কল্যাণ তহবিল ও গোষ্ঠী বীমা তহবিল চাঁদা।
সুপার এনুয়েশন ফান্ডে প্রদত্ত চাঁদা।
যে কোন তফসিলি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডিপোজিট পেনমন স্কীমে বার্ষিক সর্বোচ্চ ৬০,০০০/- টাকা বিনিয়োগ।
সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে বিনিয়োগ
বাংলাদেশের ষ্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানীর শেয়ার, স্টক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা ডিবেঞ্চারে বিনিয়োগ।
বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত ট্রেজারী বন্ডে বিনিয়োগ।
উপরের লিখনীটি সকলের জ্ঞাতার্থে সাধারন তথ্যের হিসেবে লেখা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ভাবে আপনার আয়কর হিসেব করতে আইনজীবী বা পরামর্শকের পরামর্শ গ্রহণ করা শ্রেয়।
লেখক: ব্যারিস্টার রহিমা হক
প্রতিষ্ঠাতা, আইন সেবা।