গহনা ছাড়া চিন্তাই করা যায় না বাঙালি নারীর সাজ। বর্তমানে নারীদের মাঝে দেশি পণ্যের ব্যবহার বেড়েছে। তাই দেশি ফ্যাশনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে হাতের তৈরি গহনা। চুড়ি, আংটি, কানের দুল, হিজাব পিন, নুপুর সবকিছুর জন্য হাতে তৈরি গহনার একটা ক্রেতাশ্রেণি তৈরি হয়েছে। যাদের সিংহভাগ কেনাকাটা করেন ফেসবুকে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে হাতে তৈরি গহনা নিয়ে ফেসবুকে নিয়মিত পোস্ট কমেন্ট করা হয়।
অতীতে নিজের বা পরিবারের সদস্যদের জন্য গহনা হাতে তৈরি করা হলেও ইন্টারনেট তথা ফেসবুকের কারণে বাণিজ্যিক প্রসার বেড়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও গৃহিণীরা গহনা তৈরিতে এগিয়ে আছে ক্যারিয়ারে। কারণ তাদের হাতে প্রচুর সময় আছে আর গহনা তৈরি একটি শখের কাজ। নিজের মনের ভেতরের নকশাগুলো ফুটিয়ে তোলা যায় গহনার মাঝে। যা সৌন্দর্য বাড়ায় ক্রেতার।
হাতে তৈরি গহনা সম্পূর্ণ দেশীয় শ্রম ও মেধায় উৎপাদিত। কেউ কেউ বিদেশি ম্যাটেরিয়ালে গহনা তৈরি করলেও তা হয়ে থাকে দেশের মাটিতে, দেশীয় ডিজাইনে। হাতে তৈরি গহনা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শতভাগ পরিবেশ বান্ধব। বিভিন্ন কাপড়, পাথর, পাট, বাঁশ, কাঠ, কড়ি, সুতা, ধাতব পদার্থ দিয়ে নানা রকম নকশায় তৈরি করেন উদ্যোক্তারা। এর ফলে গহনা ব্যবহার করা শেষ হলে তা ফেলে দিলে মাটির সাথে মিশে যায় অল্প সময়ে। যা পরিবেশের জন্য কোন ক্ষতিকারণ বর্জ্য তৈরি করে না। এসব গহনা উৎপাদন করতে গিয়ে উদ্যোক্তারা নিজের পছন্দমত, নিজের সিজনশীলতা ফুটিয়ে তোলতে পারেন।
কোন কোন সময় ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী গহনা তৈরি করে দেওয়া হয়। ক্রেতা যখন ম্যাটেরিয়ালের নাম বলে দেয় বা নকশার নাম বলে দেয় তখন সেভাবেই প্রস্তুত করেন উদ্যোক্তারা। এসব কারণে দিনে দিনে ক্রেতার নির্ভরতা বাড়ছে হাতের তৈরি গহনায়। প্রতিটি গহনা হয়ে থাকে ‘অদ্বিতীয়’। এটিকে বলা যায় হাতে তৈরি গহনার বিশেষত্ব।
ফেসবুকের কারণে ক্রেতা পাওয়া যায় সহজেই। উদ্যোক্তা যখন কোন একটি নকশা তৈরি করে সুন্দর ছবি তোলে একটু বর্ণনাসহ ফেসবুকে পোস্ট দিলে তার বন্ধু তালিকার অনেকের দৃষ্টিগোচর হয়। আর গহনা প্রেমিরা এসব উদ্যোক্তাদের প্রোফাইলে ঘনঘন ঢুঁ মারেন নতুন গহনার সন্ধানে। নতুন নকশা পেলেই অর্ডার করতে দেরি করেন না কেউ কেউ। তাই ফেসবুকের কারণে একজন উদ্যোক্তার জন্য সারাদেশের মার্কেট উন্মুক্ত থাকে। তিনি দেশের কোথাও না কোথাও থেকে ক্রেতা পেয়ে যান দ্রুত সময়ে। স্টক করতে হয় না কিংবা জমে থাকার সুযোগ নেই। বরং গহনা জমে থাকার পরিবর্তে অর্ডার জমে থাকে। এসব উদ্যোক্তাদের প্রচুর মূলধন প্রয়োজন হয় না। শুধু নিজের মেধা, শ্রম আর আন্তরিকতাই যথেষ্ট।
গহনা হাতে তৈরি হওয়ার কারণেই একই ডিজাইনে অনেকগুলো তৈরি করা সম্ভব হয় না। একজন উদ্যোক্তা চেষ্টা করলে হয়তো কাছাকাছি ডিজাইনে ১০টা বা ২০টা গহনা তৈরি করতে পারেন। এতেও থাকে অমিল। অর্থাৎ হুবহু করা সম্ভব হয় না। আবার কাছাকাছি নকশা বেশি করতে গেলে কাজের প্রতি চলে আসে অনিহা। অন্যদিকে ক্রেতারাও চায় স্বতন্ত্র গহনা পরিধান করতে। এসব কারণে হাতে তৈরি গহনার একটা ক্রেতাশ্রেণি তৈরি হয়েছে এবং মার্কেটও দিনে দিনে বাড়ছে।
এট একটি সম্ভাবনাময় খাত। যেখানে প্রতি বছর বাড়ছে ক্রেতা ও উদ্যোক্তা। বিশেষ করে শিক্ষা জীবনেই শুরু করা যায় এই ক্যারিয়ার। যার ফলে লেখাপড়া শেষ করার আগেই একটা অবস্থানে পৌঁছে যায় ক্যারিয়ার। তাই হতাশা হতে হয় না ক্যারিয়ার নিয়ে বরং পুরোদুমে মনযোগি হওয়া যায়।
লেখক: জেনিস ফারজানা তানিয়া, স্বত্বাধিকারী: আলিয়া’স কালেকশন।