বাংলাদেশ পিঠাপুলির অনন্য সমাদৃত একটি দেশ৷ এ দেশে পিঠাপুলির প্রথা অনেক পুরোনো৷ আদি কাল থেকেই নানা ধরনের উৎসব পার্বণে পিঠার সমাদর অনেক বেশি৷ পিঠা পুলি মানেই শীতকাল এমন ধারণা ছিল আমাদের ছোটবেলা থেকেই৷ এ বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যুগের পর যুগ৷ শীত আসলেই আয়েজন হয় নানা ধরনের পিঠা৷ হেমন্তকালের পর নতুন ধান ঘরে ওঠে আর ধুম পরে যায় নানা ধরনের পিঠা তৈরীর৷ সারা বছরের অপেক্ষার সময় যেনো আসে এ শীতকালে৷ পিঠার আয়েজন আর খাওয়া দুটোই পুরো আমেজে চলে শীতকালে৷ একটা দীর্ঘ সময় ধরেই এ প্রচলন চলে আসছে৷ পিঠা খেতে হলে শীতকাল পর্যন্তই অপেক্ষা করতে হবে৷ কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এ পরিস্থিতির এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন৷ তা হলো এখন সারাবছরই সকল ধরনের পিঠার স্বাদ নেয়া যায় বা পাওয়া যায়৷ তার একমাত্র কারণ হলো হোমমেইড ফুড এর প্রসার৷ হোমমেইড ফুড এর প্রসারের ফলে এখন ঘরে বসেই সারাবছর নিজের পছন্দের পিঠার স্বাদ নেয়া যাচ্ছে৷
একটা সময় যে পিঠার জন্য সারাবছরে শীতকালের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হতো এখন আর তা করতে হয় না৷ কারণ এখন হোমমেইড ফুড উদ্যোক্তাদের জন্য সারাবছর তাদের কাছে পিঠা পাওয়া যায়৷ হোমমেইড ফুডে সকল কিছুই অনেক মানসম্মত ভাবে করা হয়৷ পিঠা তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণগুলোও বেস্ট হয় হোমমেইড ফুডে৷ হোমমেইড ফুডের প্রসারের ফলে এখন এ সেক্টরে অনেক উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে৷ ফলে সেখানে পিঠা তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়েও তৈরী হচ্ছে উদ্যোক্তা৷ যেখান থেকে প্রোডাক্ট সংরক্ষণ করে সহজেই তৈরী করা যাচ্ছে হোমমেইড পিঠা৷ আগে যেখানে বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে শুধু পিঠা পাওয়া যেতো এখন সেখানে সারাবছরই পিঠা পাওয়া যায় হোমমেইড ফুডের প্রচারের ফলে৷ ভাপা পিঠার কথাই যদি চিন্তা করি তাহলে শীতের সকাল যেনো মনের অজান্তেই চলে আসে, আবার তেলের পিঠা শীতের সন্ধ্যায় চুলার পাশে বসে গরম গরম তেলের পিঠা শীতের চাদর জড়িয়ে খাওয়া যেনো ভাবনায় চলে আসে, কিন্তু তাই বলে বছরের অন্যান্য সময় এসব পিঠা খেতে মন চায় না সেটা নয়৷ এখানে বিষয় হলো সহজলভ্যতা ও মানসম্মত হওয়া৷ পিঠা অত্যন্ত সেনসিটিভ একটা বিষয়৷ সেখানে অনেকেই পিঠার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্ব দিয়ে বিষয়গুলো চিন্তা করে৷ তাই ভালো ও মানসম্মত না হলে পিঠা নেওয়ার চিন্তা ও করতে পারেন না৷ সেখানেই আস্থার জায়গা হয়ে ওঠেছে হোমমেইড ফুড। কারণ হোমমেইড ফুড এখন ঘরে বাইরে সবার কাছে সমাদৃত হচ্ছে এই স্বাস্থ্যকর ও মানসম্মত হওয়ার জন্য৷ তাই যখন একজন থেকে আরেকজন এর কাছে এর প্রচার বাড়ছে তখন এর প্রসার বাড়ছে৷ ফলে সবাই ধীরে ধীরে এর প্রতি আগ্রহী হচ্ছে৷
দুধ চিতই পিঠা, সেমাই পিঠা এগুলো রান্না করা একটু সময়সাপেক্ষ ও অনেকেই অপারগতা বা সময়ের অভাবে করতে পারেন না৷ কারণ ব্যস্ততম এ সময়ে সবাই চারদিকের ব্যস্ততায় নিজে তৈরী করবে বা ছুটিতে প্রিয়জনদের কাছে যেয়ে খাবে সেটা করা হয়ে ওঠে না৷ সেই জায়গায় ভরসা হয়ে ওঠছে হোমমেইড ফুড। কারণ হোমমেইড ফুড তার সহজ সমাধান হিসেবে রেডি করে তাদের বাসায় পছন্দ মতো সময়ে সম্পূর্ণ হাইজিন মেইনটেইন করে পাঠাতে পারছে৷ আজ হোমমেইড ফুড এর এই জায়গাটা তৈরী না হলে এতো সমাধান তৈরী হতো না৷ তৈরী হতো না নতুন কোনো পথ৷ কিন্তু এখন হোমমেইড ফুড উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে হোমমেইড নানা ধরনের খবার সারাবছরই সবার কাছে সহজলভ্য হয়ে ওঠছে৷
এই পরিবর্তন টা তৈরী হয়েছে একটা দীর্ঘ প্রচেষ্টার ফলে৷ যা প্রায় গত ৪ বছর যাবৎ ই করে যাচ্ছেন ই ক্যাব এর ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট শ্রদ্ধেয় রাজীব আহমেদ স্যার৷ স্যার একান্ত ভাবেই হোমমেইড ফুড এর আলাদা জায়গা ও বিশ্বস্ততা ও উদ্যোক্তা তৈরীর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন৷ সেখান থেকে আজ পরিস্থিতি অনেক পজিটিভ অবস্থানে এসেছে৷ যার সুফলে পিঠার মতো জিনিসটাও আমরা এখন সারাবছর পাচ্ছি৷ পিঠা নিয়ে কাজ করা উদ্যোক্তারা এখন সারাবছরই দেশের নানা অঞ্চলের সমাদৃত নানা ধরনের পিঠা তৈরী করছে৷ এটা প্রয়োজন ও ভালোলাগাকে পূর্ণ করছে অনেকের৷ অনেকেই নিজের পছন্দের সাথে সাথে নিজেদের প্রিয়জন বা আত্মীয়স্বজন দের জন্য ও অর্ডার করে দিতে পারছেন সাচ্ছন্দ্যে৷ কারণ আস্থা আছে৷ সেটা বছরের শুরু হোক বা মাঝখানে বা কাঠফাটা গরমের সময়ও৷ এখন বৃষ্টির দিন হলেই আর তেলের পিঠা খেতে মন চাইলেও তার জন্য অপেক্ষায় থেকে আফসোস করতে হচ্ছে না অনেককেই৷ তার কারণ এই হোমমেইড ফুড এর প্রচার ও প্রসার৷
বিভিন্ন জেলার পিঠা নিয়ে কাজ করছেন অনেক উদ্যোক্তারা, এতে করে অনেকেরই তার পছন্দের পিঠাগুলো পাচ্ছেন, সেটা হতে পারে নকশি পিঠা, কিংবা পাকান পিঠা, অথবা তেলের পিঠা আবার কারও বা হাতে কাটা সেমাই পিঠা৷ আজ হোমমেইড ফুড এর প্রচার বা প্রসার যদি এতোটাও না হতো তাহলে কোনো ভাবেই মানুষের এই স্বস্তির জায়গাটা তৈরী হতো না৷ হোমমেইড ফুড মানে ভালো খাবার, নিজের পরিবারকে দেয়া যায় নিশ্চিন্তে এমন চিন্তাটাই আসে সবার আগে৷ একদম ঘরে তৈরী খাবার যেটা৷ সেখানে সবাই ভরসাটা অনেক বেশি করে৷ তাই পিঠার বেলাতেও এমনটা হচ্ছে৷ হোমমেইড ফুড এর প্রচারের ফলে এখন সারাবছরই বিভিন্ন ধরনের পিঠা খাওয়া যাচ্ছে৷ এতে করে উদ্যোক্তাদেরও একটা সাসটেইনেবল পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে৷ পজিটিভ প্রভাব তৈরী হচ্ছে এই ই কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে হোমমেইড সেক্টরের৷ যেটা নিসন্দেহে অনেক ভালো একটা দিক৷
ইনশাআল্লাহ এই প্রভাব সামনে আরও অনেক ভালো ভাবে এই প্রচার বাড়বে ও তা আরও পজটিভ চিন্তাকে প্রসারিত করবে৷ যার ফলে শুধু পিঠা নয় সব ধরনের খাবারই মানুষ আরও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে পেতে পারবে৷ হোমমেইড ফুড আলাদা ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে পরিচিত হবে আর তার সুফল পুরো ইন্ডাস্ট্রিতেই ছড়িয়ে পরবে৷
লেখক, লাবনী আক্তার, স্বত্বাধিকারী: নবান্ন