সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এখন শেখার জন্য জনপ্রিয় হচ্ছে ধীরে ধীরে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখতে পাই ই-লার্নিং এর জন্য সেরা প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্মটি। এই প্ল্যাটফর্মটি স্কিল ডেভেলপমেন্ট, টেকনিক্যাল নলেজ, আইটি নলেজ,কোর্সেরা ট্রেনিং, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, পেইজ মেইন্টেইন,বিজনেস বিষয়ক সহ বিভিন্ন ধরণের তথ্য জানা যায় এবং শেখা যায় বলে জানা গিয়েছে।একদম বাংলায় এই কঠিন বিষয় গুলো নিয়ে এর আগে কেউ বা কোনো প্ল্যাটফর্ম কাজ করেনি তাও বিনামূল্যে। ২০১৮ এর ২৩শে জানুয়ারি ১৫০জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশের ফেসবুক গ্রুপটি। এটির শুরুর দিকে বড় না হলেও নিজের মতো কাজ করে গিয়েছে। নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং এর ধারাবাহিকতায় এটিতে বর্তমানে ৫লক্ষেরও বেশি সদস্য রয়েছেন যারা প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছেন এই গ্রুপ থেকে। এই প্ল্যাটফর্মটি গত তিন বছর ধরে এ খাতে কাজ করছে বিনামূল্যে।এটির নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে বর্তমানে।
প্রতিদিন প্রায় এক লাখেরও বেশি সদস্য এই গ্রুপে সময় দেন,বিভিন্ন বিষয়ে লেখেন এবং পড়েন। এই গ্রুপের খুব জনপ্রিয় এবং ফলপ্রসূ একটি আইডিয়া হলো ১০ মিনিট রাইটিং প্র্যাকটিস। এর অন্য নাম বেসিক রাইটিং প্র্যাকটিস। এটির জন্য একটি নির্দিষ্ট লিংকে দেওয়া ১২২টি পোস্ট থাকে এবং প্রতিটি ২মিনিটে পড়ে ৮মিনিট সময় নিয়ে একটি মতামত/পোস্ট লেখা হয় আর এটি নিয়ম। এটি পুরো শেষ করতে সাধারণত ২-৬দিন লাগে। ফলে অনেকেই এটির কারণে তাদের পরিবর্তন, উপকারের কথা জানিয়ে গ্রুপটিতে লেখেন নিজের মতামত এবং অনুভূতি। এমন কয়েকজনের সঙ্গে টেকজুম কথা বলেছে এবং এ নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছে।
আমরা প্রথমেই কথা বলেছিলাম দেশিপণ্যের উদ্যোগ “সুপ্ত প্রয়াস” এর স্বত্ত্বাধীকারী সাঈদা তামান্নার সাথে। তিনি ২৪শে এপ্রিল, ২০২০ এ ডিএসবিতে জয়েন করেন এবং এর কারণ হিসেবে তিনি জানান তাকে ই-ক্যাবের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট এবং সার্চ ইংলিশ এর প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদ এই পরামর্শ দিয়েছিলেন। এ নিয়ে অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে সাঈদা তামান্না টেকজুমকে জানান, গত বছর ২৭ নভেম্বর এ সিরাজুম মুনিরা আপুর কাস্টমার মিট আপের ইভেন্টে গিয়ে প্রথম বারের মতো রাজিব স্যারের সাথে সরাসরি দেখা হয় এবং মিট আপের শেষের দিকে স্যারের সাথে কথা হয়।তখন স্যার আমাকে ডিএসবিতে সময় দিতে বলেন এবং ১০ মিনিট রাইটিং পোস্ট লিখতে বলেন। আমি সেদিন রাত থেকেই রাইটিং পোস্ট লিখা শুরু করি এবং ৬দিনে ১২২টি পোস্ট লিখা শেষ করি। এই রাইটিং পোস্ট লিখে আমি নিজের মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখেছি।খুব দ্রুত পড়ার অভ্যাস হয়েছে,দ্রুত যেকোনো বিষয়ে চিন্তা করতে পারি, চিন্তা শক্তি বেড়েছে এবং বাংলা টাইপিং খুব দ্রুততম হয়েছে। পাশাপাশি রাইটিং পোস্ট লিখে আমি বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন উপন্যাস,গদ্য ও রচনা সমগ্র সম্পর্কে জানতে পেরেছি যা আগে জানার সুযোগ হয় নি।এর মাধ্যমে প্রথম স্কুল জীবনের স্মৃতি, বাবার প্রতি ভালবাসার মর্ম এবং পারিপার্শ্বিক নানাবিধ বাধা পার হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এই ১২২ টি রাইটিং পোস্টের প্রতিটিতে ছিল নতুন করে জেগে ওঠার প্রান শক্তি এবং নিজেকে মানসিক ভাবে যেকোনো পরিস্থিতিতে প্রস্তুত করার উপকরন।এর ফলে যেমন পরিচিতি পেয়েছি তেমনি নিজের ব্যাক্তিগত দক্ষতার ও উন্নতি ঘটিয়েছি।তাই আমি সবাইকে অনুরোধ করতে চাই যেন সবাই নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এটি লিখে শেষ করেন।এটি থেকে সব চেয়ে বেশি অনুধাবন করেছি নিয়মিত থাকার ফলাফল। নিয়মিত লিখে গিয়েছি বলেই নিজের মধ্যে পড়ার,লিখার ও চিন্তা শক্তির প্রখরতার দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছি।
দোলা রোদেলা বুটিকের স্বত্ত্বাধীকারী আইরিন আক্তার রিতার কাছে ১০ মিনিট রাইটিং পোস্ট এর উপকারিতা বা অনুভূতি নিয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি টেকজুমকে জানান, “আমি খুব দ্রুত লিখতে এবং পড়তে পারতাম না আগে। কিন্তু শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারের ১০ মিনিট রাইটিং পোস্ট গুলো পড়ে লেখার কারনে এখন আমি অনেক দ্রুত লিখতে এবং পড়তে পারি।পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছে অনেক বছর পর পূনরায়। বাংলা লিখতে এখন একটুও কষ্ট হয় না। দশ মিনিট রাইটিং পোস্টের উপকারীতা লিখে শেষ করা যাবে না।ধন্যবাদ জানাচ্ছি রাজিব আহমেদ স্যার কে।
রওনক জাহান ১৮ই ডিসেম্বর ২০২০ এ ডিএসবিতে আসেন। ফার্মেসিতে স্নাতক করা রওনক একজন দেশিপণ্যের উদ্যোক্তা এবং তার উদ্যোগের নাম ” আসুফা”। রওনক এর মতে এই প্র্যাকটিসটি কন্টেন্ট রাইটিং,পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং, বিজনেস সহ বিভিন্ন খাতে সাহায্য করে। তিনি আরো মনে করেন যে এর সঙ্গে আত্মবিশ্বাসের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।তিনি ৪দিনে শেষ করেছেন ১২২টি প্র্যাকটিস পোস্ট।এর উপকারিতা সম্পর্কে টেকজুমকে রওনক বলেন, প্রথম যখন শুরু করব তখন অনেক চিন্তা হচ্ছিল যে শেষ করতে পারবো কি না, তারপরও সাহস করে শুরু করলাম এবং লিখতে লিখতে দেখলাম স্যারের কথা মত আসলে চিন্তা শক্তি বেড়ে গিয়েছে, খুব স্বতঃস্ফূর্তভাবে লিখতে পারছি।এগুলো লিখতে গিয়ে মনে হয়েছে আমার মনের দুয়ার খুলে গেছে। লিখতে গিয়ে একের পর এক আইডিয়া এসেছে। প্রথম কয়েকটি পোস্ট বেশ ভেবে চিনতে লিখতে হয়েছে কিন্তু পরের পোস্ট গুলো লেখার সময় আঙুলের ডগায় একের পর এক শব্দ এসেছে, দ্রুত চিন্তা করার শক্তি পেয়েছি। ৪ দিনে শেষ করেছিলাম টেন মিনিট রাইটিং এর ১২২ টা পোস্ট।প্রতিটা পোস্ট লেখা শেষ করা যেন নিজের সাথে নিজের প্রতিযোগিতা, যেন প্রতি দিন জিতে যাওয়া নিজের কাছে। এই অনুভূতি আমি পেয়েছি শুধুমাত্র এই লেখা গুলো শেষ করে। এতে আমার যে আত্ববিশ্বাস তৈরী হয়েছে তা আমার সারা জীবনের সম্পদ। এখন মনে হয় একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে গেলে সফলতা আসবেই। আমি জানি রাজিব স্যার এর প্রতিটা টাস্ক আমাদের জীবন, ব্যাবসা, মূল্যবোধ, নিজেকে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হিসাবে সাহায্য করবে।
১২ই নভেম্বর ২০২০ থেকে ডিএসবিতে নিয়মিত পড়াশোনা করছেন বরিশালের ইসরাত জাহান। পেশায় তিনি দেশিপণ্যের একজন উদ্যোক্তা। এ বিষয়ে তিনি টেকজুমকে অনুভূতি জানান এবং বলেন, আমি এটি শুরু করেছিলাম নিজের প্রয়োজনে। আমার উদ্যোগের কাজ করতে গিয়ে হাতে সুই ফুটে ভেঙে যায় এরপর হাসপাতাল থেকে ভাঙা সুই তুলতে হয়। সেই হাতে কিছু করতে পারছিলাম না,কাস্টমার কে রিপ্লাই দিতে, কিছু লিখতে অনেক সময় লেগেছিল।একদিন একটি পোস্ট লিখতে ২ঘন্টা লাগলো এরপর এটির প্রয়োজন বোধ হচ্ছিল আর সেই হাত নিয়েই আমি ৭ দিনে শেষ করেছিলাম রাইটিং পোস্ট।শেষ করার পর একটা জিনিস বুঝেছিলাম আমি বা আমরা চাইলেই পারি, শুধু ইচ্ছাশক্তি থাকতে হয় প্রবল। আমি খুব দ্রুত লিখতে পারি, পড়তেও পারি দ্রুত। যুক্তবর্ণ ভুল লিখতাম আগে সেটা ঠিক হয়ে গিয়েছে।বাংলা দ্রুত পড়তে পারার ফলে আমার নিজের বিজনেসে উপকার হচ্ছে। বাংলা সাহিত্য পড়েছি এখানে।১০ মিনিট রাইটিং পোস্ট আমার চিন্তাশক্তিও বৃদ্ধি করেছে। আমি এখন সহজেই যে কোনো বিষয়ে ৫-৭ মিনিট কথা বলতে পারি যা আগে আমার জন্য সহজ ছিল না, আমার শব্দভান্ডারের উন্নতি হয়েছে।আমি একটি জিনিস বুঝেছি সেটা হল টার্গেট ঠিক রাখলে সেটা করা যায় আর সব টার্গেট ফুলফিল করাই কস্টের।আসলে পারব না বলে কোন কথা নাই। শুধু ইচ্ছাশক্তি দরকার। রাজিব আহমেদ স্যার কে ধন্যবাদ। যারা শেষ করেছে তারাই উপকৃত হচ্ছে।
পাহাড়ি’র ওনার রুপেনা আক্তার রুপার কাছে ডিএসবি মানে যেকোনো বয়সের যেকোনো ব্যক্তির ভেতর লুকিয়ে থাকা প্রতিভা এবং যোগ্যতাকে শান দেওয়ার মূলমন্ত্র। ডিএসবিতে তিনি ২০২০ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর থেকে আছেন এবং এই প্র্যাকটিস তিনি তখন শুরু করেন। এ বিষয়ে টেকজুমকে তিনি বলেন, “এটি শেষ করে বুঝলাম নিজের মতো কন্টেন্ট করে লিখতে পারি অনায়াসে।এটি হলো ঝংকৃত মস্তিষ্কে বুদ্ধির উদয় করার সূর্য।এটির ফলে কম সময়ে দ্রুত পড়া যায়,বাংলা টাইপিং দক্ষতা অনেক গুন বেড়ে যায়।আমার মতে, ১০মিনিট রাইটিং পোস্ট লেখা শুরু করলে দেখা যায় যে কেউ নিয়মিত হতে বাধ্য।কারণ ঘুমন্ত মস্তিষ্ক জেগে গেলে সেখানে পড়াশোনা এবং নতুন কিছু জানা-লেখার আগ্রহ সৃষ্টি করে ফলে নিয়মিত হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখে। করোনাকালীন জীবন বেলায় হতাশ হলে সে হতাশা কেটেছে ১০মিনিট রাইটিং পোস্ট লিখতে বসে। আমি চিরকৃতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারকে যিনি একদম বিনা পয়সায় আমাদের জন্য ডিএসবির মত একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়েছেন, যেখানে যেকোন সময় যে কেউ পড়তে পারে, লিখতে পারে।আমি আশাবাদী একদিন ডিএসবি বিশ্বের সেরা গ্রুপ হবে যেখানে লাখ লাখ মানুষ সার্চ করে পড়াশোনা করবে। আমার এগিয়ে যাওয়ার সূচনা কেবল ১০মিনিট রাইটিং পোস্টের হাত ধরে যেখানে বিদ্যাপীঠ ডিএসবি এবং প্রতিষ্ঠাতা রাজিব আহমেদ স্যার।
বিডিম্যানগ্রোভ.কম এর স্বত্ত্বাধীকারী সালাউদ্দিন আহমেদ ডিএসবিতে নিয়মিত সময় দেন এবং পড়াশোনা করেন। ৮মাস আগে তিনি ডিএসবিতে জয়েন করেন।তার মতে, একজন মানুষের বেসিক স্কিল আদৌও কতটা থাকা প্রয়োজন সেটা সম্পর্কে নিজেরা কতটা অবগত সেটা ডিএসবিতে আসলে জানতে পারা যায়। দক্ষতা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। একজন মানুষ দক্ষতা উন্নয়নের সকল বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে এখানে দৃশ্যমান।
ইপ্পি শপিং এর ওনার রোখসানা আক্তার পপি বলেন, শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারের ১০ মিনিট রাইটিং প্রজেক্ট ডিএসবির সেরা সাফল্যের মধ্যে একটি। এগুলো নিয়ে একটা কথাই বলবো,নতুন করে নিজেকে উজ্জীবিত করে বাঁচার ও স্বপ্ন পূরণের পথটা খুঁজে পেয়েছি। ২১ ঘন্টায় শেষ করেছিলাম রাইটিং পোস্ট গুলো। নিজের ভাষায় লিখতে পারা চিন্তা করা সৃজনশীল লেখনীগুলো ফুটিয়ে তোলা দ্রুত লিখতে পারা এগুলো রাইটিং পোস্টের বিশেষ গুণ। শর্টকাটে সফলতা আসলেও সেটা টেকসই হয় না। বাংলা ভাষায় লেখালেখি নিজের সম্পর্কে বলতে বলা, প্রেজেন্ট করা রিডিং স্কিল ডেভেলপমেন্ট করা এগুলো নিয়ে ইতিপূর্বে কেউ ভাবেনি তখন স্যার এগুলো নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন আর এর অর্থবহ গুরুত্ব আমরা এখন খুব সহজেই নিজেদের মাঝে রপ্ত করতে পেরেছি। ফেসবুকে ইতিবাচক পড়াশোনা করে নিজেকে স্কিলড করা যায় তার দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হলো বেসিক রাইটিং পোস্ট। বিদ্যা অমূল্য ধন এটা চূড়ান্ত সত্যি কথা কেননা যেখানেই যে পড়াশোনা টা করেন না কেনো সেটা সারাজীবন আপনার সম্পদ হয়ে থাকবে আর পড়াশোনার গুরুত্ব পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টিতে বেসিক রাইটিং পোস্ট গুলোর প্রয়োজনীতা বলে শেষ করার নয়।