বিশ্বের প্রায় প্রত্যেক মানুষ পকেটে ছোট একটি সুপারকম্পিউটার বহন করছে, যা ব্যবহার করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখে নেয়া, গেম খেলা, মিডিয়া কনটেন্ট স্ট্রিম করা, ছবি ধারণ কিংবা ডাটা বিশ্লেষণের মতো কাজ অনায়াসে করা যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তির দারুণ একটি অনুষঙ্গ স্মার্টফোন। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে স্মার্টফোন ডিভাইস। এতে পুরনো স্মার্টফোন ফেলে নতুন কেনার আগ্রহ দেখা যায় গ্রাহক পর্যায়ে। এক পর্যায়ে পুরনো স্মার্টফোন ফেলে রাখা হয় বাসাবাড়ির যত্রতত্র। তবে পুরনো স্মার্টফোনের ওয়াই-ফাই সংযোগ সচল থাকলে তা ফেলে না রেখে নানা কাজে লাগানো যায়।
চলুন দেখে নেই পুরনো স্মার্টফোন যেসব কাজে লাগানো যেতে পারে
ওয়্যারলেস রাউটার
বেশির ভাগ স্মার্টফোনেই বিল্টইন ওয়াই-ফাই হটস্পট ফিচার থাকে। এ ফিচার থাকলে আপনি সহজে পুরনো স্মার্টফোনটিকে পোর্টেবল রাউটার হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। থ্রিজি সিম কার্ড দিয়ে এ সুবিধা নেয়া যাবে। পকেট ওয়াই-ফাই হিসেবে পুরনো স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে ইন্টারনেট সমর্থিত প্রত্যেকটি পণ্যে আলাদা সংযোগ নেয়ার প্রয়োজন হবে না। কাজেই পুরনো স্মার্টফোন ফেলে না রেখে নিরাপদ অ্যাকসেস পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ওয়াই-ফাই হটস্পট তৈরি করে নিতে পারেন নিজেই।
অ্যাপ্লিকেশন পরীক্ষা
অ্যান্ড্রয়েড ও আইওএসের পাশাপাশি উইন্ডোজ প্লাটফর্মের অ্যাপ্লিকেশন বাড়ছে। বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন পরীক্ষা করে দেখার জন্য পুরনো স্মার্টফোন কাজে লাগানো যেতে পারে। নতুন স্মার্টফোনে প্রয়োজনীয় কোনো অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করার আগে তা পুরনো স্মার্টফোনে পরীক্ষা করে দেখে নিলে নানা রকম ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলতে পারে। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় বোল্টওয়্যার বা অ্যানিমেশন ইফেক্ট সরিয়ে মোবাইলের ব্যাটারির আয়ু বাড়াতে কাস্টম রম পরীক্ষায় কাজে লাগানো যায় পুরনো স্মার্টফোন।
টিভির মিডিয়া প্লেয়ার
পুরনো স্মার্টফোনে টিভি-আউট বা এইচডিএমআই আউটপুট ফিচার থাকলে তা ফ্ল্যাশভিত্তিক মিডিয়া প্লেয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এজন্য ডিভাইসটিতে ৩২ কিংবা ৬৪ গিগাবাইট অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ সুবিধার হতে হবে। ডিভাইস স্টোরেজে থাকা মুভি ও ভিডিও হাই ডেফিনেশন লিংক (এমএইচএল) বা এইচডিএমআই কেবল দিয়ে টিভির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে বড় পর্দায় দেখা যাবে। ডিভাইসটি ডিএলএনএ বা মিরাকাস্ট নামের পিয়ার-টু-পিয়ার ওয়্যারলেস স্ক্রিনকাস্টিং সমর্থন করলে ওয়্যারলেস উপায়ে স্টোরেজে থাকা মাল্টিমিডিয়া অন্য ডিভাইসে সম্প্রচার করা যাবে।
ওয়্যারলেস সিকিউরিটি ক্যামেরা
পুরনো অব্যবহূত স্মার্টফোনকে ওয়্যারলেস সিকিউরিটি ক্যামেরা হিসেবে রূপান্তর করা যেতে পারে। অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আইওএস প্লাটফর্মে এ ধরনের অসংখ্য অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া যায়। অ্যান্ড্রয়েডের জন্য আইপি ওয়েবক্যাম, আইওএসের জন্য আইভিজিলো স্মার্টক্যাম কাজে আসতে পারে। এ অ্যাপ্লিকেশনগুলো স্মার্টফোনের ক্যামেরার সাহায্যে লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং করতে পারে, যা অন্য কোনো স্ট্রিমিং সমর্থিত পণ্যের যেকোনো ব্রাউজারে বা ভিডিও প্লেয়ারে দেখা যায়। স্ট্রিমিং অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করা থাকলে এবং ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকলে পুরনো স্মার্টফোন ডিভাইস ওয়্যারলেস সিকিউরিটি ক্যামেরার কাজ করবে।
জিপিএস নেভিগেটর
অ্যান্ড্রয়েড ফোনে গুগল ম্যাপস ও নেভিগেশন বিনা মূল্যেই পাওয়া যায়। গাড়ি চালানো কিংবা অপরিচিত কোনো স্থানে এ নেভিগেশন ব্যবহার করে সহজে পথ চিনে নেয়া যাবে। অর্থাৎ পুরনো স্মার্টফোনটি যদি অ্যান্ড্রয়েড-চালিত হয়, তবে গাড়ির জন্য আলাদা করে জিপিএস নেভিগেটর কেনার দরকার হবে না। পুরনো স্মার্টফোন গাড়িতে নেভিগেশন করার জন্য স্থায়ীভাবে রেখে দেয়া যেতে পারে। এজন্য জেনেরিক মাইক্রো ইউএসবি ১২ ভোল্ট কার চার্জার দরকার হবে, যা মোবাইল ফোনটিকে চার্জ দিতে কাজে লাগবে। কার ড্যাশবোর্ড নামে একটি অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করে নিলে এবং প্রয়োজনমতো কাস্টমাইজ করে নিলে পুরনো স্মার্টফোনকে কার নেভিগেটর হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
পিসির রিমোট কন্ট্রোলার
পুরনো স্মার্টফোনকে টিভি কিংবা এসির পাশাপাশি পিসির রিমোট কন্ট্রোলার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। পিসির কন্ট্রোলার হিসেবে ওয়্যারলেস মাউস সবচেয়ে সুবিধার হলেও, যদি দূরে সোফা বা চেয়ারে বসে কম্পিউটার চালানোর প্রয়োজন হয়, তখন পুরনো স্মার্টফোনটিকে কন্ট্রোলার হিসেবে কাজে লাগানো যেতে পারে। কম্পিউটারের ব্রাউজিং বা কোনো ভিডিও যদি বড় স্ক্রিনে দেখতে চান, তবে পুরনো স্মার্টফোন কাজে লাগানো যাবে। বিনা মূল্যের অ্যাপ্লিকেশন ‘মোবাইল মাউস লাইট’ এক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে। পুরনো স্মার্টফোন পিসির রিমোট হিসেবে ব্যবহার করতে মোবাইল ও পিসি উভয় ডিভাইসই একই ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে থাকতে হবে। সূত্র: পিসিম্যাগ