গরমে শীতল হাওয়া পেতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এসির জুড়ি নেই। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর গরমের তীব্রতা অত্যধিক হারে বেড়েছে। তাপমাত্রা ইদানীং ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে বেড়েছে এয়ার কন্ডিশনার বা এসির ব্যবহার।
বাইরের তাপমাত্রা এত বেশি যে এসিও ঠিকমতো ঠান্ডা বাতাস দিতে পারছে না। ফলে দীর্ঘক্ষণ এসি চালানোর প্রয়োজন হচ্ছে। ফলে এটির ঠাণ্ডা করার বা তাপ শোষণ করার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, ঘরও ঠাণ্ডা হচ্ছে না। ফলে সারাদিন চলতেই থাকছে এসি, এতক্ষণ সময় ধরে গরম হয়ে এসি মেসিন ঘটাচ্ছে বিস্ফোরণ।
এক্ষেত্রে আমাদের কুল্যান্ট/ফ্রেয়নের ধরন পাল্টাতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের এসিগুলোতে যে কুল্যান্ট ব্যবহার করা হয় তা বাইরে ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকলেও ঘর ঠাণ্ডা করতে পারে। ঐসব কুল্যান্টের থার্মোডাইনামিক প্রোপার্টিটাই এমন। আমাদের দেশেও ঐ ধরনের কুল্যান্ট ব্যবহার শুরু করা যেতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে আরও গবেষণা করা দরকার।
তবে ঠিক মতো এই যন্ত্রটি ব্যবহার না করলে বা এর ব্যবহারের কিছু সঠিক নিয়ম জানা না থাকলে নিরাপত্তা ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। বর্তমানে প্রায়ই এসি বিস্ফোরণে হতাহতের খবর পাওয়া যায়। তবে সতর্কতামূলক কিছু ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব।
১. এসির দুর্ঘটনা ঠেকাতে হলে আমাদের রুমের লিকেজ লস কমাতে হবে। দরজায় ডোর ক্লোজার বডি ও সিল ব্যবহার করতে হবে, জানালায় ভারী পর্দা দিতে হবে যেন সূর্যের আলো ঘরে বেশি ঢুকতে না পারে। এর সঙ্গে দরকার ভালো ব্র্যান্ডের এসি ব্যবহার করা, যেটিতে ভালো মানের বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়। একটি ভালো এসির বিয়ারিং এর দাম চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পড়বে।
২. ঘরে যদি লিকেজ থাকে তাহলে এসি অনবরত চললেও ঘর ঠাণ্ডা হবে না অথচ মাসের শেষে বিল বেশি আসবে। অনেক সময় বিয়ারিং অনবরত ঘোরার ফলে এটি গরম হয়ে গলে যায় বা ধাতব তলে ঘষা খেয়ে জ্বলে উঠে স্ফুলিঙ্গ। একই ঘটনা গাড়ির ইঞ্জিনে কুলিং সিস্টেম ফেল করলেও হতে পারে। ইঞ্জিন ব্লক অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে পিস্টন গলে আটকে গিয়েও ইঞ্জিন বসে যায়। এই স্ফুলিঙ্গ জ্বালিয়ে দেয় দাহ্য ফ্রেয়ন বা কুল্যান্টকে যা বিস্ফোরিত এসিতে আগুন ধরে গিয়ে আগুন লেগে ক্ষয় ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়।
৩. এসির দুর্ঘটনায় বিদ্যুতের লাইন আরেকটা ফ্যাক্টর। কম বা অতিরিক্ত ক্যাপাসিটির লাইন বা তার ব্যবহার করলে বেশি লোড নিতে না পেরে বেশি কারেন্ট সাপ্লাই হয়। ফলে এসি থেকে শর্ট সার্কিট হয়ে ঘটাতে পারে দুর্ঘটনা। এটিও এড়ানো দরকার।
৪. দক্ষ ও অভিজ্ঞ মেকানিক ডেকে এসি লাগান। লাইনের ক্যাপাসিটি অপর্যাপ্ত হলে দরকার হলে নতুন করে লাইন করুন। সবমিলিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই
৫. এসির ব্যবহার- এসি দুর্ঘটনা বেশ অবাক করার মতো হলেও, এসি বিস্ফোরিত হওয়া থেকে সুরক্ষিত নিজেকে রাখতে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এটি আমাদের এবং আমাদের পরিবারকে নিরাপদ রাখবে।
৬. এসি নিয়মিত সার্ভিস করান- এসি ওয়্যারিং চেক করতে কোম্পানির একজন টেকনিশিয়ানকে কল করা উচিত এবং আলগা সংযোগগুলি পরীক্ষা করানো উচিত। সম্ভাব্য সমস্যা দেখা দেয়ার আগেই চিহ্নিত করে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।
৭. এসি থেকে অতিরিক্ত শব্দ: এসি ইউনিট থেকে অস্বাভাবিক শব্দ বা গন্ধ আসন্ন বিপদের লক্ষণ। যদি এসি ইউনিট আওয়াজ করে, অত্যধিক কম্পন হয় বা পোড়া গন্ধ বের হয়, তাহলে অবিলম্বে এটি বন্ধ করে একজন টেকনিশিয়ানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
৮. এসি এয়ার ব্লোয়ার: এসি ব্লোয়ার পরিষ্কার না করলে, এসির ঠান্ডা করার ক্ষমতা কমে যায় এবং এটি অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় কারণ এটিকে ঘর ঠান্ডা করতে আরও পরিশ্রম করতে হয়। সুতরাং, ১৫ দিনে একবার এসির ফিল্টার পরিষ্কার করতে হবে।
৯. আউটডোর ইউনিট: এসির আউটডোর ইউনিটগুলোতে, ধুলো জমে কনডেন্সার কয়েলগুলোকে ব্লক করতে পারে, এতে এসির দক্ষতা হ্রাস পায় ও অতিরিক্ত গরম হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই আউটডোর ইউনিটগুলোও পরিষ্কার রাখতে হবে।
১০. এসির অবস্থান: নিশ্চিত করতে হবে যে, এসির আউটডোর ইউনিটের চারপাশের জায়গাটিতে ভাল ভাবে বায়ুচলাচল হয় কিনা। ইউনিটের চারপাশে কমপক্ষে দুই ফুট ক্লিয়ারেন্স বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। ইউনিটের কাছে গ্যাসোলিন বা পেইন্টের মতো দাহ্য পদার্থ রাখা উচিত নয়।
১১. এক্সটেনশন কর্ড: এসি ইউনিট হিসাবে আলাদা তারের প্রয়োজন। এক্সটেনশন কর্ড ব্যবহার করলে সার্কিট ওভারলোড হতে পারে এবং অতিরিক্ত গরম হতে পারে। এতে আগুন ধরার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যদি এই কিছু সতর্কতা মেনে চলা যায় তাহলে এসি থেকে আগুন ধরার মতো বিপদ হয় না।