দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের অন্যতম বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন ২০২৪-২৪ এ অংশগ্রহণ করছেন অ্যাফিলিয়েট পরিচালক প্রার্থী এডফিনিক্স লিমিটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লুতফি চৌধুরী । স্মার্ট বেসিস গড়ে তোলা ও দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ ডাটা সংগ্রহ ও আন্তর্জাতিক বাজারে আইসিটি খাতের রফতানি বাড়াতে গ্লোবাল কর্মসূচির অধীনে উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে তার। আইসিটি খাতের কর অব্যাহতি বহাল বা বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো গ্রহযোগ্য সমাধান নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে তার। বেসিস নির্বাচনে তার অংশ নেওয়ার উদ্দেশ্য আর কর্মপরিকল্পনা নিয়ে রাজধানীর বনানীর তার কার্যালয়ে টেকজুমটিভির সাথে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন ‘টিম স্মার্ট ’ প্যানেলের লুতফি চৌধুরী।
টেকজুম: আপনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন কেন?
লুতফি চৌধুরী: কান্ট্রি ব্রান্ডিং নিয়ে কাজ করতে আমার বেশি ভালো লাগে । কান্ট্রি ব্রান্ডিং হবে এবার আমার সবচেয়ে বড় কাজের জায়গায়। নিজে মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের কাজের সুবাদে বিভিন্ন দেশে কাজ করেছি সেখান থেকে দেশকে ব্রান্ডিং করা আমার ভালো লাগাতে পরিণত হয়েছে । আমি টেক ইন্ড্রাস্ট্রির একজন কর্মী হিসেবে সহকর্মীদের সমস্যা এবং সমাধানে কাজ করার ইচ্ছা আছে। বিগত কিছু বছর ধরে দেশের সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের সংগঠন বেসিসের তেমন কোন উন্নতি আমি দেখিনি। বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে সদস্যের মান উন্নয়নের তেমন গুরুত্ব পাইনি। সদস্য এবং সংগঠনের মধ্যে যেন ভালো সম্পর্ক থাকে সেই বিষয়ে নিশ্চিত করতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ।
টেকজুম: বর্তমানে দেশের সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির প্রকৃত অবস্থা কেমন?
লুতফি চৌধুরী: দেখুন আমি ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম (আইটিএস) সম্পর্কে ভালো বুঝি। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত দুই ভাগে বিভক্ত একটি সফটওয়্যার আর একটি হল আইটিএস সেক্টর । আমি সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না । তবে সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন করসহ বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তেমন আইটিএস খাত রয়েছে । দুই খাতের প্রতিবন্ধকতা গুলো বের করে সেগুলো সমাধানের রাস্তা তৈরি করতে হবে । আইটিএস নিয়ে পলিসি তৈরি করতে হবে পাশাপাশি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আলাদা করতে হবে সরকারের কাছে আমাদের আলাদা তথ্য থাকতে হবে। সামনে আমাদের জন্য অনেক কঠিন সময় আসছে। সামনে দিনে যতি কর বাস্তবায়ন করা হয় তাহল সামগ্রিকভাবে ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্থ হবে । কম্পানিগুলো মুনাফা না করতে পারলে কর্মীদের ছাঁটাই করে দেবে। এতে কর্মসংস্থান হারাতে পারে অনেকেই । আইটি খাত থেকে যদি কর সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে। আর স্থানীয় উদ্যোক্তারা আগ্রহ হারাবেন।
টেকজুম: নির্বাচনে জয়ী হলে বেসিসের কোন কোন জায়গায় পরিবর্তন আনতে চান?
লুতফি চৌধুরী: কর্মক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে আমার বেসিসের সকল সদস্যদের সাথে নিয়ে সময়, শ্রম ও মেধার সমন্বয়ে গড়ে তুলতে চাই একটি স্মার্ট বেসিস। যেই বেসিস হবে দলমত নির্বিশেষে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক অ্যাসোসিয়েশন এবং সেই সাথে এটি হবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১’ এর নিউক্লিয়াস। একটা ইন্ডাস্ট্রির উন্নয়নে এর সঠিক ব্র্যান্ডিং যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছি। স্মার্ট বাংলাদেশ স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রযুক্তি সেবা সরবরাহের মূল কেন্দ্র হবে বেসিস। তাই আমাদের দরকার হবে স্মার্ট সচিবালয়। পাশাপাশি আমরা এখন শ্রম নির্ভর অর্থনীতি থেকে মেধা নির্ভর অর্থনীতি দিকে যাচ্ছি এই সময় আমাদের দরকার সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের সঠিক নেতৃত্ব। বেসিস কে নিজের ব্যবসার কাজে ব্যবহার না করে সদস্যদের জন্য উন্মুক্ত করতে চাই।
টেকজুম: বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ে কি ধরনের কাজ করতে চান?
লুতফি চৌধুরী: দেশে এবং দেশের বাইরে আইসিটি ইন্ড্রাস্ট্রির সঠিক ব্র্যান্ডিং করতে চাই। যে সকল দেশ সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা খাতের আমাদের থেকে উন্নত না সেই সকল দেশে আমাদের বেশি ব্র্যান্ডিং করতে হবে । আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের আইসিটি পন্যের এরকম একটা ব্র্যান্ডিং করতে চাই যে, এখানে সেরা সেবাটা পাওয়া যায়। আমাদের এখন স্কিল রিসোর্স, সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা যে সকল দেশ এগিয়ে নেই সেই সকল দেশে বেশি পাঠাতে হবে । পাশাপাশি সেক্টর ধরে ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পাঠিয়ে ডেভোলপমেন্ট করতে হবে । প্রযুক্তি সবসময় সময়ের চেয়েই এগিয়ে সুতরাং সময়ের সাথে থাকতে হলে আমাদেরকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে অগ্রসর হতে হবে।
টেকজুম: নতুন বোর্ডের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো কি হবে?
লুতফি চৌধুরী: নতুন বোর্ডের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো হল নতুন নতুন বাজারে প্রবেশ করা, ট্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারকে সদস্যবান্ধব করা, স্কিলড রিসোর্সের অভাব দূর করতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া, সদস্যদের অ্যাক্সেস টু ফাইন্যান্সের সুবিধা বাড়ানো। সরকার ব্যাপকভাবে ডিজিটালাইজেশনের যে উদ্যোগ নিয়েছেন তাতে আমাদের প্রচুর সু্যোগের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বেসিসকে অন্যতম প্রধান বাস্তবায়নকারী সংস্থায় পরিণত করতে হবে। গ্লোবাল মার্কেটে বাংলাদেশি কোম্পানি গুলোর কান্ট্রি ব্রান্ডিংয়ের পাশাপাশি প্রতিটি মেম্বারদের গ্রোথে সহায়তা নিশ্চিতকরন করা ।