কাস্টমার গেট-টুগেদার মানে যেখানে অনেকগুলো কাস্টোমার একএিত হয়ে থাকে এবং তাদের মূল্যবান মতামত প্রদান করে থাকে। কোন একটি কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের পন্য সম্পর্কিত ভালো – মন্দ দুই ধরনেরই ফিডব্যাকের জন্য এই গেট-টুগেদার এর আয়োজন করা হয়। কাস্টমার মিটআপ নামেও এখন এর পরিচিতি সবার মধ্যে।
আমি দীর্ঘ ৯ বছরের ও বেশি সময় ধরে কাস্টোমারদের নিয়ে কাজ করে আসছি। প্রতিটি সময়ে আমি নতুন নতুন কাস্টোমারের সাথে পরিচিত হয়েছি এবং তাদের মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলো সম্পর্কে বুঝতে চেষ্টা করেছি। দীর্ঘদিন মার্কেটিং এন্ড সেলস এর পেশায় থাকার কারনে আমি এটা খুব ভালো করে অনুভব করেছি একটি উদ্যোগ / বিজনেসের জন্য Customer হচ্ছে একটি সিঁড়ির মতো। যদি আপনি সিঁড়িটি যত্ন নেন তাহলে খুব সাবলিলভাবে উপরে উঠে যেতে পারবেন কিন্তুু যদি অযত্নে সিঁড়িটি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে এটি ভেঙ্গে নিচে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
সহজ করে যদি বলি তাহলে Customer হচ্ছে কোন একটি বিজনেস এর Long term Investment.এই Customer কে আমরা আমাদের সার্ভিস দিয়ে যতটা সন্তুষ্ট করতে পারবো ততই এই Investment এর profit margin বাড়তেই থাকবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এত এত কাস্টোমারদের চাহিদা কিংবা একজন কাস্টোমার কি ধরনের সার্ভিস আশা করে সেটা আমরা কিভাবে বুঝবো? বিশাল সংখ্যক কাস্টোমারদের চাহিদা এবং মূল্যবান মতামত পাবার জন্য একটা কার্যকরী উপায় হচ্ছে Customer get-together / meet up করা। এখানে সব ধরনের কাস্টোমার আসবেন এবং তাদের নেগেটিভ এবং পজেটিভ মতামত প্রদান করবেন। এবং সাথে সাথে কাস্টোমার সুন্দর সুন্দর সাজেশন ও দিবেন কিভাবে একটি কোম্পানি তাদের সার্ভিস আরো ভালো করতে পারবে।
১. কোন ধরনের কাস্টোমার Get-together এর আওতাভুক্ত?
অনেক সময় আমরা যেই ভুলটা করি শুধুমাএ যারা আমাদের Existing clients / Customer তাদেরকে ইনভাইট করি এবং আপ্যায়ন করার মাধ্যমে ফিডব্যাক গুলো নিয়ে থাকি।কিন্তুু আমরা যদি একটু চিন্তা করি তাহলে ৩ ধরনের কাস্টোমার কে আমাদের এই মিটআপের আওতায় আনতে পারি।
২. ইন্টারেস্টেড কাস্টমার:
অনেক কাস্টোমার আছেন যারা আমাদের পন্য নিয়ে অনেক আগ্রহ দেখান।কিন্তুু সর্বোচ্চ আগ্রহ থাকার পরও কোন না কোন কারনে তারা পন্যটি কেনে না। এই ধরনের কাস্টোমারকে একটু যদি নার্সিং করা যায় তবে তাদেরকে Customer হিসেবে পাওয়া যায়। এক্ষেএে ছোট ছোট মিট আপ কিংবা অল্প সময়ের এবং অল্প খরচে চা- চক্রের আয়োজন করা যায় এবং তখন পন্যের সব ধরনের সুবিধা অসুবিধা এবং কেন পন্যটি কেনা দরকার সেটা ব্যাখ্যা করা যায়। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে এসব মিটআপ থেকে কাস্টোমার পেয়েছি অনেক।
৩.এক্সিস্টিং কাস্টমার:
যারা ইতিমধ্যে আমাদের কাস্টোমার হয়েছেন। এদেরকে একএিত করে আমরা তাদের মতামতের মাধ্যমে জানতে পারি কেন তিনি আমার পন্যটি ব্যবহার করছেন? আরো কি ধরনের সার্ভিস তিনি আমাদের কাছে আশা করেন? এবং নতুন কোন পলিসি কি আমরা ব্যবহার করতে পারি পন্যটিকে ইউনিক বানানের জন্য এক্ষেএে কাস্টোমার আমাদের জানাবে তিনি কোন ইউনিক বিষয়গুলো আমাদের পন্যে দেখতে চাচ্ছেন।
এসব মিট আপ গুলোতে আমরা তাদেরকে সুন্দর কিছু সময় উপহার দিতে পারি, সাথে গিফট দেয়া যায় এবং খুব আন্তরিকতার সাথে তাদেরকে অনুরোধ করা যায় যেন তারা আমাদের পন্যটিকে অন্যের কাছে রিকমেন্ড করেন।এসব কাস্টোমারদের সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো উচিত কারন আমাদের বিজনেস চলছেই এই Existing customer দের কে দিয়ে।
৪ লস্ট ক্রেতা :
কিছু কাস্টোমার আছেন যারা আমাদের রিপিটেড ক্রেতা থাকেন কিন্তুু হঠাৎ করেই কোন কারনে তাদের কে আমরা হারিয়ে ফেলি। নতুন কাস্টোমার তৈরী করাটা যতটা সহজ তার চাইতে বেশি কঠিন হারিয়ে যাওয়া কাস্টেমারদের কে ফিরিয়ে আনা। কারন কোন সার্ভিস, প্রডাক্ট কোয়ালিটি, ডেলিভারি সার্ভিস, সেলস পলিসি যদি কাস্টোমারকে তার Comfort zone এ আঘাত করে তখন সেই কাস্টোমার স্লিপ করে অন্য সেলারের কাছে চলে যায়। তাই এসব কাস্টোমারকে নতুন করে ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের নিয়ে একটা মিটআপ করা উচিত এবং কেন তিনি আপনার পন্যটি এখন আর ক্রয় করছেনা সেটা জেনে তার সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। এক্ষেএে কাস্টোমারের নেগেটিভ ফিডব্যাককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে নিতে হবে। কারন নেগেটিভ ফিডব্যাক একটা কোম্পানি বন্ধ করে দেয়ার জন্য যথেষ্টো।তাই পজেটিভ ফিডব্যাকের চাইতে নেগেটিভ ফিডব্যাককে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
৫.কাস্টমার গেট-টুগেদার/ মিটআপ একজন উদ্যোক্তার জন্য কেন দরকারী :
Customer একটা উদ্যোগ/ বিজনেসের প্রধান প্রান।আর একটা বিজনেস কাস্টোমারকে বেইস করেই সামনে এগিয়ে যায়। তাই কোন উদ্যোগ কে দীর্ঘমেয়াদি Run করার জন্য কাস্টোমারদের মতামত জানতে হবে, বুঝতে হবে। এবং এজন্য কিছু সংখ্যক কে নিয়ে একটা মিটআপ করলে একসাথে অনেকগুলো মানুষের আইডিয়া সম্পর্কে জানা যায়।
DSB grp এ রাজিব আহমেদ যখন কাস্টোমার খাতির করার জন্য মিটআপের কথা বললেন সেদিন আমি লম্বা একটা পোষ্ট দিয়েছিলাম এটা নিয়ে এবং সবাই খুব সিরিয়াসলি নিয়েছিলো স্যারের আইডিয়াকে। যে কোন new concept সবার কাছে stabilised করা একটু সময়ের ব্যপার কিন্তুু এখন মিটআপ গুলো অনেক জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছে এবং সবাই এর সুফল বুঝতে পারছে।
মিটআপ গুলোতে আমরা আসলে কি পাচ্ছি….
- মিটআপ মানেই অনেক মানুষের মেলাবন্ধন তাই বিভিন্ন পেশার কিংবা বিভিন্ন পন্যের উদ্যোক্তাদের মধ্যে পরিচয় হয়ে থাকে।
- Face to Face কথা বলার সুযোগ থাকে তাই বিক্রেতা তার পন্য সম্পর্কে পজেটিভ – নেগেটিভ মতামত জানতে পারেন।
- কাস্টোমারদের কাছ থেকে পন্য সম্পর্কে নতুন নতুন আইডিয়া / সাজেশন পাওয়া যায় এবং ভবিষ্যতে কাজে লাগানো যায়।
- কাস্টোমারদের সাথে একটা Mental Attachment তৈরী হয় এতে করে তাদেরকে লং টাইমের জন্য কাস্টোমার হিসেবে পাওয়া যায়।
- যে কোন পন্য অনলাইন এ যতটুকু বুঝানো যায় তার চাইতে অনেক ভালো বোঝা যায় সামনে থেকে তাই বিক্রেতা তার ক্রেতাকে একদম সামনে থেকে হাতে ধরে কিংবা টেষ্ট করার মাধ্যমে পন্য সম্পর্কে ভালোভাবে আইডিয়া দিতে পারে। আমি নিজে টেষ্ট করতে গিয়ে অনেক পন্যের ক্রেতা হয়েছি ভালো লাগার কারনে।
- কাস্টোমার মিটআপে একদম অল্প সময়ে Video feedback নেয়া যায়। এবং এটা পেজে কন্টেন্ট এর সাথে দিলে অন্যদের মধ্যে আগ্রহ তৈরী হয়।
- যেহেতু একটা মিটআপে অনেক উদ্যোক্তা থাকে সবাই সবার পন্য নিয়ে পরিচিতি তুলে ধরতে পারে এবং এতে করে অন্য একজনের কাছে ঐ পন্যটির চাহিদা তৈরী হয় এবং এতে করে ক্রয়- বিক্রয় এর হার বেড়ে যায়।
- অনেক ক্রেতা- বিক্রেতার একএিত হবার কারনে Personal branding অনেক শক্তিশালী হয় এবং সবার কাছে নিজেকে তুলে ধরার চমৎকার সুযোগ পাওয়া যায়।
- যিনি কাস্টোমার মিটআপ করেন এক্ষেত্রে তিনি ছাড়াও অন্য উদ্যোক্তারাও তাদের পন্য সেল করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
- সবাই সবার মতো আইডিয়া শেয়ার করেন এতে করে অন্যেরাও সেই আইডিয়াগুলো জানতে এবং কাজে লাগাতে পারেন।
- ক্রেতা কিসে সন্তুষ্ট হতে পারেন সেটা একদম সরাসরি দেখা যায় এবং ভবিষ্যতে মার্কেটিং ও সেলস পলিসি তৈরী করতে কাজে লাগে।
- এখন উদ্যোক্তাদের মিটআপ গুলো নিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টালে নিউজ হচ্ছে এতে করে ক্রেতা- বিক্রেতা সবার কথাই মানুষ জানছে এবং প্রডাক্ট সম্পর্কে ও ধারনা পাচ্ছে।
- Live এ মিটআপ গুলো দেখানোর কারনে ঐ উদ্যোক্তা এবং উদ্যোগের সাথে অনেক মানুষের Engagement বাড়ে এবং এটা অনেক বড় একটা মার্কেটিং এবং ব্রান্ডিং এর কাজ করে।
সর্বোপরি বলা যায় কাস্টোমার সার্ভিস এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে কাস্টোমার মিলনমেলা কিংবা ক্রেতা – বিক্রেতার মতামত সভা।কোন উদ্যোগ কে জনপ্রিয় করে সবার সামনে তুলে ধরার ও অন্যতম একটি মাধ্যম ও বটে।কারন ১০ জনের সাথে কথা বললে সেই ১০ জন্য মিলে আরো ১০০ জনের কাছে এই মিটআপের কথা তুলে ধরবে। তাই এটাকে বিনা খরচের মার্কেটিং ও বলা হয়ে থাকে।কাস্টোমার মিটআপ কে চেষ্টা করতে হবে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কিংবা যত মানুষের কাছে সম্ভব এই মিটআপের কথা পৌছে দেয়ার জন্য কারন এতে করে কোম্পানির ভ্যালু বাড়বে,রেপুটেশন বাড়বে,কাস্টোমার সার্কেল বড়ো হবে, প্রডাক্ট পরিচিতি বাড়বে, পার্সেনাল ব্রান্ডিং তৈরী হবে।
তবে যিনি মিটআপ করবেন তাকে অবশ্যই এক্ষেএে প্রতিটি কাস্টোমারকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করতে হবে। প্রতিটি কাস্টোমার যেন নিজেকে স্পেশাল ভাবে সেই ফিলিংসটা দিতে হবে।কারন একজন বিক্রেতার কাছে ছোট- বড় সব কাস্টোমারের সমান মর্যাদা হওয়া উচিত ।
- মিটআপে একজন সেলার যেসব দিকে অবহেলা করেন ঃ আমি এ পর্যন্ত অনেকগুলো মিটআপে জয়েন করেছি। আমার মনে হয়েছে কিছু কিছু ক্রেতা বেসিক কিছু দিকে অনেক অবহেলা করেন। সেটা হলো তারা পজেটিভ ফিডব্যাক নিয়ে থাকেন কিন্তুু নেগেটিভ ফিডব্যাক নেননা। এমনকি নেগেটিভ ফিডব্যাক নিলেও সেটার উপর গুরুত্ব দেননা। কিছু ক্রেতা একটু কম পরিচিত কাস্টোমারদের সাথে খুব বেশি আন্তরিকতা দেখাতে পারেন না।তাদের ফোকাস থাকে খুব পরিচিত কাস্টোমারদের নিয়ে। কিন্তুু এটা একটা উদ্যোগের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
- আমি কেন মিটআপে যাই ঃ আমি উপরের সবগুলো কারনে মিটআপ গুলোতে অংশ নিলেও আমার মেইন ফোকাস থাকে রাজিব স্যারের কথা শোনা। তার আইডিয়া গুলো জানতে চেষ্টা করা। সামনের ই- কমার্স নিয়ে স্যারের ভাবনাগুলো জানতে চাওয়ার একটা নেশা আমাকে সবসময়ই মিটআপে বেশি আগ্রহী করে তোলে। একজন মেন্টরের কথা সরাসরি কাছ থেকে শুনতে পারা বিশাল ব্যাপার।
আমি কাস্টোমার মিটআপ এর আদ্যপান্ত সবকিছুই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আরো অনেক কিছু এই লিখাতে এ্যাড করা যেতো কিন্তুু পোষ্ট বড় হয়ে যাওয়ার কারনে আমি আমার লিখাতে লাগাম টানতে বাধ্য হলাম। আশা করি মিটআপ সম্পর্কে কারো কোন প্রশ্ন কিংবা জানতে চাওয়ার থাকলে কমেন্ট এ প্রশ্ন করবেন এবং মতামত দেবেন
লেখক
জান্নাতুল ফেরদৌস নিপা
স্বত্বাধিকারী: জান্নাত টি ভ্যালি