হেমন্তের মাঝামাঝি কিংবা শেষ সময়ে, যখন ঘরে ঘরে নবান্নর উৎসব শুরু হতো, তখন বাড়িতে নতুন আতপ চাল তোলা হতো। আর ঠিক সে সময় থেকেই পিঠাপুলি বানানোর ধুম পরে যেতো। গ্রামবাংলার এই চিত্র খুব সাধারন কিন্তু আবেগময়। বিক্রমপুর তথা মুন্সিগঞ্জ ও এই একই চিত্র ধারন করত।
গ্রাম অঞ্চলে তখন শুরু হতো মজাদার পিঠা খাওয়ার উৎসব।অনেক পিঠার বানানোরই প্রচলন রয়েছে মুন্সিগঞ্জে তবে বিবিখানা পিঠাটি নিজের জন্য দারুন একটা জায়গা তৈরি করে নিয়েছিলো জেলার ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত পিঠা হিসেবে।এই পিঠাটি বানাতে খুব সহজ ও খেতেও দারুন।
একটি পাত্রে নতুন আতপ চালের গুঁড়া, নারিকেল কুচি,খেজুর এর গুড়,ঘন দুধ,এবং চিনিকে একসাথে মিশিয়ে একটি মিশ্রন বানানো হতো।এরপর মিশ্রন এর পাত্রটি রান্না করার জন্য মাটির চুলার ভেতরে উত্তাপ কয়লা বা বালি মাঝে বসিয়ে দেয়া হতো।ব্যস ঘন্টাখানিকের মধ্যেই তৈরি হয়ে যেত দারুন রাজকীয় স্বাদের বিবিখানা পিঠা। রান্নার পর এর দারুন ঘ্রান ছড়াতো।খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি পরে যেতো পুরো বাড়ি জুড়ে।
বিবিখানা পিঠা শুনতেও যেমন রাজকীয় তেমনি খেতেও দারুন। শোনা যায় এক সময় সাহেব আর বিবিরা খেতেন বলে এ পিঠার নাম দেওয়া হয় বিবিখানা।
তবে এই ব্যস্ত শহর এখন আর হেমন্তের শুরুতে নবান্নর উৎসব বা পিঠা খাওয়ার এমন চিত্র দেখা যায় না। আগের দিনের মতো মাটির চুলায় রান্না করা পিঠার ঘ্রাণ পাওয়া যায় না।এখন ওভেন এবং গ্যাস এর চুলায় বানানো হয় বিবিখানা পিঠা।।তবে এখনো মুন্সীগঞ্জ এর কিছু গ্রাম অঞ্চলে সেই মাটির চুলায় বানানো পোড়া বিবিখানার ঘ্রাণ এখনো ছড়ায় চার দিকে।
বর্তমান সময় এ ই-কমার্স এর কল্যাণে অনেক Ready to cook খাবার এবং পিঠার বিজনেসের সম্ভাবনা রয়েছে।সেখানে বিবিখানা পিঠাকে নিয়ে আসার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে জেলার অনেকেই জানেনা বিবিখানা পিঠা মুন্সিগঞ্জ জেলার ঐতিহ্য বহন করে এবং এ নিয়ে ই-কমার্সে সম্ভাবনা অনেক।
তবুও এই ব্যাপারে অনেকেই আশাবাদী আছেন, যারা এ পিঠা নিয়ে কাজ করছেন। আশা করি জেলার উদ্যোক্তাদের এবং সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদের হাত ধরে বিবিখানা পিঠার জেলা ব্র্যান্ডিং ভালো হবে এবং যারা Ready to cook খাবার নিয়ে কাজ করছেন,তারা এই ব্যাপারটায় নজর দিবেন।
আলিফ খান
মুন্সিগঞ্জ জেলা