কিছু ইতিহাস সাহিত্য বা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়, স্মৃতি হয়ে হৃদয়ের অন্তরালে জায়গা করে নেয় চিরকালের জন্য। তেমনি এক ঐতিহাসিক সত্যের সন্ধান দিব আজ এই লেখার মাধ্যমে, যে ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায়। এই ইতিহাস প্রেম, বীরত্ব, আর বাঙালি তেজদ্দীপ্ত নারীশক্তির সম্মিলিত এক উপাখ্যান।
বিশ্বের ইতিহাসে কালজয়ী যত যুদ্ধ বিগ্রহ আর বীরত্বের গল্পগাঁথা আমরা জেনেছি তাদের সবাই ছিলেন শক্তিশালী, সাহসী, সুঠামদেহী, সুপুরুষ। ইতিহাসের পাতায় যোদ্ধা মানেই বিচক্ষণ আর রণকৌশলে দক্ষ নেতৃত্বদানে যোগ্য সেনা। তাদের ভীড়ে বীরাঙ্গনা নারীদের ইতিহাস প্রায় খুঁজেই পাওয়া যায় না বলা যায়! অথচ সাহসী এক বাঙালি বীরাঙ্গনা’র করুণ তথা অমর এক বীরত্বের গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে আমাদের ময়মনসিংহে। এই বীরাঙ্গনা নারী যেন কোটি কোটি বাঙালি নারীর ভালোবাসা, শক্তি আর সাহসিকতার মূর্তমান প্রতীক। কোমলমতি বাঙালি নারী যেমন ভালোবাসতে জানে, প্রয়োজনে তেমনি তেজদীপ্ত সাহসিকতার সাথে অস্ত্র ধরে যুদ্ধ ময়দান কাঁপাতেও জানে।
বলছিলাম বৃহত্তর ময়মনসিংহের অগ্নীকন্যা “বীরাঙ্গনা সখিনা’র” কথা। অনেকেই হয়ত তাঁর বীরত্বগাঁথা শুনে থাকবেন। সখিনা ছিলেন অপরূপ সুন্দরী ও প্রতিভাবান এবং বহু কাজে পারদর্শী।
সতের শতকের মুঘল শাসনামলে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার কেল্লা তাজপুর নামক গ্রামে এই বীরাঙ্গনার জন্ম। তাঁর বাবা উমর খাঁ ছিলেন মুগল সাম্রাজ্যের দেওয়ান।
বাবা উমর খাঁ খুব ভালোবাসতেন মেয়েকে, আদর করে সখিনাকে তিনি “সাকি” বলে ডাকতেন। মুসলিম পরিবারের হলেও বেশ স্বাধীনচেতা জীবন ছিল সখিনার। পর্দা রক্ষা করে পারিবারিক পরিবেশে বাড়িতেই শিক্ষালাভ করেন সখিনা, শিখেন রণকৌশল। আত্মরক্ষামূলক শিক্ষালাভের পাশাপাশি ঘোড়া চালনা, আর্চারী শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন তিনি এবং সবকিছুতে এতোটাই পান্ডিত্য অর্জন করেছিলেন যে, যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক ভূমিকা নিতেও দ্বিধা করতেন না তিনি। নির্ভীকতা ,সহজাত সৌন্দর্য্য, চতুরতা এবং অসাধারণ অধ্যবসায়ের জন্যেও চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি এই বাংলার ইতিহাসে।
রূপে গুনে অনন্যা এই নারীর মুগ্ধতা কেবল কেল্লা তাজপুরেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং আশেপাশের সব অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে।
তখন বাংলায় বারো ভূঁইয়াদের রাজত্ব ছিল। সারা ভারতবর্ষ মুগল শাসনাধীন হলেও বাংলার বারো ভূঁইয়ারা স্বাধীনভাবে চলত। তখন কেল্লা তাজপুর থেকে ৫০-৬০ কিলোমিটার দূরত্বে ছিল কিশোরগঞ্জের জঙ্গলবাড়ি, যেখানের স্বাধীন শাসক ছিলেন সেই সময় ঈশা খাঁর নাতি ফিরোজ খাঁ। ফিরোজ খাঁ’র কানেও পৌঁছায় সখিনার সৌন্দর্য আর বীরত্বের কথা, আর অপরূপ সুন্দরী এই সখিনাকে একপলক দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে তাঁর অন্তর। কিন্তু দেওয়ান পরিবারের কঠোর পর্দাপ্রথা ফিরোজ খাঁ’র জন্য অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এই অমোঘ আকর্ষন যেন সব বাঁধা অতিক্রম করতে প্রস্তুত। সখিনাকে দেখার ইচ্ছে পূরণ করতে না পেরে ফিরোজ খাঁ তখন কৌশলের আশ্রয় নেয়।
দরিয়া নামক এক সুন্দরী নারীকে তসবি বিক্রেতা সাজিয়ে তিনি পাঠান অন্তঃপুরে সখিনার কাছে। দরিয়ার মুখে ফিরোজ খাঁ’র অসামান্য গুনগাঁথা শুনে তরুণী সখিনা নিজের অজান্তেই ভালবেসে ফেলেন ফিরোজ খাঁ কে। দরিয়ার মাধ্যমে দু’জনার ভাব বিনিময়েই বুঝতে পারেন তারা, এই সম্পর্ক শক্ত বন্ধনে বেঁধে ফেলার। আর তাই ফিরোজ খাঁ বিয়ের প্রস্তাব পাঠান দেওয়ান বাড়িতে সখিনার বাবা উমর খাঁ এর কাছে।
কিন্তু প্রেম ভালোবাসা মানেই তো শত বাঁধা। এই যুবক যুবতীর জন্যও এর ব্যাতিক্রম ছিল না। সখিনার বাবা উমর খাঁ ভিলেন রূপে দেখা দিলেন তাদের জীবনে, কন্যার জামাতা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারলেন না ফিরোজ খাঁ কে। প্রত্যাখ্যান করলেন বাংলার বারো ভূঁইয়ার এই স্বাধীন এক শাসনকর্তাকে! কিসের কমতি ছিল ফিরোজ খাঁ এর মাঝে! না ক্ষমতা, না সৌন্দর্য, না বীরত্ব, কোনো কিছুর বিন্দুমাত্র ঘাটতি ছিল না তাঁর মাঝে। তবে কেনো! এই কেনোর উত্তর পরে দিচ্ছি, আগে এই অপমাণের পরিণতি সম্পর্কে জেনে নেই।
প্রত্যাখ্যাত ফিরোজ খাঁ লজ্জা, ঘৃণা আর ক্ষোভে বিশাল সৈন্যদল নিয়ে অতর্কিত আক্রমণ করেন তাজ কেল্লাপুরে। উমর খাঁ’র সৈন্যদল এই আক্রমণ বেশি সময় ঠেকিয়ে রাখতে পারে নি, পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধ আর পিতার পরাজয় সখিনাকে একেবারেই বিচলিত করে নি, সে বরং নিজ ঘরে অপেক্ষা করে তাঁর পাণিপ্রার্থীর জন্য। ফিরোজ খাঁও সখিনাকে সম্মানের সাথে গ্রহন করে, ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে যায় তাদের। আর সখিনা ফিরোজ খাঁ এর সাথে পাড়ি জমায় জঙ্গলবাড়িতে।
কিন্তু উমর খাঁ তখনো এ বিয়ে মানতে পারছিলেন না কোনোভাবেই। পরাজয়ের প্রতিশোধ আর মেয়েকে ফেরৎ পাওয়ার আশায় তিনি আরও শক্তি-সামর্থ নিয়ে বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন। কন্যাকে তিনি ফিরিয়ে আনবেনই এমনটাই শপথ ছিল যেন তাঁরl আর তাই সৈন্যবাহিনী পুনঃসংঘটিত করে জঙ্গলবাড়িতে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফিরোজ খাঁ-কে বন্দী করে আনেন তিনি।
উমর খাঁ শুধু জামাতাকে বন্দী করেই ক্ষান্ত হন নি, তাকে চাপ দিতে থাকেন তাঁর মেয়েকে তালাক দেয়ার জন্য। কিন্তু ফিরোজ খাঁ তাতে সম্মত হননি।
যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরোজ খাঁর বন্দী হওয়ার ফলে যখন সৈন্যবাহিনী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও বিধ্বস্ত, তখন যুদ্ধ ময়দানে আবির্ভূত হলো সতেরো-আঠারো বছর বয়সী এক তরুণের। তার হাতের ছটায় যেন বিদ্যুৎ লাফাচ্ছে। তার নেতৃত্বে ফিরোজের বিপর্যস্ত বাহিনী নিশ্চিত পরাজয়ের হাত থেকে পুনরায় ঘুরে দাঁড়ায়। ক্ষ্যাপা নেকড়ের মতো তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রু সৈন্যর ওপর। দুর্ধর্ষ আক্রমণে উমর খাঁর বাহিনী তখন বিপন্নপ্রায়।
একের পর এক আক্রমণে বিপক্ষ শক্তি যখন বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করে তখনই ঘটে এক নিন্দনীয় ঘটনা যা এই ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। উমর খাঁর এক উজিরের কুমন্ত্রণায় গুজব রটিয়ে দিয়ে বলা হয়, যার জন্য এই যুদ্ধ সেই ফিরোজ খাঁ নাকি তার স্ত্রী সখিনাকে তালাক দিয়েছেন।
মিথ্যে তথ্য আর গুজব এই মহাবীরের মনোবলকে একদম ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। মুহূর্তেই পাল্টে যায় যুদ্ধের ভাব-গতি। আস্তে আস্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে তার নিথর দেহ!
দুর্ধর্ষ এই তরুণ সেনাপতির শিরোস্ত্রাণ ছিটকে মাটিতে পড়লে বের হয়ে আসে তার অপূর্ব সৌন্দর্যমন্ডিত চুল। এতক্ষণে সবাই বুঝতে পারে, যে সেনাপতি অভূতপূর্ব রণকৌশলে যুদ্ধ করছিল সে আসলে কোনো তরুণ নয়, একজন তরুণী। উমর খাঁ দেখতে পায় সমর যুদ্ধে ছদ্মবেশ ধরে বিপক্ষ শক্তিতে কাঁপন ধরিয়ে দেয়া এ নারী আর কেউ নয়, তারই অতি আদরের দুলালী অপরূপ সৌন্দর্য্যের অধিকারিণী বিদ্যান বীরাঙ্গনা সখিনা!
বাবা উমর খাঁ তার আদরের মেয়েকে হারিয়ে তখন শোকে পাগল প্রায়। প্রাণ প্রিয় মেয়ের প্রাণহীন দেহ কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। মেয়েই যখন নাই তখন শত্রুতা আর কার সাথে, এই ভেবেই ফিরোজ খাঁকে বন্দীশালা থেকে মুক্তি দেন উমর খাঁ। বন্দী দশা থেকে মুক্তির পর প্রিয় সখিনার বিরহে ফিরোজ খাঁও পাগলের মতো হয়ে যান।
এরপর থেকে কেল্লা তাজপুরবাসী দেখতে থাকে, প্রতি সন্ধ্যায় দরবেশধারী একজন প্রদীপ জ্বেলে সখিনার সমাধির পাশে নিশ্চুপে বসে থাকেন। সবাই এক সময় বুঝতে পারে, এই ব্যক্তি আসলে সখিনার স্বামী ফিরোজ খাঁ। প্রচন্ড শোক সহ্য করতে না পেরে একদিন তারও মৃত্যু হয়l বীরাঙ্গনা নারী সখিনার প্রাণত্যাগের স্থানেই সমাধি হয় তাঁর। স্থানটি সবার কাছে কুমড়ী নামে খ্যাত।
প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, বীর শাসক এবং সুদর্শন যুবক ফিরোজ খাঁ কে উমর খাঁ জামাতা হিসেবে মেনে নিতে পারছিলেন না কেন, আবার ফিরোজ খাঁ কি শুধু প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ক্ষোভেই আক্রমণ করেছিলেন কেল্লা তাজপুরে?
ইতিহাস বিশ্লেষকরা কিন্তু আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের এই কাহিনীর ভেতর দুই নর-নারীর প্রেম বা মানবিক আবেগের বাইরেও ভিন্ন কিছুর আভাস দেখতে পান।
দেওয়ান উমর খাঁ দিল্লির মুঘল সম্রাটের অনুগত ছিলেন। আর বারো ভূঁইয়ার সম্রাট ঈশা খাঁ ও তার নাতি ফিরোজ খাঁ বংশগত ভাবেই মোঘলদের শত্রু ছিলেন। বাংলা সবসময়ই দিল্লির শাসন থেকে পুরোপুরি না হলেও আলাদা ছিলো, দিল্লির কোনো প্রদেশ বা রাজ্য হিসেবে বাংলা অধিনস্ত ছিলো না। বাংলা স্বাধীনভাবে থাকলেও প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার মতো মাসিক বা বার্ষিক চাঁদা দিয়ে পুরো ভারতবর্ষের সাথে একত্র বা মিলেমিশে থাকতে হত। দিল্লির শাসনের অধীনস্থ হয়ে বাংলার বিভিন্ন সুবেদার বা গভর্নর তাদের প্রতি এতোটাই অনুগত ছিলেন যে, বাংলার ধন সম্পদ উপঢৌকন হিসেবে মুঘল সম্রাটদের দিয়ে দিতেই বেশি ব্যতিব্যস্ত থাকতেন তারা। ফলে বাংলার নবাব, বারোভূঁইয়া সকলের সাথে তাদের বিরূপ সম্পর্ক বিদ্যমান থাকতো। হয়ত মুঘল আর বারোভূঁইয়াদের অন্তর্নিহিত সেই সব সংঘাতেরই বলি হয়েছিল বীরাঙ্গনা সখিনা।
প্রেমের পরিণতি ট্র্যাজিক ইতিহাসে রূপান্তর হলেও, এর অভ্যন্তরে অন্যান্য শত্রুতার আভাস মিললেও সখিনা-ফিরোজ খাঁ এর প্রেম যে নিখাদ ছিল এটাও এই দু’জনই প্রমাণ করেছিলেন। ফিরোজ খাঁ পুরোপুরি বন্দি হয়েও চাপে পরে প্রিয়তমা স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে সম্মত হননি। তেমনিভাবে সখিনাও স্বামীকে মুক্ত করতে নিজে শত্রু শিবিরে হানা দেন। লড়াই করে জয়ের প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন। ঠিক এমন সময় তালাকের মিথ্যে খবরে ভেঙে পড়েন তিনি। বীরদর্পে যুদ্ধ ময়দান কাঁপানো এই বীরাঙ্গনা মুহূর্তেই সব শক্তি হারিয়ে নিথর হয়ে যান। এর মাধ্যমে একজন নারীর বীরত্বের পাশাপাশি কোমলতাও ফুটে উঠে। নারী তো এমনই! প্রয়োজনে বাহ্যিক কাঠিন্য, আর অভ্যন্তরে সেই চিরাচরিত কোমল বাঙালি নারী। পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি বাংলার বৃহত্তর ময়মনসিংহের এই অগ্নিকন্যা বীরাঙ্গনা সখিনাকে।
কেল্লা তাজপুরের অতীত বর্তমানঃ
সখিনা-ফিরোজ খাঁ’র সেই সময়টায় কেল্লা তাজপুর গ্রাম আর বর্তমানের কেল্লা তাজপুরের মাঝে বিস্তর ফারাক। হওয়ারই তো কথা! সেই ট্র্যাজিক প্রেমের গল্পটা যে কয়েকশ বছর আগের। তখনও ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের পা পরে নি।
সেই সময় এ গ্রাম উঁচু উঁচু মাটির প্রাচীরে ঘেরা ছিল। প্রায় চার মাইলব্যাপী এই প্রাচীরের মাঝে ঘোড়াদৌড় হতো বলে জানা যায়। গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে দুই মাইল বিস্তৃত সুরিয়া নদী। নদী আর যুদ্ধের পরিখার চিহ্ন এখনো বর্তমান। উঁচু মাটির টিলা এখনো রয়েছে বিভিন্ন স্থানে।
তবে সেই বীরাঙ্গনা সখিনার বাবা কেল্লা তাজপুরের দেওয়ান উমর খাঁর বাড়িটি এখন ধ্বংসাবশেষ অবস্থায় রয়েছে।
প্রায় ২০ একর জমিতে অপূর্ব কারুকাজমণ্ডিত বাড়িটি নির্মিত হয়েছিল। সেই গ্রামের মানুষ উমর খাঁর বাড়িকে রাজবাড়ি বলে থাকে। বাড়িটির পেছনেই ছিল হাতি রাখার স্থান। একে গ্রামের মানুষ পিলখানা বলে থাকে।
এখানে তাল, মজা, ছিমু রানী, হাসি, মীরা ও কটুর দীঘি নামে বেশ কয়েকটি বিশাল পুকুরও ছিল সেই সময়টায়, যার বেশিরভাগই মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এখনো কেল্লা তাজপুর গ্রামে মাটি খুঁড়লে পাওয়া যায় নানা নিদর্শন, কারুকার্যময় ইট। অনেক ইটে ফারসি অক্ষরের লেখাও নাকি দেখতে পাওয়া যায়।
বীরাঙ্গনা সখিনার সমাধিঃ
গোরীপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত মাওহা ইউনিয়নের কুমড়ী গ্রামে এই অমর নায়িকা সখিনা’র সমাধির অবস্থান।
সমাধি ঘিরে থাকা শতবর্ষীয়ান গাছগুলো দেখে যে কোনো দর্শনার্থীর মনে হবে যেন, পরম মায়ায় তারা আগলে রেখেছে বাঙালি নারীশক্তি আর ভালোবাসার প্রতিরূপ এই অগ্নিকন্যাকে। সুনসান নীরব প্রকৃতির এই গভীর মমত্ববোধেই চিরশান্তির নিদ্রায় শায়িত এই বীরাঙ্গনা।
মুঘল আমলের বহু স্মৃতি বিজড়িত এ সমাধিস্থলে যেতেই প্রথমে চোখে পরবে একটি ফটক, যেখানে লেখা “বীরাঙ্গনা সখিনার মাজার”। সমাধির সীমানাপ্রাচীরে ফটকের পাশেই পাথরখণ্ডে সংক্ষিপ্তরূপে লেখা আছে বিবি সখিনার বীরত্ব আর প্রেমের উপাখ্যান। ভেতরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে ইট-সিমেন্টে অনাড়ম্বরভাবে বাঁধানো সমাধি। সমাধিকে ঘিরে যেভাবে ডালপালা ছড়িয়ে বিস্তৃতরূপে এঁকে বেঁকে আছে কাঠগোলাপ আর বট গাছ, মনে হয় যেন বোঝাতে চায় এখানে শায়িত মানুষটার একান্ত বিশ্বস্ত প্রহরী তারা। এই গাছগুলোর সঠিক বয়স কারো জানা নেই। তবে অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করে এদের দেখে।
একটা দিনের জন্য এই বিদ্যান বীরাঙ্গনা আর প্রেমময়ী নারীর ইতিহাস আর স্মৃতির খুঁজে হারিয়ে যেতে কারো দ্বিধা হওয়ার কথা না। সেই ইতিহাস আর সমাধিস্থলের মিলনমেলায় গিয়ে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে পারি আমাদের এই বীরাঙ্গনা সখিনাকে। সখিনা বেঁচে থাকুক প্রতিটি বাঙালি নারীর মাঝে।