পাহাড়, সমুদ্র, উপত্যকা ও বন-বনানীর কারণে চট্টগ্রামের মতো বৈচিত্রময় ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশের আর কোন জেলার নেই। আর চট্টগ্রামে প্রবেশ করতেই তারই প্রমাণ মিলে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মিরসরাই উপজেলায়। প্রকৃতির অপার মহিমায় পরিপূর্ণ এই উপজেলার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে উঠে প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণপিপাসুগণ।
আকার আকৃতি ও গঠনশৈলির দিক দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণাগুলোর একটি অবস্থিত এই উপজেলায়। ৯ ধাপ বিশিষ্ট এই বিস্ময়কর ঝর্ণার নাম খৈয়াছড়া ঝর্ণা। মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নে ঝর্ণাটির অবস্থানের কারণে এই ঝর্ণার নামকরণ করা হয়েছে “খৈয়াছড়া ঝর্ণা”। এটি খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পার্শ্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। এই ঝর্ণার মোট ৯ টি মূল ধাপ এবং অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ রয়েছে। এই ধাপগুলো প্রমান করে যে এমন ঝর্ণা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আর একটিও দেখা যায়নি। আর এজন্যই ‘খৈয়াছড়া’ কে বলা হয় বাংলাদেশের ‘ঝর্ণা রাণী‘।
ধারণা করা হয় যে, প্রায় ৫০ বছর আগে পাহাড়ি ঢলের ফলে এই ঝর্ণাটি তৈরি হয়েছে, এবং এলাকাটি জনমানবহীন পাহাড়ি এলাকা এবং অধিক ঝোপ ঝাড়ের কারণে এটির অবস্থান আবিষ্কারে এত সময় লেগেছে। ২০১০ সালে সরকার বারৈয়াঢালা ব্লক থেকে বড়তাকিয়া পর্যন্ত ২৯৩৩.৬১ হেক্টর পাহাড়কে “জাতীয় উদ্যান” হিসেবে ঘোষণা করায় খৈয়াছড়া ঝর্ণা জাতীয় উদ্যানের আওতাভুক্ত হয়।
ভ্রমন নির্দেশনা-
ঢাকা হতে চট্টগ্রামের বাসযোগে মিরসরাই এর বড়তাকিয়ায় আসতে হবে শুরুতে। বাসের সুপারভাইজারকে বললেই বড়তাকিয়া বাজারে নামিয়ে দিবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে যেতে চাইলে চট্টগ্রামের মাদাবাবাড়ি বাস স্ট্যান্ড, অলংকার কিংবা এ.কে.খান থেকেও সরাসরি বড়তাকিয়া বাজারের বাস পাওয়া যায়। ঝর্ণাটির অবস্থান পাহাড়ের ভেতরের দিকে হওয়ায় সরসরি কোন যানবাহন ব্যবহার করে ঝর্ণাটির পাদদেশ পর্যন্ত পৌছানো সম্ভব হয় না। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক পাশ থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা সিএনজি ব্যবহার করে ঝর্ণাটির কাছাকাছি গ্রামে পৌছানো সম্ভব। ওখান থেকে পাহাড়ের পাদদেশের গ্রামের ভিতর দিয়ে ঝর্ণার মূল ধারা পর্যন্ত পায়ে হেঁটেই যেতে হয়। এই পায়ে হাঁটা পথের জন্য কিনে নিতে হবে বাঁশ। অবশ্য প্রয়োজনীয় বাঁশ এবং লাঠির ব্যবস্থা ওখানেই থাকে৷ এই বাঁশ ছাড়া পাহাড়ের ট্রেকিং এ হাঁটা সম্ভব না। পাহাড়ের যত ভেতরে যাবেন তত গভীর কাদা মাটি, সেইসঙ্গে ঝর্ণার পানির স্রোত। সবমিলিয়ে শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই অতিরিক্ত সাপোর্ট হিসেবে বাঁশ রাখতে হয়।
থাকা-খাওয়া
বড়তাকিয়া বাজারে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও থাকার কোন হোটেল নেই। তবে মিরসরাই বা সীতাকুণ্ডে থাকার জন্য বেশ কিছু স্থানীয় হোটেল থাকলেও ভালো মানের হোটেলের জন্য চট্টগ্রাম শহরে চলে আসাই উত্তম।
-জুলিয়া আফরোজ
সত্ত্বাধিকারী – বর্ণিল রঙ্গন