ফেসবুকে সারাদিন বিনাকারণে আমরা প্রচুর সময় নষ্ট করি। কিন্তু ফেসবুকে ব্যয় করা এ সময়টুকু ব্যয় করে ঘরে বসেই অনেক বড় ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব। ঘরে বসেই সম্ভব প্রচুর আয় করা। পুরো লেখাটি পড়ুন। আপনাকে অর্থনৈতিক স্বচ্ছল করে সাবলম্বী করতে পুরো লেখাটি একটি গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে।
ই- কমার্স
অনলাইনে কেনাকাটার সাথে বর্তমানের সবাই কমবেশি পরিচিত। এ প্রক্রিয়াটিকে ই-কমার্স বলে। ফেসবুকের পেজ খুলে ই-কমার্স বিজনেস করলে সেটিকে, এফ কমার্স বলে। টাকা খরচ করে ওয়েবসাইট তৈরির প্রয়োজন নেই এক্ষেত্রে। শুধুমাত্র ফেসবুকে একটি পেজ খুলেই ব্যবসা শুরু করা যাবে। ইতোমধ্যে দেশে অনেকেই করছেন এরকম কিছু।
বাংলাদেশে এখন পযন্ত যে কয়টি ব্যক্তিগত উদ্যোগ ভাল করছে, সেগুলোর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি যদি শেয়ার করি, তাহলে কয়েকটি নাম অবশ্যই বলতে হবে। রাজশাহীর খাটি আম, সুন্দরবনের খাটি মধু, জামদানী ভিলে, কক্সবাজার ই-শপ ইত্যাদি। দেশীয় মহিলা থেকে শুরু করে স্টডেন্টরা পযন্ত সাবলম্বী হচ্ছে এফ কমার্স এর মাধ্যমে।
ই-কমার্স বিজনেস করতে যা যা প্রস্তুতি নিতে হবে
১) ফেসবুক মার্কেটিং দক্ষতা
ফেসবুক মার্কেটিং দক্ষতা বাড়াতে যা যা জানতে হবে:
কনটেন্ট ডেভেলপ
পেজের জন্য লিড সংগ্রহ
পেইজের লিড নার্সিং
পোস্টে অ্যাংগেজমেন্ট
ফেসবুক পেইড বুস্টিং (রিমার্কেটিং টেকনিকসহ)
২) প্রোডাক্ট রিসার্চ
প্রোডাক্ট রিসার্চ এর জন্য যা যা জানতে হবে-
চাহিদাসম্পন্ন পণ্য নির্ধারণ
সময়ের চাহিদাসম্পন্ন পণ্য খুঁজে বের করা
কম্পিটিটরদেরকে অ্যানালাইস করা।
পণ্যটির উপযুক্ত সোর্সিং খুঁজে বের করা।
৩) ডেলিভারি প্রসেসিং
ডেলিভারি প্রসেসিংয়ের জন্য যা যা জানতে হবে-
সঠিক কুরিয়ার সার্ভিস খুঁজে বের করা।
সম্ভব হলে সীমিত পরিসরে নিজস্ব ডেলিভারি সিস্টেম তৈরি করা
ডেলিভারি সার্ভিস মনিটরিং
৪) কাস্টমার সাপোর্ট
কাস্টমার সাপোর্ট এর জন্য যা যা জানতে হবে-
কাস্টমার সাপোর্ট ম্যানেজমেন্ট
কাস্টমার সাপোর্ট ট্র্যাকিং
কাস্টমার রিলেশন ডেভেলপ।
ইকমার্স বিজনেসের সহযোগীতার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। এ সম্পর্কিত বাংলাতে অনেকগুলো বইও প্রকাশ পেয়েছে। সবচাইতে কার্যকরী বই : ইনকাম@ফেসবুক। এ বইটি যে কাউকে ই-কমার্স বিজনেসের জন্য পরিপূর্ণ গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে।
এ লেখাটিতে একটি সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন দিয়ে দিচ্ছি।
১ম ধাপ : (ব্যবসা সম্পর্কিত সঠিক নাম বাছাই করে ফেসবুক পেজ তৈরি)
ফেসবুকে ব্যবসা সম্পর্কিত একটি পেজ তৈরি করতে হবে। পেজের নামটি হবে ব্যবসার নাম। লং টাইম ব্যবসা করার টার্গেট করেই নামটা ঠিক করতে হবে।
২য় ধাপ : (প্রফেশনাল লোগো তৈরি)
ব্যবসা সম্পর্কিত একটি সুন্দর লোগো ডিজাইন করে নিতে হবে। প্রফেশনাল কাউকে দিয়ে লোগোটা ডিজাইন করাবেন। কারণ লোগোটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই।
৩য় ধাপ: (পেজের জন্য ব্যবসা সম্পর্কিত কভার ছবি তৈরি)
সুন্দর এবং অবশ্যই প্রফেশনাল একটি ফেসবুক কভার ডিজাইন করিয়ে নিন।
৪র্থ ধাপ : পেজে About সেকশনে ব্যবসা সম্পর্কিত তথ্য যুক্ত করা)
ফেসবুক পেজটির About পেজটিতে ব্যবসা সম্পর্কিত তথ্যগুলো ভালভাবে পূরণ করুন।
উদাহরণ- https://www.facebook.com/boibazar/ এ পেজের About পেজটি দেখতে পারেন। সেখান হতে আইডিয়া নিয়ে ভাল কিছু লিখতে পারেন।
৫ম ধাপ : (পেজে প্রাথমিকভাবে মেম্বার যুক্ত করা)
পেজটি প্রস্তুত। উপরের ৪টি ধাপের প্রস্তুতির জন্য সময় ২দিনের বেশি ব্যয় করা মোটেই উচিত হবেনা। তাহলে শুরুতেই আপনার পদক্ষেপ ভুল হবে। ৫ম ধাপটিতে, পেজের মেম্বার বাড়ানো শুরু করতে হবে। সবার প্রথমে নিজের ফ্রেন্ড লিস্টের সবাইকে, নিজের কাছের কোন বন্ধুকে অনুরোধ করে, তার ফ্রেন্ডলিস্টের সবাইকে এ পেজে যুক্ত করে নেওয়ার জন্য ইনভাইট করুন। এ পদ্ধতিতেই চেষ্টা করুন পেজে ১০০০ টা লাইক যুক্ত করার।
৬ষ্ঠ ধাপ : (পেজে অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি)
এ ধাপটিতে এসেই অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি শুরু করতে হবে। অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি শুরু করলে, পেজ মেম্বারও নিয়মিত বৃদ্ধি পাবে।
কেন অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি করতে হবে?
মার্কেটপ্লেসের বাইরে গিয়ে অনলাইনে এসব ব্যবসার ক্ষেত্রে, যে ক্রেতা, তার কাছে আপনি (ব্যবসার মালিক) একদম অপরিচিত এবং অবিশ্বস্ত। সুতরাং ক্রেতা কখনও প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার আগে আপনাকে পেমেন্ট করতে সাহস পাবে না। আবার আপনি নিজেও পেমেন্ট পাওয়ার আগে অপরিচিত একজনকে প্রোডাক্ট দিতে রিস্ক নিবেন না।
যদি ক্রেতা আপনার পরিচিত হত, তাহলে ক্রেতা আপনাকে বিশ্বাস করত, সেক্ষেত্রে প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার আগেই পেমেন্ট দিতে তার আপত্তি থাকত না। তেমনি আপনি নিজেও পেমেন্ট বাকি রেখে তাকে প্রোডাক্ট দিতে হয়ত আপত্তি করবেন না। তাহলে দেখা গেল, পরিচিত হওয়াটাই আসল। অনলাইনের মাধ্যমেই এখন মানুষের বন্ধুত্ব তৈরি হয়। আর এ বন্ধুত্ব তৈরির জন্যই অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধির চেষ্টা করতে হবে। আর অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি হলেই বিশ্বাস এবং আস্থা তৈরি হবে। তখনই ক্রেতা প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার আগেই পেমেন্ট দিতে আপত্তি করবেনা।
কিভাবে অ্যানগেজমেন্ট বৃদ্ধি করবেন?
প্রতিদিন ফেসবুক পেজটিতে ৩টি করে পোস্ট দিবেন। কি পোস্ট করবেন, সেগুলো নিয়ে আগে কিছুটা ব্রেন স্ট্রোমিং করে নিন। ব্রেন স্ট্রোমিং করার ব্যপারে কিছু পরামর্শ দিতে পারি। ধরি, আপনার ব্যবসাটি হবে দেশীয় ভেজাল মুক্ত খাবার, যেমন, ফরমালিন মুক্ত আম। তাহলে ফরমালিনের আপনার কন্টেন্ট গুলো হবে, ফরমালিনের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়, আম নিয়ে বিভিন্ন টপিকসও এখানে যুক্ত হতে পারে।
এবার তাহলে এ সম্পর্কিত অনলাইনে কি কি পোস্ট আছে সেগুলো খুঁজে বের করে আগে সব লিস্ট করে রাখুন।
লিস্ট করে রাখা সব পোস্টগুলো থেকে এবার কন্টেন্ট তৈরি করুন।
ফেসবুকের কন্টেন্ট সাইজ বেশি বড় না হওয়াটাই ভাল। ব্লগের কনটেন্ট হতে হয় বড়।
অনলাইন থেকে খুঁজে বের করা আর্টিকেলগুলো থেকে নিজের মত করে কন্টেন্ট তৈরি করুন।
কপি কন্টেন্ট না করে নিজের মত করে কন্টেন্ট উপস্থাপন করুন।
কপি কন্টেন্ট ব্যবহার করলে ব্রান্ডিংয়ে কম সফল হবেন। এমন কন্টেন্ট তৈরি করুন, যা মানুষের জন্য উপকারী হবে।
লেখক: মো. ইকরাম, কন্টেন্ট রাইটার, ডিজিটাল মার্কেটার, পরিচালক, নেক্সাস আইটি