বছর ঘুরে আবার শীত চলে এসেছে। এই শীতে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায় তা নিয়ে অনেকেই অনেক রকম ভ্রমণ পরিকল্পনা করছেন। কোথায় ভ্রমণ করবেন তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ভ্রমণ প্রস্তুতি। ভ্রমণের আগে ভালো প্রস্তুতির ওপর নির্ভর করবে ভ্রমণ কতটা আনন্দময় হবে। ভ্রমণ পূর্ববর্তী প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমণের সময় কি কি বিষয় আগে থেকে জানা দরকার তা নিয়েও ভাবতে হবে।
দেশের যে প্রান্তেই ছুটি কাটাতে যান না কেন, অনেক বিষয়ে খেয়াল না রাখলেও চলে। কিন্তু দেশের বাইরে গেলে খেয়াল রাখতে হয় বহু খুঁটিনাটি বিষয়। না হলে বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
তাই আসুন জেনে নেই, প্রথম বিদেশ ভ্রমণে যেসব বিষয় মনে রাখবেন।
সিদ্ধান্ত নিন কোথায় যাবেন
কোথায় যাবেন, তা ঠিক করে ফেলার পরেই দেখে নিন ভিসার নিয়মকানুন। কোন জায়গার ভিসার জন্য কোথা থেকে আবেদন করতে হবে, সে সব ভাল ভাবে দেখে নিন। ট্রাভেল এজেন্টের সঙ্গে না গেলে দেখতে হবে আরও একটি বিষয়। তা হলো বিমানের টিকিট সস্তায় পাওয়া যাবে কোন দিক দিয়ে গেলে। কোন সংস্থার বিমানে গেলে তুলনামূলক আরামদায়ক হবে যাত্রা, খরচও হবে কম সে বিষয়ে খোঁজ নিন।
আশপাশের দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা তেমন নেই বললেই চলে। অনেক দেশের ভিসা তো অনলাইনে নিজে নিজে আবেদন করলেই দুই-চারদিনের মধ্যে অ্যাপ্রুভাল চলে আসে।
উন্নত দেশের ভিসা প্রস্তুতি
উন্নত দেশের ভিসা প্রস্তুতির ব্যাপার রয়েছে আবেদনের আগেই। এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ভিসা বেশ সহজ হলেও আমেরিকা, কানাডা কিংবা ইউরোপের ভিসা পাওয়াটা বাংলাদেশীদের জন্য একটু কঠিনই বটে।
ঢাকায় বর্তমানে বেশকিছু পেশাদার ভিসা প্রসেসিং কোম্পানি রয়েছে। এরমধ্যে গুলশানের ‘ভিসা প্রসেসিং সেন্টার’ রয়েছে শীর্ষ অবস্থানে। প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার আইরিন আখতার এ ব্যাপারে নিজের পরামর্শ দিলেন – ‘উন্নত দেশসমূহের ভিসা পাওয়ার জন্য আপনার আগের ভ্রমণ ইতিহাস খুবই গুরুত্বপূর্ন। ভালো হয় আপনার আশপাশের কিছু দেশ ভ্রমণ করে এরপর উন্নত দেশের ভ্রমণ ভিসার জন্য আবেদন করলে। এছাড়াও একজন আবেদনকারীকে তাঁর অর্থনৈতিক সক্ষমতাও প্রমাণ করতে হয়, তাই আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নিয়মিত লেনদেন খুবই গুরুত্বপূর্ন।
আমেরিকার/ কানাডা/ শেঙ্গেন ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া অ্যাম্বেসির ওয়েবসাইটেই স্ববিস্তারে বর্ননা করা রয়েছে। ভিসা প্রসেসিং সেন্টারের ওয়েবসাইটেও এই ব্যাপারে স্টেপ বাই স্টেপ গাইডলাইন পাওয়া যাবে: https://visaprocessingcenter.com/us-visa-from-bangladesh/
সাথে রাখুন ক্রেডিট কার্ড
দেশের বাইরে কেনাকাটা কিংবা খরচ পরিশোধ করবেন কিভাবে? ক্রেডিট কার্ডেই ভরসা রাখতে হবে। বাংলাদেশের নাগরিকেরা দেশের বাইরে গিয়ে খরচে নগদের চেয়ে ইদানিং ক্রেডিট কার্ডেই বেশি ভরসা রাখছেন। এই তথ্য কিন্তু খোঁদ বাংলাদেশ ব্যাংকই জানিয়েছে। ভারতের পর ক্রেডিট কার্ড সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন যুক্তরাষ্ট্রে। এ দুই দেশে বাংলাদেশিরা মাসে খরচ করেন গড়ে দেড় শ কোটি টাকা। এই দুই দেশের পর বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের বেশি ব্যবহার করেন থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরে। আর দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করা হয় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, খুচরা দোকান ও ফার্মেসিতে। ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী দেশের ৪৩টি ব্যাংক ও ১টি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিপুল তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডে আগস্টে এ দেশের কার্ডধারীরা দেশের মধ্যে খরচ করেছেন ২ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা আর বিদেশে ৪১৮ কোটি টাকা; অর্থাৎ এ দেশের নাগরিকেরা দেশ-বিদেশ মিলিয়ে আগস্টে ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছেন ২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে বিদেশি নাগরিকেরা এ দেশে খরচ করেছেন ২১৮ কোটি টাকা।
ক্রেডিট কার্ডটি কি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করার জন্য প্রস্তুত? তা যদি না হয়, তবে সেই ব্যবস্থা করে রাখুন। বহু দেশেই নগদ টাকা অনেক জায়গায় ব্যবহার করা সহজ হয় না। তখন কার্ড ব্যবহার করা জরুরি হয়ে পড়ে।
ইউটিউবে দেখে নিন আগে ভাগে
যে দেশে যাচ্ছেন, সেখানে গাড়ি ভাড়া, খাওয়াদাওয়ার খরচ সম্পর্কে একটু গবেষণা করে নিন। আজকাল ইন্টারনেট খুললেই সব পাওয়া যায়। কত দিন থাকছেন। কোথায় কোথায় যাচ্ছেন, সব মিলে হাতখরচ কতটা লাগতে পারে আন্দাজ পাওয়া যায়। সেই হিসেবমতো বিদেশি মুদ্রা নিয়ে যান।
ভ্রমণ বিমা করতে ভুলবেন না যেন। এই জিনিসটি অনেকেই ভুলে যান। কিন্তু হঠাৎ যদি অচেনা দেশে গিয়ে আহত কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়েন, এটিই সবার আগে কাজে আসবে। ট্রাভেল ইনশিওর্যান্স ছাড়া অন্য দেশে গিয়ে চিকিৎসার খরচ বিপুল হতে পারে। যা সামলানো হবে অত্যন্ত কঠিন।