মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাত এবং ক্ষমতার প্রতিযোগিতায় জর্জরিত। এই অঞ্চলের অন্যতম দুই প্রতিপক্ষ ইসরায়েল ও ইরান। দুই দেশই নিজেদের সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করে তুলেছে এবং একে অপরকে নিয়েই সবসময় কৌশল সাজিয়ে চলে। ফলে অনেকের মনে প্রশ্ন— সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে, ইরান নাকি ইসরায়েল?
সামরিক সক্ষমতায় শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে র্যাংকিংয়ে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম।
চলুন সামরিক শক্তির দিক থেকে দুই দেশের তুলনামূলক চিত্র দেখে নিই।
সামরিক জনবল ও কাঠামো
ইরান: সক্রিয় সেনা রয়েছে প্রায় ৬ লাখের বেশি, এর সঙ্গে রয়েছে বিপুল রিজার্ভ ফোর্স এবং ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC)।
ইরানের সংখ্যা বেশি হলেও, ইসরায়েল প্রশিক্ষণ, শৃঙ্খলা এবং প্রতিক্রিয়া দক্ষতায় অনেক এগিয়ে।
বিমান ও আকাশ প্রতিরক্ষা শক্তি
ইরান: প্রায় ৫৫০টির মতো যুদ্ধবিমান থাকলেও অনেকগুলোই পুরনো মডেলের।
ইসরায়েল: অত্যাধুনিক F-35, F-16 এবং F-15 যুদ্ধবিমানসহ আধুনিক রাডার ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ারের দিক দিয়ে অনেক শক্তিশালী।
Iron Dome, David’s Sling এবং Arrow System এর মতো উন্নত এয়ার ডিফেন্স প্রযুক্তি ইসরায়েলের অন্যতম হাতিয়ার।
ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন প্রযুক্তি
ইরান: ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির দিক থেকে খুবই শক্তিশালী। তাদের কাছে রয়েছে মধ্য ও দীর্ঘ পাল্লার হাজার হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং উন্নত ড্রোন।
ইসরায়েল: ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষায় অভাবনীয় সাফল্য রয়েছে। Jericho সিরিজের ব্যালিস্টিক মিসাইলসহ রয়েছে অত্যাধুনিক ব্যালিস্টিক শিল্ড।
ইরানের আক্রমণাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির বিপরীতে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য।
নৌ ও সাবমেরিন শক্তি
ইরান: বৃহৎ নৌবাহিনী রয়েছে। প্রায় ১৯টি সাবমেরিন ও বিভিন্ন ধরনের ফ্রিগেট ও কোরভেট রয়েছে।
ইসরায়েল: নৌবাহিনী ছোট হলেও রয়েছে অত্যাধুনিক Dolphin Class সাবমেরিন, যা পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম।
সামরিক বাজেট ও প্রযুক্তি সহায়তা
ইরান: বার্ষিক সামরিক বাজেট প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইসরায়েল: বাজেট ২৪ বিলিয়ন ডলার, যার বড় একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি সহায়তা হিসেবে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রের টেক ও সামরিক সহযোগিতা ইসরায়েলকে প্রযুক্তিগতভাবে অনেক এগিয়ে রেখেছে।
সাইবার ও ইলেকট্রনিক যুদ্ধ সক্ষমতা
ইসরায়েল: বিশ্বসেরা সাইবার ইউনিট “Unit 8200” রয়েছে।
ইরান: আক্রমণাত্মক সাইবার অপারেশনে দক্ষ হলেও প্রতিরক্ষায় দুর্বলতা রয়েছে।
পারমাণবিক শক্তি
সুইডেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই)’র সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শুরুতে বিশ্বের নয়টি দেশের কাছে প্রায় ১২ হাজার ৫১২টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে।
দেশগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং ইসরায়েল।
এই তালিকায় ইরানের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র কখনোই ছিল না।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার দাবি করেছে যে ইরান তাদের ইউরেনিয়ামের মজুদ দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। ইরান দাবি করে তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
এদিকে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেনি যে কোন দেশের হাতে কতটি এ ধরনের অস্ত্র রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, পারমাণবিক অস্ত্র ক্ষমতার বিষয়টি তারা তাদের রিপোর্টে বিবেচনায় নেয়নি।
সংখ্যাগত ও পরিসরের দিক থেকে ইরান এগিয়ে থাকলেও, প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত দক্ষতায় ইসরায়েল অনেক এগিয়ে। ইরানের সামরিক শক্তি মূলত আক্রমণাত্মক, আর ইসরায়েলের শক্তি প্রতিরক্ষা, নির্ভুল টার্গেট এবং চমৎকার কমান্ড কৌশলে নিহিত।