প্রযুক্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে উন্নততর এআই সমৃদ্ধ কনজিউমার প্রডাক্ট যেমন সেলফোন, ব্যক্তিগত কম্পিউটার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, স্মার্ট স্পিকার ইত্যাদি ডিভাইসের বাজারে কঠিন প্রতিযোগিতা চলছে। তবে শিল্প খাতে এ প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে এখনো আত্মবিশ্বাসী হতে পারছেন না প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকরা।
ভারতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিডব্লিউসির ২২তম বার্ষিক বৈশ্বিক সিইও জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মাত্র ২৮ শতাংশ এআই প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে আস্থাশীল। এক্ষেত্রে ভারতীয় কোম্পানি প্রধানদের মধ্যে এ হার আরো কম, ১০ শতাংশ! খবর ইকোনমিক টাইমস।
চলতি বছরের মে-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কোম্পানির এক হাজার চিফ এক্সপেরিয়েন্স অফিসার (সিএক্সও) এবং ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্বে থাকা নির্বাহীর মতামতের ভিত্তিতে এ গবেষণা পরিচালনা করে পিডব্লিউসি। বিশেষ করে ভারতে এআই প্রযুক্তি ব্যবহারের সমস্যা ও সম্ভাবনা বুঝতেই এ জরিপ করা হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে এআই প্রযুক্তি খাতে আরো ব্যাপক বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। এ প্রযুক্তিকে দায়িত্বশীলতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে নৈতিকভাবে ব্যবহারের যোগ্য করে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, যাতে সেবাগ্রহীতাদের যথেষ্ট আস্থা অর্জন করা সম্ভব হয়। যেখানে এআই বলতে বোঝায় এমন একটি সমন্বিত প্রযুক্তি, যা অনুভব করতে পারে, মানুষের মতো চিন্তাশক্তিও রয়েছে। ফলে নিজেই সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতাও রাখে।
পিডব্লিউসির গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন প্রযুক্তি, গণমাধ্যম, টেলিকম, আর্থিক ও সেবা প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী, স্বাস্থ্য, শিল্পপণ্য, কনজিউমার মার্কেট, সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ইউটিলিটিসহ নানা খাতের কর্মকর্তারা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আশ্চর্যজনকভাবে ভারতসহ সারা বিশ্বের অধিকাংশ নীতিনির্ধারক স্বীকার করেছেন, এআই প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্যতা যাচাইয়ের মতো কোনো কৌশল, পদ্ধতি বা টুল তাদের নেই। ভারতের মাত্র ১০ শতাংশ নির্বাহী কর্মকর্তা এআই ব্যবহারের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। যেখানে বৈশ্বিক হার ১৮ শতাংশ।
তবে আশার কথা হচ্ছে, ভারতের ৬৯ শতাংশ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, বিশ্বে সার্বিক তত্পরতায় এআই ব্যাপক পরিবর্তন আনবে, এটি ইন্টারনেট বিপ্লবের চেয়েও বড় ঘটনা হবে। যেখানে বিশ্বব্যাপী ৪২ শতাংশ সিইও আশা করেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ব্যবসা খাতে ব্যাপকভিত্তিক পরিবর্তন আনবে এআই। ভারতে এমন মতের সিইওর হার ৮৬ শতাংশ।
এছাড়া ভারতের অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন কোম্পানির ভিত্তি আরো শক্ত করতে নিজস্ব বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ কেন্দ্র স্থাপন করছে। ৫০ শতাংশ সিইও আগামী তিন বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করার পরিকল্পনা করছেন।
ভারতকে ব্যাপক সম্ভাবনাময় এআই প্রযুক্তির সম্ভাব্য বৃহৎ বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেক্ষেত্রে এ দেশের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের এ প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পিডব্লিউসি ইন্ডিয়ার উপদেষ্টা কমিটির প্রধান দিপঙ্কর সান্বালকা বলেন, এটা খুব আশার কথা যে ভারতীয় কোম্পানি প্রধানরা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করতে চান।
তবে সেই সঙ্গে আশঙ্কার কথা হলো, এআই প্রযুক্তির ঝুঁকি নির্ধারণের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া জানা নেই ৫৩ শতাংশ ভারতীয় সিইওর। যেখানে এর বৈশ্বিক হার ৩৬ শতাংশ। পিডব্লিউসির উপাত্ত ও বিশ্লেষণ প্রধান সুদীপ্ত ঘোষ বলেন, এখানে এআই প্রযুক্তির ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত ফল না-ও দিতে পারে।
তিনি বলেন, এআইকে নির্ভরযোগ্য করতে হলে এর সঙ্গে দরকার পক্ষপাতিত্ব এবং ন্যায্যতা নির্ধারণের শক্তিশালী প্রক্রিয়া, ফলাফলের মর্মোদ্ধার ও ব্যাখ্যা করার সামর্থ্য এবং সহজবোধ্যতা ও নিরাপত্তা। তা না হলে এআই নিয়ে এ হইচই, উচ্ছ্বাস বিপর্যয়ে পর্যবসিত হবে।