বর্তমানে বাংলাদেশে আইটেল (itel) কোম্পানি তাদের মোবাইল ফোনগুলো নিয়ে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশেষ করে জাভা মোবাইল বা বাটন মোবাইল গুলোতে এতো কম সময়ে এত বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে যা বলার মতো নয়। বাংলাদেশে বাটন মোবাইল গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিক্রিত মোবাইল কোম্পানি হলো আইটেল। তবে ইতিমধ্যে তারা শুধু বাটন ফোন নয় তারা এন্ড্রয়েড মোবাইলও বের করে ফেলেছে এবং তাদের জনপ্রিয়তা শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় আছে। যদিও এটি হংকং এর একটি মোবাইল কোম্পানি, তবে বাংলাদেশেও এদের মোবাইল ফ্যাক্টরি বয়েছে। আর আপনারা জেনে খুবই আনন্দিত হবেন যে, এই আইটেল ভিশন ১ টাও বাংলাদেশে তৈরী। যদিও এদের কাচামাল আসে চায়না থেকে। তো আজকে আমরা এই আইটেল ভিশন ১ নিয়েই আলোচনা করব।
বর্তমানে বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় মোবাইলগুলোর মধ্যে একটা হলো আইটেল ভিশন ১। অনেকে এটিকে গরিবের আইফোন হিসেবেও বলে থাকে। কারণ হলো এই ফোনটির রেয়ার ক্যামেরাটা একদম আইফোন ১১ এর মত দেখতে। ফোনটি এই বছরের মার্চ মাসে বাংলাদেশে রিলিজ করা হয়।
প্রথমেই মোবাইলের কিছু ফিচার গুলো জেনে নেয়া যাক,
• মোবাইলটিতে রয়েছে ৬ ইঞ্চি ওয়াটারড্রপ নচ ডিসপ্লে।
• ক্যামেরা রয়েছে ৮ এবং ৫ মেগাপিক্সেলের ডুয়েল ক্যামেরা।
• ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে এন্ডোয়েড ৯ (পাই)।
• ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ফেসলক তো থাকছেই।
• আর রয়েছে ৪ হাজার এমএএইচ নন রিমোভেবল ব্যাটারি।
যেটা আপনাকে খুব ভালো মানের ব্যাকআপ দিবে। আর ফোনটির দাম মাত্র ৬৯৯০ টাকা। আসলে আরো অনেকগুলো ফিচার রয়েছে যেগুলো নিয়ে এখন বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ফোনটির ডিজাইন
ফোনটির ডিজাইন একেবারে অসাধারণ। এর সামনে রয়েছে নচ ডিসপ্লে এবং একদম উপরে মাঝখানে রয়েছে ছোট্ট একটি ক্যামেরা। যেটা ডিসপ্লে টাকে অনেক সুন্দর করে তুলেছে এবং পেছনের সাইডের রয়েছে আইফোন ইলেভেন এর মত তিনটে ক্যামেরা স্লট। এখানে ২ টি ক্যামেরা এবং একটি ফ্ল্যাশ রয়েছে। তার ঠিক নিচেই রয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর।
ডিসপ্লে
ফোনটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ছয় ইঞ্চি নচ ডিসপ্লে। ডিসপ্লেটি 720p 30fps এর। অর্থাৎ এইচডি ডিসপ্লে এবং এটি ওয়াটারড্রপ ডিসপ্লে।
স্টোরেজ
ফোনটিতে রয়েছে ২ জিবি র্যাম এবং ৩২ জিবি রম। ২/৩২ আপনাকে খুবই সুন্দর একটা পারফরম্যান্স দিবে।
ক্যামেরা
ফোনটির পেছনে রয়েছে ৮ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা এবং তার সাথে রয়েছে ০.৩ মেগাপিক্সেল এর ছোট্ট আরেকটা ক্যামেরা। সামনে রয়েছে ৫ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা। পিছনের ক্যামেরার ডিজাইনটি আইফোন ১১ এর মতো করে করা হয়েছে।
ব্যাটারি
এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ৪ হাজার এমএএইচ এর নন-রিমোভাবেল ব্যাটারি। ফোনটিতে চার্জ হতে প্রায় ৩-৪ ঘন্টা সময় লাগে। এখানে টাইপ-সি ব্যবহার করা হয়নি।
প্রসেসর
ফোনটিতে ব্যবহৃত হয়েছে Octa Core (4×1.6 GHz Cortex-A55 CPU and 4×1.2 GHz Cortex-A55) প্রসেসর। যেটা আসলে এই ফোনটির সাথে খাপে খাপ। আর চিপসেট রয়েছে Spreadtrum UniSoC SC9863A।
ফোনের সেন্সর সমূহ,
ফোনটিতে রয়েছে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, ফেসলক, মাল্টি টাচ সিস্টেম। এর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি অনেক ফাস্ট এবং তুলনামূলক অনেক ভালো প্রাইস অনুযায়ী। তাছাড়াও ফেস লক সিস্টেমটাও খারাপ না।
এবার আসি নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে,
আমি নিজেও আইটেল ভিশন ১ ইউজার। আমি আসলে মোবাইল নিয়ে খুবই সচেতন মানুষ। আমি অনেক খোঁজাখুঁজির পরে, অনেক রিভিউ দেখার পর এই ফোনটি কিনেছি। ফোনটি প্রায় ১৫ দিনের বেশি ব্যবহার করছি। এখনও কোনো সমস্যা পাই নাই। তবে অনেকেই ভাবতে পারেন যে এ ব্যাটারি কেমন ব্যাকআপ দিবে? আসলে আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আমি আসলে হ্যাব্বি ইউজার। দিনে প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা ফ্রী ফায়ার খেলি এবং এক থেকে দুই ঘন্টা ক্লাশ অফ ক্লান খেলি তারপরও আমার ১০০% থেকে ১০% এ আসতে ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা লেগে যায়। অর্থাৎ আমি পুরোপুরি সারাদিন ব্যবহার করি এবং রাতে চার্জে দিই। তাহলে বুঝতেই পারছেন যে এটার ব্যাটারি ব্যাকআপ কেমন। তবে ফোনটিতে চার্জ হতে একটু বেশি সময় নেয়। এখানে আপনার ১০% বা ২০% থেকে ১০০% হতে সময় লাগে তিন থেকে চার ঘণ্টা। যদিও সময়টা একটু বেশি তবে আপনার ব্যাটারি যতটা সুন্দর ব্যাকআপ দেয় সে অনুযায়ী ঠিকই আছে। আসলে এই বাজেটে একসাথে এত কিছু সহজে পাওয়া যায় না। সেটা আসলেই ভাবার মতো। আর হ্যাঁ ফোনটির গেমিং এক্সপেরিয়েন্স বলতে, আমি ফোনটিতে ফ্রী ফায়ার এবং ক্লাশ অফ ক্লান খেলি। এর আগেই বলেছি যে আমি তিন-চার ঘণ্টা গেম খেলি। আমি গেম খেলার সময় কোন প্রকার লেগ পাইনি এখনও। অন্যান্য ভালো বাজেটের ফোন থেকেও এতো কিছু পাওয়া যায় না। তবে এই ফোনটিতে আপনার পছন্দের প্রায় সবকিছুই পাচ্ছেন। আসলে এই বাজেটের ফোনের সাথে এত কিছু পাওয়া, আপনি নিজেই একবার চিন্তা করে দেখবেন। এত কম দামের ফোনে এতকিছু এত সুন্দর চিপসেট, র্যাম রম এর কম্বিনেশন, সুন্দর ক্যামেরা, ব্যাটারি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ফেসলক এত কিছু একসাথে দেওয়া হয়েছে। তো সম্পূর্ণ নিজের ভাষায় বলতে গেলে আমার দেখা সেরা বাজেট সেরা ফোন।
আমার কিছু মন্তব্য,
১. ফোনটিতে এন্ডয়েড ১০ ব্যবহার করলে ভালো হতো।
২. টাইপ-সি চার্জির ব্যবহার করা যেতে পারতো।
এই দুইটা বাদে ফোনটি আমার কাছে একদম সেরা লেগেছে।