সূর্যমুখীকে ফুল হিসেবে আমরা প্রত্যেকে পছন্দ করি। এই ফুল যে উপকারী ফুলেদের একটি। সৌন্দর্যের মতো এর গুণাগুণও উল্লেখযোগ্য একটি বিষয়। সূর্যমুখী ফুল হলুদ পাপড়ির জন্য যেমন সমাদৃত তেমনি এই ফুল থেকে তৈরিকৃত তেল পুষ্টিগুণ সম্পন্ন।
ফেনী জেলায় প্রথমবারের মত সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করা হয়েছে চলতি বছর।হলুদ রঙের এই অপরূপ ফুলটি দেখতে সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, তাই ফুলকে সূর্যমুখী বলে।রবি মৌসুমে জেলার ৬টি উপজেলায় সরকারি অর্থায়নে ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে।ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে ডাল তেল প্রকল্পের আওতায় ফেনীর ৬টি উপজেলায় ৫০টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে।
রাজস্ব অর্থায়নে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় জেলার ৬টি উপজেলায় ৫০টি প্লটের ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে।ভোজ্য তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা ও সূর্যমুখী চাষের উপর গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এ কর্মসূচিতে দেশে তেলের চাহিদা পূরণ করতে সূর্যমুখী আবাদে কৃষকদেরকে উৎসাহ ও প্রণোদনা দিচ্ছে।এ কর্মসূচির আওতায় ফেনীতে ১০ হেক্টর নির্বাচিত জমিতে ৫০টি প্রদর্শনীতে ৩ লাখ ৮৪ হাজার টাকা কৃষকদের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
ফেনী সদরের ২ হেক্টর জমিতে ১২টি প্রদর্শনীর জন্য সরকার ৯০ হাজার ২৫৬ টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। এসব প্রণোদনার অর্থ দিয়ে কৃষকদের মাঝে উন্নত মানের বীজ, সার ও নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় ফেনী সদরে ২ হেক্টর জমিতে ১২টি, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ১ হেক্টর জমিতে ৭টি, ফুলগাজীতে ২ হেক্টর জমিতে ৫টি, পরশুরামে ১ হেক্টর জমিতে ৬টি, দাগনভূঞায় ১ হেক্টর জমিতে ৮টি ও সোনাগাজীতে ৩ হেক্টর জমিতে ১২টি প্রদর্শনী করা হয়েছে।
বিগত বছর গুলোতে কৃষকরা জমিতে রবি মৌসূমে তেমন কোন ফসল করতেন না। কিছু কিছু জমিতে খাল-বিল থেকে পানি দিয়ে সেচের মাধ্যমে শাক-সবজি, ডাল, আলু জাতীয় ফসল চাষ করতেন। রবি মৌসূমে বাকী জমি থাকত পতিত। এবার পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করছেন তারা।সূর্যমুখীর চারা রোপণের ১১৫ দিনের মধ্যে ফসল পাওয়া যায়। সূর্যমুখী ফুলের দানা থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদন করা হয়।সূর্যমুখী থেকে তৈরি তেল পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ।
বিশ্বেজুড়েই সূর্যমুখী তেলের চাহিদা এখন ব্যাপক। আমাদের দেশেও ক্রমশ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে।সূর্যমুখীর তেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই কম এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। এই তেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।সূর্যমুখী ফুলের বীজ সংগ্রহ করার পর গাছগুলো জমিতে পঁচিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে জমির জৈবসারের ঘাটতি পূরণ হয়। অনেক কৃষক পরিবার তার দৈনন্দিন জীবনে রান্নার কাজের জ্বালানি হিসেবে সূর্যমুখীর খড়ি ব্যবহার করে থাকে। এতে করে জ্বালানি কাঠের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাচ্ছে।