সম্প্রতি সার্কুলার জারি করে বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য কো-ব্র্যান্ডেড কার্ডে ডিজিটাল মার্কেটিং লেনদেনের অনুমতি প্রদান করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিজিটাল মার্কেটিং খাতের বিকাশে বেসিসের যৌক্তিক প্রস্তাবনা বিচার-বিবেচনার পর এই অনুমতি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আগে কো-ব্র্যান্ডেড কার্ড দিয়ে আইটি এবং আইটি সেবা/পণ্য ক্রয় করা গেলেও, ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল মার্কেটিং খাতের জন্যও এই কার্ড ব্যবহারের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। জারিকৃত নতুন সার্কুলারের মাধ্যমে কো-ব্র্র্যান্ডেড কার্ড দিয়ে ফেসবুক, গুগলসহ সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে অর্থ পরিশোধ করতে পারবে বেসিস সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহ।
এ বিষয়ে গত বছরের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামালের সাথে এবং নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির ও জেনারেল ম্যানেজার খুরশিদ ওয়াহাবের সাথে দুটি পৃথক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠিত সভায় ১১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের হেড অব কার্ডস ও হেড অব রিটেইল ব্যাংকিংসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বেসিসের পক্ষে উভয় সভায় বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীরের নেতৃত্বে সহ-সভাপতি শোয়েব আহমেদ মাসুদ ও বেসিসের ডিজিটাল কমার্স স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল উপস্থিত ছিলেন।
ডিজিটাল মার্কেটিং খাতভিত্তিক পেমেন্টের ক্ষেত্রে উক্ত বৈঠকে বলা হয়, ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল শিল্পের সাথে জড়িত আছে বড়-ছোট প্রায় ১০০০ এর মতো এজেন্সি। এছাড়া এই শিল্পের সাথে জড়িত আছে অসংখ্য ফ্রিল্যান্সার, প্রোডাকশন হাউজ, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ছাড়াও আরো অনেকে। এই শিল্পে কর্মরত আছে আনুমানিক ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০ এর মতো জনবল, যারা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিনিয়ত তৈরি করে যাচ্ছে অসংখ্য ডিজিটাল কন্টেন্ট এবং প্রদান করছে ডিজিটাল মিডিয়ার বিভিন্ন সার্ভিস (বিজ্ঞাপন বিতরণ, ক্রয়, বিজ্ঞাপনের প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম, দেশীয় কনটেন্ট প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি)।
প্রতি বছর ২০০০ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে ফেসবুক এবং গুগলসহ অন্যান্য বিদেশি অনলাইন বিজ্ঞাপনী চ্যানেলে পরিশোধ করা হচ্ছে। এই অর্থের একটা বড় অংশ পরিশোধ করা হয় বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ড দ্বারা। এই সমস্ত কার্ডে ট্রাভেল কোটায় বছরে ১২,০০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত খরচের সুবিধা থাকে। বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, ছোট এজেন্সি, ই-কমার্স ও এফ-কমার্স মডেলের অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা ব্যবহার করেই গুগল এবং ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের মূল্য পরিশোধ করে থাকে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে কো-ব্র্যান্ডেড কার্ডের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের পেমেন্ট প্রদান করার সুবিধা চাওয়া হয়। বেসিসের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি সার্কুলার জারি করে কো-ব্র্যান্ডেড কার্ডের প্রস্তাবনা গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বার্ষিক ব্যয়সীমা ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ মার্কিন ডলার করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বেসিসের প্রস্তাবনা গ্রহণ করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা স্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে শক্তিশালী করার কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আনন্দিত বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের যাত্রায় আমাদের সহায়তা করেছেন। ক্রমবর্ধমান এই খাতের প্রসারের বেসিস সদস্যদের জন্য নেওয়া সিদ্ধান্ত সুদূরপ্রসারী সুফল বয়ে আনবে।