স্মার্টফোন বিক্রিতে দীর্ঘদিন ধরেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী অবস্থান ধরে রেখেছে স্যামসাং। বলা যায়, ২০১২ সাল থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে গেছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েকটি প্রান্তিকে শাওমি, ভিভো ও অপোর মতো চীনা কোম্পানি বেশ কয়েকটি বাজারে স্যামসাংকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। এজন্য আর কতদিন স্মার্টফোন বাজারে স্যামসাং একক আধিপত্য ধরে রাখতে পারবে সে ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়, সম্প্রতি বেশকিছু দিক থেকে বড়সড় প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে স্যামসাং। তার মধ্যে স্যামসাংয়ের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী চীনভিত্তিক স্মার্টফোন জায়ান্ট, যেমন শাওমি, অপো ও ভিভো। সম্প্রতি শাওমি স্যামসাংয়ের খুব বেশি কাছাকাছি চলে এসেছে। এমনকি ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে স্যামসাংকে হটিয়ে সেরা স্মার্টফোন বিক্রেতা হিসেবে বিশ্বব্যাপী জায়গাও করে নিয়েছে তারা। যদিও অগ্রগতিটা বেশ বৃহত্তর, কিন্তু এর মানেই সেটা স্মার্টফোন বাজারে রাতারাতি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয় না।
বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী সেরা বার্ষিক প্রতিষ্ঠানের একটি স্যামসাং। কিন্তু চলতি বছরের সব প্রান্তিকে তাদের শীর্ষে দেখা যায়নি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিক থেকে শুরু করে ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত ২৬ প্রান্তিকের মধ্যে পাঁচ প্রান্তিকে শীর্ষস্থান হারিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্মার্টফোন জায়ান্টটি।
সাধারণভাবে চতুর্থ কোয়ার্টারে আইফোনের নতুন মডেল বাজারে আসার পর পরই স্যামসাংকে অ্যাপলের কাছে তার শীর্ষ জায়গা হারিয়ে ফেলতে দেখা যায়। ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অনারকে নিয়ে হুয়াওয়ে স্যামসাংয়ের থেকে বেশি স্মার্টফোন বিক্রি করেছে। আইফোন ১৩-এর ওপর ভর করে চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে আয়ের দিক থেকে স্যামসাংকে ছাড়িয়ে যেতে পারে অ্যাপল।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ বলছে, বেশ কয়েকটি অঞ্চলে এরই মধ্যে স্যামসাংকে হটিয়ে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে শাওমির মতো চীনা কোম্পানি। ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এশিয়া ও ইউরোপে সর্বোচ্চ স্মার্টফোন বিক্রি করেছে শাওমি। এশিয়ায় এর আগেও বেশ কয়েকবার সর্বাধিক বিক্রির রেকর্ড গড়লেও ইউরোপে এটি ছিল প্রথম।
চীনের আরেকটি বড় স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ের পতনের সঙ্গে শাওমির বেড়ে ওঠার একটা সম্পর্ক দেখা যায়। অপো ও ওয়ানপ্লাসের সঙ্গে মিলে শাওমি হুয়াওয়ের সাশ্রয়ী বাজার, বিশেষ করে ইউরোপের একটি বড় অংশ নিয়ে নেয়। দাম-সচেতন বেশকিছু বাজার, যেমন রাশিয়ার মতো দেশে নেতৃত্ব দিতে শুরু করে শাওমি। উইম্বলডন ও ইউরো ২০২০-এর মতো ক্রীড়া ইভেন্ট স্পন্সর করে ইউরোপে নিজেদের বাজার তৈরি করেছে অপো।
তবে স্মার্টফোন বিক্রির সংখ্যায় চীনা কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষে শাওমি। তাদের উত্থানও একদিনে হয়নি। ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শাওমির শীর্ষে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, সে সময়ে কভিড-১৯-এর কারণে ভিয়েতনামে স্যামসাংয়ের সবচেয়ে বড় কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এতে ঠিকমতো স্মার্টফোন সরবরাহে ব্যর্থ হয় স্যামসাং। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে ফের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করে স্যামসাং। ফোল্ডেবল ফোন, সাশ্রয়ী ফোনসহ বিভিন্ন মডেলের ফিচার ফোন নিয়ে নিজেদের বাজার বিস্তৃত করেছে স্যামসাং। চতুর্থ প্রান্তিকে হয়তো অ্যাপল ও শাওমি বড় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে, তবে বার্ষিক বিক্রিতে আগামী কয়েক বছর শীর্ষস্থান অক্ষুণ্ন রাখতে পারে স্যামসাং। অ্যাপল না পারলেও স্যামসাংকে যেগুলো হুয়াওয়ের মতো চ্যালেঞ্জ ছুড়তে পারে, সেগুলো হতে পারে শাওমি, ভিভো ও অপোর মতো চীনা স্মার্টফোন কোম্পানি।