নিম্নমানের ফোনে সয়লাব রাজধানীর মোবাইল মার্কেটগুলো। কম দামি ফোনের পাশাপাশি নামিদামি ব্র্যান্ডের ফোনগুলোতেও দেখা গেছে নানা সমস্যা। এসব সমস্যার কারণে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছে গ্রাহকরা। সম্প্রতি ভিভো ফোন কিনে বিপাকে পড়েছেন এক গ্রাহক। কোনো সুরাহা না পেয়ে বাধ্য হয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে অভিযোগ করেছেন মো. শেখ ফরিদ নামের এক ব্যক্তি।
মো. শেখ ফরিদ একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ধানমন্ডির গ্রিন অক্ষয় প্লাজার বন্ধু টেলিকম থেকে ১১ হাজার ৯৯০ টাকায় ভিভোর (১৫নং) মডেলের একটি মোবাইল ফোন কেনেন। কিন্তু ফোন কেনার পরই থেকেই নানা সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিকার না পেয়ে তিনি রোববার কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, আমি গত ১০ ফেব্রুয়ারি একটি ভিভো মোবাইল ফোন কিনি। কেনার পরদিন থেকে মোবাইল ফোনটি অনেক গরম ও হ্যাং হয়ে যায়। ফোনে কল এলে নাম্বার দেখা যায় না। পরেরদিন আমি তাদের দোকানে যাই। তারা আমাকে বলেন, মোবাইলে ভাইরাস ঢুকেছে এবং তারা কয়েকটি সফটওয়্যার অ্যাকটিভ করে দিয়ে বলেন আর সমস্যা হবে না। বাসায় ফিরে আবারও একই সমস্যা দেখতে পাই। তাদের জানালে তারা আমাকে কাস্টমার কেয়ারে যেতে বলেন। আমি ফোনটি কিনে হয়রানির শিকার হচ্ছি। অতএব বিষয়টি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে ফরিদ বলেন, এত টাকা দিয়ে নতুন ফোন কিনে কেন আমি কাস্টমার কেয়ারে, দোকানে, এখানে-সেখানে ঘোরাঘুরি করব। ভিভো একটি নামকরা ব্র্যান্ড, তাদের পণ্য এত নিম্নমানের কেন হবে যে এক সপ্তাহ ব্যবহার করা যাবে না। তা হলে আমরা কিসের ওপর আস্থা রাখব। শুধু শেখ ফরিদই নন, আরও অনেকেই করেছেন একই অভিযোগ।
গতকাল সরেজমিন রাজধানীর মোতালেব প্লাজা ও বসুন্ধরা সিটিসহ বেশ কয়েকটি মোবাইল মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, তেমন কোনো বেচাবিক্রি নেই। বসুন্ধরা সিটিতে ভিভোর কয়েকটি শোরুমে মোবাইল ফোন দেখছেন ক্রেতারা। এদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন ভিভোর ফোন ভালো তবে একটাই সমস্যা এটা বেশি হ্যাং করে। কয়েকদিন পরপর কাস্টমার কেয়ারে নিতে হয়।
বসুন্ধারা সিটির লেভেল-৬ এ কাস্টমার কেয়ারে দেখা যায়, অনেকেই এসেছেন সমস্যা নিয়ে। এর মধ্যে একজন এসেছেন মোবাইলের ভেঙে যাওয়া ডিসপ্লে লাগাতে। তিনি দায়িত্বরত মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে দর কষাকষি করছিলেন।
তিনি বলেন, বাইরে এই ডিসপ্লের দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা আর এখানে চাচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ টাকা। কষ্ট হলেও লাগাতে হবে কারণ এখানে নাকি অরিজিনালটা পাওয়া যায়। তবে দামের ব্যবধানটা অনেক বেশি।
মোবাইল ইঞ্জিনিয়ার সদরুল হুদা বলেন, আমাদের এখানে (কাস্টমার কেয়ারে) গড়ে প্রতিদিন ২৫টি সমস্যার সমাধান করা হয়। বেশি সমস্যা হয় গরমে। ডিসপ্লে ভাঙাসহ নানা সমস্যা নিয়ে আসে। এ সময় চাপ বেশি থাকে। সে ক্ষেত্রে পার্টস থাকলে সঙ্গে সঙ্গে সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করি আর না হয় কিছুদিন সময় নিয়ে থাকি।
বহুজাতিক স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিভো ২০১৭ সালে ভি-সিরিজের ভি সেভেন প্লাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। এরপর ২০১৯ সালে ভিভো বাংলাদেশে একটি কারখানা চালু করে যেখানে বৈশ্বিক ও স্থানীয় চাহিদার সমন্বয় করে স্মার্টফোন উৎপাদন করা হচ্ছে। বর্তমানে ভিভোর ভি, ওয়াই ও এক্স এই তিন সিরিজের বেশ কিছু জনপ্রিয় মোবাইল ফোন মার্কেটে রয়েছে।