ছবির এরা সবাই পুলিশ সদস্য। এভাবেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার সাথে করোনাও মোকাবিলা করছেন আজ এরা। জানি এরচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন ডাক্তার, নার্স, সংবাদকর্মীসহ আরও বেশ কিছু সেবা সংস্থা।
কেউবা করোনায় আক্রান্ত রোগীর সরাসরি চিকিৎসা করছেন, কেউবা করোনা রোগীর কাছে যেয়ে তালিকা তৈরি করছেন, কেউবা বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছেন, আবার কেউবা করোনায় আক্রান্তের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থাসহ আইসোলেশনে বাধ্য করছেন। কেউবা নিজের আত্মীয় না হয়েও অন্যের মরদেহ নিয়ে সৎকারের ব্যবস্থা করছেন।
সবারই কিন্তু করোনায় আক্রান্তের প্রচুর ঝুঁকি থাকছে। অর্থাৎ নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও একরকম সেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেই সেবা করে যাচ্ছেন এই মানুষগুলো। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদের কেউ কেউ পালিয়ে গেলেও পালিয়ে যাচ্ছেন না সার্বক্ষণিক গালি খাওয়া এই মানুষগুলো।
একটু কি চিন্তা করছেন? এই মানুষগুলোকে প্রায়ই আমরা কতটা গালাগাল করি? পান থেকে চুন খসলেই চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করি! হয়ত কখনো কখনো এই মানুষগুলোর কিছু ভুল ত্রুটি থাকে। কিন্তু সমালোচনা করার সময় কোনো বাছবিচার করি কি? তা না করে গুষ্টি তুলে গালাগাল করি, তাই না?
পুলিশ বিভাগের মধ্যে অত্যন্ত নীতিপরায়ন, শতভাগ সৎ, নির্লোভ এবং ধার্মিক একজন ঊর্ধ্বতন অফিসারের অতি সাদাসিধা স্ত্রী গত বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুবরণ করেন। নামাজি এবং অতি পর্দানশীন সেই ভদ্রমহিলার মৃত্যুর পর শুধুমাত্র পুলিশ অফিসারের স্ত্রী হওয়ার কারণেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই জঘন্যতম মন্তব্য করেছেন। ফেসবুকে সেইসব মন্তব্যগুলো পড়ার পর নিরবে চোখের পানি ফেলে শুধু বলেছিলাম, আল্লাহপাক ওনাদের হেদায়েত করুন।
আপনাদের কাছে চরম ঘৃণিত, গালাগাল শোনা সেই মানুষগুলোই আজ দেশবাসীর চরম বিপদের সময় আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই না, নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও আমরা পিছপা হইনি।
এই গরমের মধ্যে আজ ওদের গায়ে যা দেখছেন তা কিন্তু পিপিই নয়, সেটা আসলে রেইন কোর্ট, যা বর্ষাকালে আমরা গায়ে চড়াই। মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত এবং বিজ্ঞানসম্মত না হলেও সেটাই আজ পিপিই হিসেবে ব্যবহার করছি শুধুমাত্র আপনাদের পাশে থাকার জন্য।
মরার ঝুঁকি নিচ্ছি প্রতিনিয়ত শুধু আপনাদের জন্যই। গোল্লায় যাই আমরা! গোল্লায় যাক আমাদের পরিবার!!
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
লেখক: ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), সূত্রাপুর থানা, ডিএমপি।