বডি শেইমিং বা শরীরকেন্দ্রিক উপহাস, সম্মতি ছাড়াই কারো ছবি নিয়ে যৌন আলোচনা এবং ধর্ষণ নিয়ে কৌতুক চলতো এমন একটি ইনস্টাগ্রাম গ্রুপে অংশ নেওয়ার অভিযোগে ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ।
ফেইসবুক মালিকানাধীন ছবি শেয়ারিং সেবা ইনস্টাগ্রামে ‘বয়িস লকার রুম’ নামের গ্রুপটি চালায় রাজধানী দিল্লির স্কুল পড়ুয়া একদল কিশোর। ওই গ্রুপে আলাচারিতার বেশ কিছু স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমগুলোয়– খবর বিবিসি’র।
ইতোমধ্যেই ভারতে নারীদের জন্য সবচেয়ে অনিরাপদ শহরগুলোর একটি বিবেচনা করা হয় দিল্লিকে। এবারে এই ঘটনা আবারও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে দেশটির রাজধানীকে।
২০১২ সালে দিল্লিতে এক মেডিক্যাল ছাত্রীর ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনায় পুরো বিশ্বেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এরপরই ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে আরও কঠোর আইন করে দেশটি।
নতুন আইনের পর থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে এমন ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।
এবারে নতুন আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে বয়িস লকার গ্রুপ। গ্রুপের অস্তিত্ব জানতে পেরে এটির বিষয়ে পোস্ট করতে শুরু করেন বেশ কিছু ইনস্টাগ্রাম গ্রাহক।
সম্মতি ছাড়াই মেয়ে সহপাঠী এবং শিশু কন্যাদের ছবি শেয়ার চলতো গ্রুপটিতে। শরীরকেন্দ্রিক উপহাস, যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণ নিয়ে কৌতুকও চলতো এতে।
গ্রুপের স্ক্রিনশট বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার এবং অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে।
যদিও সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুভাম সিং বলছেন, স্ক্রিনশটগুলোর কয়েকটি সম্ভবত এডিট করা। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে নীবিড়ভাবে কাজ করেন সুভাম, পাশাপাশি গ্রুপটি নিয়ে প্রথম তদন্তে নামা ব্যক্তিদের একজনও তিনি।
সুভাম বলেন, এই গ্রুপের পাশাপাশি স্ন্যাপচ্যাটের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে একই ধরনের অন্যান্য গ্রুপের ছবি মিশিয়ে পোস্ট করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
“আমি উপযুক্ত তদন্ত করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু কেউ অভিযোগ দাখিলের জন্য এগিয়ে আসেনি। তাই আমরা বের করার চেষ্টা করেছি গ্রুপের পেছনে কারা রয়েছে। তারা নিজেদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছে, কিন্তু স্ক্রিনশট এবং কিছু টুলের মাধ্যমে আমি তাদেরকে বের করতে পেরেছি,” বলেন সুভাম।
পরবর্তীতে এই তথ্য পুলিশকে দিয়েছেন সুভাম। এরপরই এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রুপটি নিয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে দিল্লি উইমেন’স কমিশন (ডিসিডব্লিউ)। অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে দিল্লি পুলিশের কাছে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। আর এ পর্যন্ত কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার বিস্তারিতও জানতে চেয়েছে ডিসিডব্লিউ।
অন্যদিকে পুলিশ বলছে, বিষয়টি জানার পর ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে। একই ঘটনায় একটি স্কুল অপরাধ মামলা করেছে বলেও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে পুলিশ। শীঘ্রই গ্রুপের অন্যান্য সদস্যকে আটক করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে ইনস্টাগ্রামের কাছেও নোটিশ দিয়েছে ডিসিডব্লিউ। এখন পর্যন্ত এতে কোনো মন্তব্য করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
কী কারণে এমনটা হয়েছে তার ব্যাখা দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অফ সাইবার সিকিউরিটি ল’র চেয়ারম্যান পাভান দুগগাল।
দুগগাল বলেন, লকডাউনের সময়ে শিশুদের পর্নোগ্রাফি সাইট এবং অন্যান্য “ডার্ক ওয়েব” সাইট ব্রাউজিং “ব্যাপক বেড়েছে” বলে জানতে পেরেছে তার সংস্থা।
“লকডাউনের শেষ ৪০ দিনে ঘরবন্দী শিশুদের মধ্যে সামাজিক এবং মানসিক অনেক পরিবর্তন এসেছে এবং তারা তাদের অনলাইন কার্যক্রম বাবা-মায়ের সঙ্গে শেয়ার করছে না,” বলেন দুগগাল।
বিশ্লেষণযোগ্য ডেটা না থাকলেও লকডাউনের সময় পর্নোগ্রাফি সাইট এবং যৌন কল্পনার গ্রুপগুলোতে শিশুদের বিচরণ বেড়েছে, কমিশন এমনটা দেখেছে বলেও জানিয়েছেন দুগগাল।
অন্যদিকে মনোচিকিৎসক ড. রমা কুমার বলেন, এই গ্রুপগুলো লকডাউনের আগেও ছিলো, কিন্তু এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে এটি আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠতে পারে।