ব্যবহারকারীদের বিকল্প প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের আহ্বান এবং সহজে যোগাযোগের জন্য বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় অ্যাপ রাকুতেন ভাইবার হোয়াটসঅ্যাপের সর্বশেষ গোপনীয়তা সংক্রান্ত আপডেট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আগে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীরা তাদের ফোন নাম্বার ফেসবুকের সাথে শেয়ার করবে কিনা তা নির্বাচন করার সুযোগ পেত। কিন্তু সামনে এটি ব্যবহারকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হবে। ব্যবহারকারীদের অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে নতুন শর্তাদিতে সম্মতি প্রদান করতে হবে, অন্যথায় তারা তাদের অ্যাকাউন্ট আর ব্যবহার করতে পারবেন না।
হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের এই দোদুল্যমান অবস্থা বোঝার জন্য আমরা ২০১৮ সালে হোয়াটসঅ্যাপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাক্টনের পার্মি ওলসেনের সাথে ফোর্বসে দেয়া সাক্ষাৎকারটি পড়ে দেখতে পারি। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি তার চলে যাওয়ার পেছনের কারণ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন এবং তার টুইটে সবাইকে ফেসবুক ডিলিট করে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আমার ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা অনেক বড় স্বার্থের জন্য বিক্রি করেছি। আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং এর সাথে আমাকে আপস করতে হয়েছে। এখন প্রতিদিনই আমি বিষয়টি নিয়ে ভাবছি।’
সর্বশেষ আপডেটের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুকের সাথে একীভূত যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপের এই এক হয়ে যাওয়ার ফলে মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহারকারীদের আগের তুলনায় অনেক বেশি মানিটাইজ করা হচ্ছে। বিষয়টি ব্যক্তিগত মেসেজিং করতে যারা আগ্রহী, তাদের জন্য বেশ উদ্বেগজনক।
৪ জানুয়ারি, ২০২১ -এর আপডেটের আগ পর্যন্ত, হোয়াটসঅ্যাপের চুক্তি সংক্রান্ত শর্তাদিতে বলা হতো- ‘আপনার গোপনীয়তার প্রতি আমরা সর্বাত্মকভাবে শ্রদ্ধাশীল। হোয়াটসঅ্যাপের যাত্রার শুরু থেকেই আমরা গোপনীয়তা সংক্রান্ত নীতিমালা মাথায় রেখে আমাদের সেবা তৈরি করতে চেয়েছি।’
‘আপনার হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজগুলো অন্যদের দেখার জন্য ফেসবুকে শেয়ার করা হবে না। ফেসবুক আমাদের সেবা পরিচালনা ও প্রদানে সহায়তা করা ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে আপনার হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ ব্যবহার করবে না।’
স্বাভাবিকভাবেই এই দুইটি বিবৃতি ইতিমধ্যে মুছে ফেলা হয়েছে।
তথ্য সংক্রান্ত গোপনীয়তা নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপের এই অনিশ্চয়তাপূর্ণ নীতির সম্পূর্ণ বিপরীতে ভাইবার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। ব্যবহারকারীদের তথ্যের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে ভাইবারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফিচার রয়েছে। এই ফিচারগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বিনামূল্যে ব্যক্তিগত কল এবং চ্যাটের জন্য ডিফল্টস্বরূপ এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন, যেখানে বিশেষ কোন সেটিংসের প্রয়োজন নেই। ভাইবারে অংশগ্রহণকারী ব্যতীত ভাইবার নিজেও কোনো ব্যবহারকারীর কল এবং চ্যাট অ্যাক্সেস করতে পারবে না।
প্রেরিত কোন মেসেজ ভাইবার সংরক্ষণ করে না এবং ক্লাউড ব্যাকআপ ডিফল্টভাবে বন্ধ থাকে। যেসব ব্যবহারকারীরা তাদের বার্তা ব্যাক আপ রাখতে চান, তারা চাইলে ক্লাউড ব্যাকআপ সক্রিয় করতে পারেন। তবে, ভাইবার ব্যবহারকারীদের মেসেজ এবং কলের কোন অনুলিপি রাখে না। ভাইবার স্ক্রিনের গোপনীয়তার সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা প্রদান করে। ভাইবারের ব্যবহারকারীদের সেলফ-ডেস্ট্রাক্টিং বার্তা পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি, বার্তা আদান-প্রদানের সময় ব্যবহারকারীরা চাইলেই পুরো কথোপকথনটি গোপন করতে পারবেন, যা শুধুমাত্র পিন কোডের মাধ্যমেই দেখা যাবে। ভাইবারে ব্যবহারকারীর তথ্য কখনো ফেসবুকের সাথে শেয়ার করা হয় না। ভাইবার ফেসবুকের সাথে সমস্ত ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। আর তাই, ব্যবহারকারীদের তথ্য (ফোন নাম্বার এবং ব্যক্তিগত তথ্য) কখনোই ফেসবুকের সাথে শেয়ার করা হবে না।
রাকুতেন ভাইবারের প্রধান নির্বাহী জ্যামেল আগাওয়া বলেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপের গোপনীয়তা সংক্রান্ত নীতিমালায় সাম্প্রতিক আপত্তিকর আপডেটটি গোপনীয়তার মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে একটি হাস্যকর বিষয়ে পরিণত করেছে। হোয়াটসঅ্যাপের কাছে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা কতটা অর্থহীন আপডেটটি কেবল তাই প্রদর্শন করে না, এটি ব্যবহারকারীদের তথ্য অবমাননার ক্ষেত্রে একটি নতুন রেকর্ড বলা যায় এবং নিঃসন্দেহে ভবিষ্যতে এই রেকর্ড আরও ভাঙতে থাকবে। আজ আমি ভাইবারের গোপনীয়তা সংক্রান্ত নীতিমালা নিয়ে সবচেয়ে বেশি গর্ববোধ করছি এবং যেসকল নারী-পুরুষ নিজেদের সর্বাধিক নিলামকারীর কাছে বিক্রিযোগ্য তথ্যের চেয়ে বেশি কিছু মনে করেন, তাদের সকলকে মেসেজিং ও কল করার ক্ষেত্রে ভাইবার ব্যবহারের আহ্বান জানাচ্ছি।’