নক্রিপটেড মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের স্বয়ংক্রিয় একটি বটের মাধ্যমে ৫৩ কোটি ৩০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর বিক্রির জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের আগস্টে সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুকের তথ্যসংক্রান্ত দুর্বলতা ঠিক করার আগে এ বিপুলসংখ্যক ফোন নম্বর হাতিয়ে নেয়া হয়েছিল। ব্যবহারকারীদের তথ্য নেট দুনিয়ায় প্রকাশ্যে বিক্রি হওয়ার বিষয়টি চিন্তা বাড়িয়েছে সাইবার বিশেষজ্ঞদের। খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।
মাদারবোর্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি স্বয়ংক্রিয় টেলিগ্রাম বট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ফোন নম্বর সংবলিত ডাটাবেজ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। প্রতি নম্বরের বিনিময়ে ২০ ডলার করে চাইছে ওই টেলিগ্রাম বট। টেলিগ্রাম বটটি অন্তত ১২ জানুয়ারি থেকে চলছে।
ওই বট দাবি করেছে, সেখানে বিভিন্ন দেশের ৫৩ কোটি ৩০ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর ও তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ লাখ বাংলাদেশী, ৩ কোটি ২৩ লাখ মার্কিনি, ১ কোটি ১৫ লাখ ব্রিটিশ, ৯৯ লাখ রুশ, ৬ লাখ চীনা ও ৬১ লাখ ভারতীয়েরও তথ্য রয়েছে।
এ টেলিগ্রাম বট ব্যবহারকারীদের ফোন নম্বর প্রবেশ করালে সংশ্লিষ্ট ফেসবুক আইডি দেখিয়ে দেয়। প্রাথমিক ফলাফল দেখা গেলেও প্রতিটি নম্বরের জন্য ২০ ডলার করে চাইছে ওই বট। তবে একসঙ্গে ১০ হাজার নম্বর নিলে ৫ হাজার ডলারে পাওয়া যাবে বলেও জানানো হয়েছে।
সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম হডসন রকের সহপ্রতিষ্ঠাতা অ্যালন গল ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য বিক্রির টেলিগ্রাম বট নিয়ে প্রথম সতর্ক করেন। সাইবার সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ গল মাদারবোর্ডকে বলেন, সাইবার ক্রাইম কমিউনিটির কাছে এভাবে ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার বিক্রি হচ্ছে দেখে ভয় লাগে। এটি আমাদের গোপনীয়তার মারাত্মক লঙ্ঘন। নিশ্চিতভাবে এগুলো মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে ব্যবহার করা হবে।
যদিও ডাটাগুলো কিছুটা পুরনো। তবে ফোন নম্বর প্রকাশ হওয়ার মাধ্যমে এটি এখনো সাইবার নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার ঝুঁকি তুলে ধরে। বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে ফেসবুক মাদারবোর্ডকে জানিয়েছে, তথ্যসংক্রান্ত যে দুর্বলতাগুলো ছিল, তা ২০১৯ সালের আগস্টে ঠিক করা হয়েছিল। ডাটাগুলো তার আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।
গল বলেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের বিষয়টি অবহিত করা। এর ফলে তারা বিভিন্ন হ্যাকিং ও সামাজিক প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা কমে যাবে।
গত ডিসেম্বরে ই-মেইল ঠিকানা ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর জন্মদিনের মতো ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন হয়েছিল। নেপালের বিশেষজ্ঞ সওগাত পোখারেল এ ত্রুটি আবিষ্কার করেছিলেন। সে সময় ফেসবুকের ব্যবসায়িক টুল ব্যবহার করে এ তথ্য চুরির ঘটনা ঘটে।
ফেসবুকের মুখপাত্রের মতে, বাগটি একটি ছোট পরীক্ষা চলাকালীন স্বল্প সময়ের জন্য প্রবেশযোগ্য ছিল। একজন গবেষক এমন একটি বিষয় জানিয়েছেন, যেখানে আমরা ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টকে একটি ছোট পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসি, তবে ওই সময় বার্তা আদান-প্রদানে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা যেত।
এর আগে গত নভেম্বর মাসে ফেসবুক তার মেসেঞ্জার অ্যাপের একটি জটিল ত্রুটি সংশোধন করেছে। এ ত্রুটি কাজে লাগিয়ে ব্যবহারকারীদের অনুমোদন ছাড়াই ও অজান্তে হ্যাকাররা অডিও কলগুলোতে সংযোগ স্থাপন করতে পারত।