নসেন্ট বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তৈরি ব্রিটিশ এক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের ক্লিপ টিকটকে পোস্ট হওয়ার পর সেখানে ব্যবহারকারীরা ক্রমাগত অভিযোগ করে বলছেন, এখানে নারী আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছেন পুরুষের ওপর। বিদ্বেষমূলক ওইসব কমেন্টে এমনকি উঠে এসেছে বিতর্কিত ইনফ্লুয়েন্সার অ্যান্ড্রু টেটের নাম। নারীবিদ্বেষী মনোভাবের কারণে এরইমধ্যে বেশ কিছু প্ল্যাটফর্মে নিষিদ্ধ হয়েছেন তিনি। ‘কনসেন্ট’ শব্দটির শাব্দিক অর্থ সম্মতি হলেও প্রচলিত অর্থে এর মাধ্যমে শারীরিক ঘনিষ্টতায় দুই পক্ষের সম্মতি বোঝায়।
কনসেন্ট নিয়েই তৈরি এক ভিডিও টিকটকে আপলোড হওয়ার পর তা ভেসে যাচ্ছে নারীবিদ্বেষী মন্তব্যের জোয়ারে। বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, সাকুল্যে প্রায় এক হাজার সাতশ অনুসারী থাকা অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট করা দুই মিনিটের ওই ভিডিও দর্শকরা দেখেছেন ১২ লাখেরও বেশিবার সময়ে। এই স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের নির্মাতা ও মূল অভিনেত্রী এমিলিন হার্টলি বলছেন, এই ভিডিওর প্রতি এতো ঘৃণা ছড়ানোর মূল কারণ টিকটকের অ্যালগরিদম বলে মনে করেন তিনি।
এমিলিন বলছেন, কমেন্টের স্রোতের ফলে সহায়তার জন্য প্ল্যাটফর্মের কারও সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগও করতে পারছিলেন না তিনি। সব কমেন্টের জবাব দেওয়ার মতো সময় ও পরিস্থিতি তার নেই বলেছেন এমিলিন। তিনি কী এমন করেছেন বলে ভাবছেন। আসলেই কি তিনি এমন একটি সিনেমা বানিয়েছেন যেটি ধর্ষণ সংস্কৃতিকেই সমর্থন করছে! টিকটকে অন্যান্য ভিডিও কনটেন্টও এমন অবমাননাকর কমেন্টে ভেসে যেতে দেখেছেন তিনি। ওইসব ভিডিওতে নির্মাতারা লাইক চাওয়ার পাশাপাশি টিকটককে ভুল দিক থেকে ফিরিয়ে আনতে সহায়তাও চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন এমিলিন।
ব্যবহারকারীর আগের পছন্দ করা বিভিন্ন ভিডিও এবং তার মতো অন্যসব ব্যবহারকারী যেসব ভিডিও দেখেন বা মন্তব্য করেন, সেগুলোর ওপর ভিত্তি করে কনটেন্ট পরিবেশন করে টিকটক।
তবে, অ্যালগরিদম নিয়ে কথা না বলে টিকটক বলেছে, প্ল্যাটফর্মে নারীবিদ্বেষ একেবারেই সমর্থন করে না তারা। কমিউনিটি গাইডলাইন একে স্পষ্টভাবেই ঘৃণামূলক মতাদর্শ হিসেবে দেখে। এটিও পরিষ্কার যে, এমন জিনিস ঘৃণামূলক মন্তব্য তারা প্ল্যাটফর্মে চান না বলেছেন টিকটকের এক মুখপাত্র।
টিকটক আরও যোগ করেছে, এমিলিন এর ভিডিও থেকে একশরও বেশি কমেন্ট সরিয়েছেন তারা। তবে, এখনও ভিডিওতে থেকে যাওয়া কমেন্টের এটি কেবল ক্ষুদ্র একটি ভগ্নাংশ বলে স্বীকারও করে নিয়েছে প্ল্যাটফর্মটি। জুলাইয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মালিক কোম্পানি মেটা এরইমধ্যে টিকটকের কাছাকাছি একটি অ্যালগরিদম বানাচ্ছে। ফেসবুক এতোদিন ব্যবহারকারীর অনুসরণ করা নির্মাতাদের কনটেন্ট দেখাতো।
সামাজিক মাধ্যম পরামর্শক ম্যাট নাভারা বলেছেন, এই কনটেন্ট যদি এমন একদল ব্যবহারকারী দেখে, সম্পৃক্ত হয় এবং পছন্দ করে, যারা অ্যান্ড্রু টেটের ভক্ত, তবে ওই কনটেন্টের অংশ হয়তো আরও বেশি লোক দেখবেন, যারা এই ধরনের ব্যবহারকারী। এটি চলতেই থাকে। নির্মাতা চাইলেও স্টেশন একবার ছেড়ে গেলে, নির্মাতা এই ট্রেনের গতি আর আটকাতে পারেন না, কারণ অ্যালগরিদমের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আর, এইসব সমস্যা নিয়ে অভিযোগ জানানোর সুযোগও সীমিত।
পরামর্শমূলক হিসেবে কাজ করে টিকটকের অ্যালগরিদম। নতুন কনটেন্টে সম্পৃক্ততার বেলায় একজন ব্যবহারকারী ও তার মতো অন্যান্য লোকজনের আগের কার্যক্রমের ধরন বিবেচনায় নেয় এটি। ব্যবহারকারীকে প্ল্যাটফর্মে দীর্ঘ সময় রাখতে ও তুলনামূলক বেশিবার আনতে সাহায্য করে এই ব্যবস্থা। ফলে এটি বিজ্ঞাপনদাতার পাশাপাশি টিকটকের বিজ্ঞাপনী আয়ের জন্যেও ভালো বলেন ম্যাট নাভারা। এমিলিন এর পোস্ট করা ভিডিওটি তার ‘কিপ ব্রিদিং’ নামে একটি সিনেমার অংশ।
টিকটকে এমিলিন এর পোস্ট করা সেই ক্লিপে কেবল দুজনের তর্কের অংশটি ছিল, কোনো ফ্ল্যাশব্যাক ছিল না। এমিলিন পরে আরেক ভিডিওতে ফ্ল্যাশব্যাকের অংশগুলো পোস্ট করার চেষ্টা করলে সেটি বারবার সরিয়ে ফেলছিল টিকটক। কারণ হিসেবে প্ল্যাটফর্মটি বলেছে, ভিডিওটি বেশি খোলামেলা। বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, তিনি এখন গোটা বিষয়টি ব্যাখ্যা করার পরও এখনও অনেক মন্তব্য আছে যেগুলো নারীবিদ্বেষী। এর আগে ভিডিওটি নামিয়ে ফেলার কথা ভাবলেও এমিলিন এখন বলছেন, পোস্ট রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তে তিনি অটল।
এমিলিন জানিয়েছেন এ ব্যাপারে তিনি কোন অনুশোচনা বোধ করছেন না। তবে, কীভাবে এর জবাব দেওয়া যায়, সেটি বের করার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে ইতিবাচক মন্তব্যও এসেছে। কমেন্টের মধ্যেই নিজেদের আলোচনায় কিছু লোক তাদের মনোভাব পাল্টেছেন। তার ধারণা, এটি গুরুত্বপূর্ণ এবং এর দরকার আছে।