বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার জন্য নিষিদ্ধ বা অনুপস্থিত হওয়ার সম্ভাবনার মুখোমুখি হচ্ছে ভিডিওভিত্তিক জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম টিকটক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অ্যাপটি অবৈধ ঘোষণা করার পদক্ষেপ নেওয়ার পরেই এটি ঘটতে পারে।
টিকটক সংশ্লিষ্ট মার্কিন বিলটি পাশ হলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। আর এটি আগামী বছরের মধ্যে দেশটিতে টিকটক একেবারে নিষিদ্ধ করবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইনডিপেন্ডেন্ট। এর প্রায় চার বছর আগেই ভারত অ্যাপটির ওপরে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ ছাড়া, ইরান, সেনেগাল, নেপাল, আফগানিস্তান ও সোমালিয়াও নাগরিকদের চীনা কোম্পানি বাইটড্যান্স মালিকানাধীন অ্যাপটি ব্যবহারে বাধা দিচ্ছে। এদিকে, খোদ চীনেও নেই টিকটক, যার অর্থ বিশ্বজুড়ে টিকটক ব্যবহার করতে পারেন না এমন মানুষের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে তিনশত কোটিরও বেশি।
ইউকে, ইইউ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ, অন্যান্য কয়েকটি অঞ্চল ও দেশ, সরকারি বা সামরিক ডিভাইসে অ্যাপটি ব্যবহারের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এত বাধা সত্ত্বেও, ২০২৪ সাল এ পর্যন্ত দুইশো কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী ছাড়িয়ে গিয়ে সফলভাবে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অ্যাপ হয়ে উঠেছে টিকটক। জাতীয় নিষেধাজ্ঞাগুলো হয় রাষ্ট্রীয় ‘সেন্সরশিপ’ বা জাতীয় নিরাপত্তা কেন্দ্রিক শঙ্কার ওপরে জোর দেয় বলে উল্লেখ রয়েছে প্রতিবেদনে।
মার্কিন আইন প্রণেতারা শঙ্কা প্রকাশ করছেন টিকটকের মালিক কোম্পানি বাইটড্যান্স ব্যবহারকারীদের তথ্য চীনা সরকারের কাছে পাঠায়। এ ছাড়া, অন্যদের দাবি, অ্যাপের অ্যালগরিদম অপপ্রচার ও ভুল তথ্য ছড়াতে ব্যবহার করা যেতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অ্যাপটির নিষেধাজ্ঞা, ১৭ কোটি আমেরিকানের বাক স্বাধীনতা হরণ করবে বলে এক বিবৃতিতে বলেছে টিকটক। বিশ্লেষণ কোম্পানি অ্যাপফিগারের তথ্য অনুসারে, গত বছর ডাইনলোডের দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় জনপ্রিয় অ্যাপ ছিল টিকটক। এর ওপরে ছিল কেবল কেনাকাটার অ্যাপ ‘টেমু’।
অ্যাপটির এ জনপ্রিয়তার বড় অংশই এসেছে কম বয়সী ব্যবহারকারীদের থেকে। জার্মান তথ্য বিশ্লেষণ কোম্পানি স্ট্যাটিস্টার এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, বিশ্বব্যাপী টিকটক ব্যবহারকারীর ৭০ শতাংশেরও বেশি ৩৫ বছরের কম বয়সী। এদিকে, ৫৫ বছরের বেশি বয়সের ব্যবহারকারী ৭ শতাংশেরও কম।
পাশাপাশি, তরুণরা বয়স্ক ব্যবহারকারীদের তুলনায় অ্যাপটিকে বেশি বিশ্বাস করেন বলে জানা গেছে পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষায়। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সী মার্কিন টিকটক ব্যবহারকারীদের ৩০ শতাংশের বেশি অ্যাপটিকে নিয়মিত সংবাদের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন। এর তুলনায়, ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যবহারকারীর মাত্র ৩ শতাংশই এ কাজ করেন।
তবে, টিকটক যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হওয়ার যে কোনো পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই করবে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইনডিপেন্ডেন্ট।
“এটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার শুরু, শেষ নয়।” – এ সপ্তাহের শুরুতে, সর্বশেষ বিলটি সম্পর্কে কর্মীদের উদ্দেশ্যে লিখেছেন কোম্পানির পাবলিক পলিসি বিভাগের প্রধান মাইকেল বেকারম্যান।