প্রতিটি নাগরিকের জন্যই জন্মনিবন্ধন জরুরি। বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশে সব কাজেই দরকার হয় জন্ম সনদ। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করান সব কিছুতেই দরকার নয় জন্ম সনদ। শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যেই শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।
না হলে পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। বিশেষ করে নতুন বছরে সন্তানের স্কুলে ভর্তি করতে জন্ম নিবন্ধন অবশ্যই করতে হবে। আপনার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খুব সহজেই কাজই করতে পারেন। তবে যদি সময়ের অভাবে সশরীরে হাজির হয়ে জন্ম নিবন্ধন করতে পারেন না। তাহলে ঘরে বসে অনলাইনে খুব সহজেই কাজটি সেরে নিতে পারেন।
বাংলাদেশ সরকার ২০০৪ সালে জন্মনিবন্ধন আইন প্রণয়ন করলেও ২০০৬ সাল থেকে তা কার্যকর করা হয়। ২০১০ সাল থেকে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনলাইনে জন্মনিবন্ধনের আবেদন খুবই সহজ। বর্তমানে জন্মনিবন্ধনের আবেদন অনলাইনেই বেশি হচ্ছে।
ঘরে বসে মাত্র কয়েক মিনিটে স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে জন্ম নিবন্ধন করে নিতে পারবেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক পদ্ধতিটি-
>> প্রথমে বাংলাদেশ সরকারের জন্মনিবন্ধন প্রকল্পের ওয়েবসাইটে bdris.gov.bd প্রবেশ করুন।
>> স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের ব্রাউজার থেকে লিংকটি ওপেন করুন।
>> এবার আবেদনকারী কোন এলাকা থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ তুলতে চান সেটি নির্বাচন করতে হবে। শিশুর জন্ম যদি দেশের বাইরে হয় তাহলে বাংলাদেশ দূতাবাস নির্বাচন করতে হবে। আবেদনকারী এখানে যে এলাকা বা কার্যালয় নির্বাচন করবেন পরে সেখান থেকেই সনদ সংগ্রহ করতে হবে।
>> এরপর আবেদনকারীকে একটি ফরম দেওয়া হবে। এখানে নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পরিচিতি অংশটি ভালোভাবে পূরণ করুন। এই অংশে আবেদনকারীর নামের দুটি অংশ (বাংলা ও ইংরেজি) দু’ভাবেই লিখতে হবে। যদি আবেদনকারী আপনি নিজে হন তাহলে নিজের নাম লিখুন। ইংরেজিতে লেখার সময় অবশ্যই ইংরেজি বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করুন।
>> এরপর আবেদনকারীর জন্ম তারিখ লিখুন। জন্ম তারিখের পরের দুটি ঘরে শিশুর বাবা-মার কততম সন্তান ও লিঙ্গ উল্লেখ করতে হবে।
>> এরপর শিশুর জন্মস্থানের নাম লিখুন। এই অংশে আবেদনকারীর দেশ, বিভাগ, বাংলায় ডাকঘর, ইংরেজিতে ডাকঘর। বাংলায় গ্রাম/ মহল্লা, ইংরেজিতে গ্রাম/ মহল্লা, বাংলায় বাড়ি/ রাস্তা, ইংরেজিতে বাড়ি/ রাস্তা।
>> এই ঘরগুলো পূরণ করা হলে নিচের ডান দিকে থাকা ‘পরবর্তী’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে। এরপর আরেকটি ফরম দেখা যাবে। সেই ফরমের প্রথম ঘরে নিবন্ধনকারীর বাবার জন্ম সনদ নম্বর লিখতে হবে। এরপরের দুটি ঘরে নিবন্ধনকারীর বাবার নাম বাংলায় ও ইংরেজিতে বড় অক্ষরে লিখতে হবে। পরের দুটি ঘরে নিবন্ধনকারীর বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জাতীয়তা লিখতে হবে। একইভাবে নিবন্ধনকারীর মায়ের তথ্যও পূরণ করতে হবে।
>> এই ঘরগুলো পূরণ করা হলে নিচের ডান দিকে থাকা ‘পরবর্তী’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে। এখানে আপনার ঠিকানা লিখতে হবে। প্রথমেই ‘আপনি কি নিম্নলিখিত কোন ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করতে চান?’ অপশন থেকে কোনোটি নয় বাছাই করলে ঠিকানা দেওয়ার জন্য একটি পৃষ্ঠা চলে আসবে আপনার সামনে। আপনার জন্মস্থানের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই হলে ‘জন্মস্থানের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই’ অপশনটিতে ক্লিক করুন। সেক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে ঠিকানার তথ্যগুলো চলে আসবে। অন্যথায় ঠিকানা আলাদা করে লিখুন।
>> ঠিকানা লেখার পর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন। এখানে আবেদনকারীর তথ্য দিতে হবে। আবেদনকারীর সঙ্গে নিবন্ধনকারীর সম্পর্ক, আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল জমা দিতে হবে। নিবন্ধনকারী যদি ১৮ বছরের বেশি বয়সের হন তাহলে নিজেই আবেদন করতে পারবেন।
>> সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করার পর আপনাকে পুনরায় তথ্যগুলো দেখানো হবে। আপনার দেওয়া তথ্যগুলো যাচাই করুন। কোনো তথ্য ভুল হলে তা সংশোধন করুন। এরপর সাবমিট বাটনটিতে ক্লিক করুন।
জন্মনিবন্ধন আবেদনটি সঠিকভাবে সাবমিট হলে আপনাকে একটি আবেদন নম্বর দেওয়া হবে। এই নম্বরটি দিয়ে আপনি সহজেই জন্মনিবন্ধনের অবস্থা জানতে পারবেন। ‘আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করুন’ বাটনটিতে ক্লিক করে আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে নিন।
আবেদন করার ১৫ দিন পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রিন্ট করা কপিটি নিয়ে নির্দিষ্ট কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে হবে। সেখানে কাগজপত্রগুলো জমা দিলেই জন্মনিবন্ধন সনদটি আপনি পেয়ে যাবেন।