বাণিজ্য নিয়ে চীন-মার্কিন উত্তেজনা শুরুর আগেই বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর বাজারে মন্দা চলছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর বৈশ্বিক সেমিকন্ডাক্টর বাজার ৯ দশমিক ৬ শতাংশ সংকুচিত হবে। খবর জিডিনেট।
তবে এর মধ্যেও ইন্টেলের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টো ঘটনা। মার্কিন এ চিপ জায়ান্ট দ্বিতীয় প্রান্তিকের শুরুতে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসের চেয়েও বেশি চিপ বিক্রি করেছে।
গত সপ্তাহে চিপ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান টেক্সাস ইনস্ট্রুমেন্ট জানায়, চীন-মার্কিন বাণিজ্য উত্তেজনা চীনে তাদের ব্যবসা চালিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলছে না। এ প্রতিষ্ঠানই প্রথম পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি বিক্রির তথ্য জানায়।
ইন্টেলের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জর্জ ড্যাভিস বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, মার্কিন আইন-কানুনের মধ্যে পড়ে, এমন কিছু পণ্য তারা চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের কাছে বিক্রি করতে শুরু করেছেন।
ইন্টেলের নির্বাহীরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের হুমকি তাদের জন্য শাপে বর হয়েছে। এতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে উল্টো তাদের ব্যবসা ৪০ কোটি টাকা বেড়েছে।
এর ব্যাখ্যায় জর্জ ড্যাভিস বলেন, এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ক্রেতারা সরবরাহ সংকটের আশঙ্কায় রয়েছেন। এ কারণে তারা বেশি বেশি পণ্য কিনছেন। অনেকে অতিরিক্ত পণ্য গুদামজাত করছেন। এর ফলে দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিক্রি বেড়েছে। এটি সারা বছরের পূর্বাভাসে প্রভাব ফেলবে, এমনটা জোর দিয়ে বলা না গেলেও বছরের উদ্বেগ কিছুটা প্রশমিত করেছে তা বলা যায়।
এদিকে ইন্টেলের দ্বিতীয় প্রান্তিকের রাজস্বের খতিয়ান অনুযায়ী, কোম্পানি রাজস্ব আয় করেছে ১৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় ১ দশমিক শূন্য ৬ ডলার।
যেখানে বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, গড়ে ১৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারে ইন্টেল এবং শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় হতে পারে ৮৯ সেন্ট। গবেষণা সংস্থা রিফিনিটিভ এমনটিই পূর্বাভাস দিয়েছিল।
দ্বিতীয় প্রান্তিকের এ অবস্থা দেখে তৃতীয় প্রান্তিকের প্রক্ষেপণের অংক বাড়িয়েছে ইন্টেল। তারা আশা করছে, তৃতীয় প্রান্তিকে রাজস্ব ও মুনাফা আসবে যথাক্রমে ১৮ বিলিয়ন ডলার ও শেয়ারপ্রতি ১ দশমিক ২৪ ডলার। যেখানে বিশ্লেষকদের প্রক্ষেপণ রয়েছে ১৭ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার এবং ১ দশমিক ১৬ ডলার।
ইন্টেল আশা করছে, চলতি বছর কোম্পানির মোট রাজস্ব আসবে ৬৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। যেখানে গত এপ্রিলের তারা বিনিয়োগকারীদের রাজস্বের প্রক্ষেপণ জানিয়েছিল ৬৯ বিলিয়ন ডলার।
ইন্টেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বব সোয়ান বিনিয়োগকারীদের এক সম্মেলনে বলেন, কোম্পানির দুটি কোম্পানিতে এখন পরবর্তী প্রজন্মের চিপ উৎপাদন প্রযুক্তির ১০ ন্যানোমিটার চিপ উৎপাদন শুরু হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ৭ ন্যানোমিটার চিপ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
এদিকে এরই মধ্যে ফাইভজি মোবাইল ইন্টারনেট মডেম ব্যবসা ১০০ কোটি ডলারে অ্যাপলের কাছে বেচে দিয়েছে ইন্টেল। ফলে কোম্পানির ওই বিভাগটির প্রায় ২ হাজার ২০০ কর্মী এখন অ্যাপলে যোগ দেবেন। আর পুরো লেনদেনটা হবে নগদ টাকায়। ইন্টেল আশা করছে, মডেম ব্যবসা বিক্রি থেকে কর পরিশোধের পর কোম্পানি ৫০ কোটি ডলার ঘরে নিতে পারবে।
তাছাড়া নন-স্মার্টফোন মডেম তৈরির পেটেন্ট ইন্টেলের কাছেই থাকছে। এসব মডেম ব্যবহার করা হবে স্বচালিত গাড়ি এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটারে (পিসি)।