ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে অধ্যাবসায় না করলে কল্পনাও করা যাবে না কিভাবে সবচেয়ে পশ্চাৎপদ ও অনুন্নত একটি জনপদ বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রে রুপান্তর ঘটেছে । যুগে যুগে পৃথিবীতে নিজেদের ভূখন্ডকে, রাষ্ট্রকে বা জাতিকে গড়ে তুলতে পৃথিবীতে যে সকল কীর্তিমান মানুষ অবদান রেখেছেন তাঁদের সমগ্র কর্মকান্ড বিশ্লেষন করলেও একজন শেখ মুজিবুর রহমানের মত ত্যাগী, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন, সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার সম্মোহনী ক্ষমতার অধিকারী আত্ম প্রত্যয়ী বীর একজনও পাওয়া যাবে না।তিনি বলেন, নিজেকে তৈরি করার জন্য বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শকে অনুসরণ করার চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না।তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী আজ ঢাকায় টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহসীন আলম এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আজিজুল ইসলাম বক্তৃতা করেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য লাভের স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবনে কী পরিমান অবদান রেখে গেছেন এবং এই বাঙালি জাতির জন্য জীবনে যে চড়াই – উৎরাই অতিক্রম করেছেন তা তুলনা করে খুঁজে বের করা কঠিন। তিনি বলেন, দেশের কথা সমাজের কথা সর্বোপরি মানুষের কল্যাণ ছিল যার সাধনা সেই মানুষকে কী হারানো যায়।
বঙ্গবন্ধু ডাকে সারা দিয়ে একাত্তরের সাতই মার্চের পর মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যুদ্ধের ময়দানের অভিজ্ঞতার স্মৃতি রোমন্থন করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যের বিরুদ্ধে বিনা অস্ত্রে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির জয়ের একটা কারণ হচ্ছে দেশের এমন একটা মা ছিলেন না নিজে না খেয়ে যিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন।যে মানুষটি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান আন্দোলনে লড়াই করেছেন, সেই মানুষটি কেন পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেন প্রশ্ন রেখে বলেন, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে যে পাকিস্তান গঠিত হওয়ার কথা ছিল, সেই পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়নি। তার অর্থ ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং তার ওপর ভিত্তি করেই রাষ্ট্র রচিত হবে। এরই ধারবাহিকতায় ১৯৪৮ সাল থেকেই বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২৩ বছরের নিরন্তর সংগ্রামের পথ বেয়ে ১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। স্বাধীনতা লাভের পর যে মূহুর্তে যুদ্ধের ধ্বংসস্তুপ থেকে বাংলাদেশ উঠে দাঁড়াল. যে মূহুর্তে স্বাধীনতা উত্তরকালের মধ্যে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্য ও শোষণহীন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দিলেন, সেই মূহূর্তে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হল বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা মানে একটা মানুষকে হত্যা করা না কিংবা একজন রাষ্ট্রনায়ককে হত্যা করা নয় উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রচলিত যে সাম্প্রদায়িকতা ছিল সেটার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে একটি ভাষা ভিত্তিক রাষ্ট্র তৈরি করেছেন। তিনি বলেন এই দেশ সকল ধর্মের সকল বর্ণের সকল মানুষের মিলিত মাতৃভূমি। সাম্প্রদায়িক সম্পৃতি আমাদের অহংকার। সম্পৃতির এই বন্ধন অটুট আছে বলেই বাংলাদেশ প্রতিটি সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক অনেক এগিয়েই নয় জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জনের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান আজ শীর্ষ স্থানে উপণতি হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে গত দশ বছরের বাংলাদেশ এক অভাবনীয় সাফল্যের দেশ হিসেবে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। ক্রয় ক্ষমতার সক্ষমতার দিকে থেকে বাংলাদেশ ৩২তম এবং অর্থনৈতি সক্ষমতার দিকে থেকে ৪২তম স্থানে পৌছানোর গৌরব অর্জন করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে উন্নত বাংলাদেশ।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে টেলিকম কর্মকর্তাদের আরও নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
মন্ত্রী বিকালে গুলশানে বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন।
টেলিটক ব্যবস্থাপণা পরিচালক মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস এবং ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসএস ভদ্র বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে ১৫ আগস্ট শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।