বিতর্কিত অপরাধী প্রত্যর্পণ বিল ইস্যুতে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এখন উত্তাল গোটা হংকং। নিজেদের অধিকার আদায়ে এখন হংকংয়ের রাজপথে লাখ লাখ গণতন্ত্রকামী মানুষ। যাদের অংশগ্রহণে এ বিক্ষোভ মোড় নিয়েছে স্বাধীনতার আন্দোলনে। নিজেদের আধা-স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলে চলমান গণতন্ত্রকামীদের এ আন্দোলন ঠেকাতে এখন পর্যন্ত নানা পদক্ষেপ নিয়েছে চীন, দিয়েছে হুঁশিয়ারিও। এরপরও থেমে নেই গণতন্ত্রকামীদের এ আন্দোলন। ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, বরং দিনকে দিন আন্দোলনকারীর সংখ্যা আরও বাড়ছেই। এর মধ্যেই এ আন্দোলন নিয়ে চলছে নানা ষড়যন্ত্র। আন্দোলন নিয়ে ‘ভুল তথ্য’ ছড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। খবর বাংলানিউজের।
হংকং আন্দোলন নিয়ে ‘ভুল তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগে চীনা নাগরিকদের ৯৩৬টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে টুইটার কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ফেসবুক কর্তৃপক্ষও তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে বন্ধ করেছে সাতটি পেজ, তিনটি গ্রুপ ও পাঁচটি অ্যাকাউন্ট।
টুইটার ও ফেসবুকের এ পদক্ষেপের পর একই পদক্ষেপ নিয়েছে গুগলের ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবও। হংকং আন্দোলন নিয়ে ‘ভুল তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগে ২১০টি ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে গুগল কর্তৃপক্ষ। গ বৃহস্পতিবার ইউটিউব এসব চ্যানেল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব চ্যানেল থেকে হংকংয়ের আন্দোলন নিয়ে নানা বিভ্রান্তিমূলক ভিডিও দেওয়া হচ্ছে। যা ষড়যন্ত্রমূলক। এক ব্লগ পোস্টে গুগলের নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মকর্তা শ্যান হান্টলি বলেন, সমপ্রতি হংকং আন্দোলনের ইস্যুতে চীন নিয়ে টুইটার ও ফেসবুক যে পর্যালোচনা করেছে, তারই ধারাবাহিকতায় ইউটিউব চ্যানেল বন্ধের এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে বন্ধ করে দেওয়া এ চ্যানেলগুলো চীনাদের কিনা, এ বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
চীনে ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও হংকংয়ে এ ব্যাপারে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে নিষেধাজ্ঞার পরও বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে চীনা নাগরিকরাও ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহার করে থাকেন। অপরাধ প্রত্যর্পণ বিল বাতিলের দাবিতে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বিক্ষোভে উত্তাল গোটা হংকং। যে বিক্ষোভ এখন মোড় নিয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনে। বিক্ষোভের মুখে অঞ্চলটির প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম বিলটিকে ‘মৃত’ ঘোষণা করলেও বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন এখন আর থামছে না।
অপরাধী প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী, চীন যদি চায় সন্দেহভাজন অপরাধীদের নিজ ভূ-খণ্ডে নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে পারবে। আইনে বলা হয়েছে, বেইজিং, ম্যাকাও ও তাইওয়ান থেকে পালিয়ে আসা কোনো অপরাধীকে ফেরত চাইলে তাকে ফেরত দিতে হবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে হংকংয়ের এক তরুণ তাইওয়ানে এক নারীকে হত্যা করে হংকংয়ে চলে আসেন পালিয়ে। তখন তরুণকে বিচারের মুখোমুখি করতে তাইওয়ান ফেরত চাইলে হংকং আইনি জটিলতার কথা বলে। এ প্রেক্ষাপটে প্রত্যর্পণ আইনটি হংকংয়ের নিজস্ব আইনে প্রণীত করার প্রস্তাব আসে। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত হংকং ১৯৭৭ সালে চীনের অধীনে ফেরার পর থেকে ‘এক রাষ্ট্র দুই নীতি’র অধীনে পরিচালিত। যদিও গত দুই দশক ধরে নানা ইস্যুতে চীন সরকারের সঙ্গে কড়াকড়ি চলছে অঞ্চলটির।