আগামী চার বছরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স), কম্পিউটিং ও ক্লাউড সেবা প্রযুক্তি খাতে দুই ট্রিলিয়ন ডলার আয়ের সুযোগ তৈরি হবে।আর এ বাজারে এগিয়ে থাকতে নিজেদেরকে প্রস্তুত করেছে হুয়াওয়ে। এজন্য খাতটিতে এ সময় প্রতিষ্ঠানটি ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
বুধবার চীনের সাংহাই ওয়ার্ল্ড এক্সপো এক্সিবিশন অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে তিনদিনের এ সম্মেলনের উদ্বোধনী দিনের বিভিন্ন সেশনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়।দিনের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হুয়াওয়ের ডেপুটি চেয়ারম্যান ও রোটেটিং সিইও কেন হু। এবারের সম্মেলনের মূল থিম অ্যাডভান্স ইন্টেলিজেন্স নিয়ে এ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি।
কেন হু বলেন, আমাদের আগামী দিনের পথ চলার মূল লক্ষ্যই হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেন্দ্রিক নানা প্রযুক্তি। ২০২৩ সাল নাগাদ এ খাতের বাজার ২ ট্রিলিয়ন ডলার হবে। হুয়াওয়ে আগামী পাঁচ বছরে ৫০ লাখ ডেভেলপারের জন্য ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এরপর পিসিএল অ্যাডভান্সেস রিসার্চ ফ্রন্টিয়ারস উইথ সুপ্রিম কম্পিউটিং পাওয়ার শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চাইনিজ একাডেমির ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সদস্য।শিল্প উৎপাদনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেন হুয়াওয়ের ক্লাউড বিজনেস ইউনিটের প্রেসিডেন্ট ঝেং ইয়েলাই।
দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন থেকে শুরু করে শিল্পে এরই মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর (এআই) প্রযুক্তির নানাক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে। আগামী দিনগুলোতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ এসডিজির বিভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখবে এআই চাইনিজ টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ে। দিনের দ্বিতীয়ভাগে একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয় হুয়াওয়ে ক্লাউড নিয়ে সেশন। আর সাংহাই এক্সপো সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় আরও দুটি সেশন।
এআই কীভাবে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে তা তুলে ধরেন আলোচকরা। এসডিজির লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে এআইভিত্তিক প্রযুক্তির ব্যবহার উঠে আসে এতে।
হুয়াওয়ের দ্রুত গতিসম্পন্ন এআই ট্রেনিং ক্লাস্টার এটলাস ৯০০
বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত গতিসম্পন্ন এআই ট্রেনিং ক্লাস্টার এটলাস ৯০০ নিয়ে এলো হুয়াওয়ে।
বুধবার চীনের সাংহাইয়ে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী হুয়াওয়ে কানেক্ট-২০১৯ এ ঘোষণা দেয়া হয়।
এতে কম্পিউটিং মার্কেটের জন্য কৌশল ঘোষণাও করা হয়।
এআই কম্পিউটিংয়ের পাওয়ার হাউস হিসেবে এটলাস ৯০০ বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং ব্যবসায়িক উদ্ভাবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এআইকে আরও সহজলভ্য করে তুলবে।
বিগত দশকে হুয়াওয়ে যে প্রযুক্তিগত শক্তির উন্নয়নে কাজ করেছে তার ভিত্তিতে এটলাস ৯০০ ক্লাস্টারটির শক্তি হাজারখানেক অ্যাসসেন্ড প্রসেসরের শক্তির সমান।
রেসনেট-৫০ কে প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য এটলাস ৯০০ মাত্র ৫৯ দশমিক ৮ সেকেন্ড সময় নেয় এবং গ্রহণকৃত এই সময়কে এআই ট্রেনিং পারফরমেন্স পরিমাপের ক্ষেত্রে গোল্ড স্টান্ডার্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এটলাস ৯০০ এর গ্রহণকৃত সময় পূর্বের বিশ্ব রেকর্ডের তুলনায় ১০ সেকেন্ড কম।
এআই কম্পিউটিংয়ের পাওয়ার হাউস হিসেবে এটলাস ৯০০ জ্যোতির্বিজ্ঞান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, অটোনমাস ড্রাইভিং এবং তেল অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং ব্যবসায়িক উদ্ভাবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করবে।
এছাড়াও হুয়াওয়ে এটলাস ৯০০ কে ক্লাস্টার সার্ভিস হিসেবে হুয়াওয়ে ক্লাউডের সঙ্গে যুক্ত করেছে এবং এর ফলে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে বিদ্যমান গ্রাহকদের কাছে আরও সহজলভ্য হবে শক্তিশালী কম্পিউটিং ব্যবস্থাটি।
বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা ইনস্টিটিউটগুলোকে এই পরিসেবা গ্রহণের জন্য ছাড় দেয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে হুয়াওয়ে।
কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে ইন্ডাষ্ট্রি বর্তমানে রুলবেজড প্রক্রিয়া থেকে স্ট্যাটিস্টিক্যাল মডেলের দিকে বিকশিত হচ্ছে, যা মেশিন লার্নিংয়ের মূলভিত্তি।
হুয়াওয়ে অনুমান করছে যে, আগামী পাঁচ বছরে স্ট্যাটিস্টিক্যাল কম্পিউটিং মূলধারার কম্পিউটিং প্রযুক্তি হয়ে উঠবে এবং এআই কম্পিউটিং বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত কম্পিউটিং পাওয়ারের ৮০ শতাংশের বেশি স্থান দখল করবে।
‘কম্পিউটিংয়ের ভবিষ্যৎ বাজার অনেক বৃহৎ, যার মূল্য প্রায় ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার’, এমনটি বলেন হুয়াওয়ের ডেপুটি চেয়ারম্যান কেন হু।
তিনি বলেন, ‘আমরা চারটি মূল ক্ষেত্রকে বিবেচনা করে আমাদের বিনিয়োগ কার্যক্রম চালিয়ে যাব। আমরা বিনিয়োগ করব স্থাপত্যশৈলীতে, সব ক্ষেত্রের প্রসেসরে, স্বচ্ছ ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে এবং একটি ওপেন ইকোসিস্টেম তৈরিতে।’
হুয়াওয়ে কানেক্ট-২০১৯ একটি বার্ষিক ফ্ল্যাগশিপ ইভেন্ট, যা হুয়াওয়ে গ্লোবাল আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির জন্য প্রতিবছর আয়োজন করে। এই বছরের সম্মেলনটির থিম ‘অ্যাডভান্স ইন্টেলিজেন্স’ এবং লক্ষ্য হলো গ্রাহক ও অংশিদারদের জন্য বুদ্ধিমান ভবিষ্যতের জন্য একটি উন্মুক্ত, কো-অপারেটিভ, শেয়ার্ড প্লাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করা।
হুয়াওয়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিতকরণ ও উদ্ভাবনী দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি উন্নত ও সংযুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলাই প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য।
নতুন নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে হুয়াওয়ে একটি পরিপূর্ণ আইসিটি সল্যুশন পোর্টফোলিও প্রতিষ্ঠা করেছে, যা গ্রাহকদের টেলিকম ও এন্টারপ্রাইজ নেটওয়ার্ক, ডিভাইস এবং ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের সুবিধাসমূহ প্রদান করে।
প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ১৭০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলেন সেবা দিচ্ছে, যা বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার সমান। এক লাখ ৮০ হাজার কর্মী নিয়ে বিশ্বব্যাপী টেলিকম অপারেটর, উদ্যোক্তা ও গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করে ভবিষ্যতের তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ তৈরির লক্ষ্যে হুয়াওয়ে এগিয়ে চলেছে।
উল্লেখ্য ২০১৮ সাল শেষে হুয়াওয়ের আয় প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৯ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি।
এছাড়া গবেষণা ও উন্নয়নে (আরঅ্যান্ডডি) বিনিয়োগ মোট বার্ষিক রাজস্বের ১৪.১%, যার ফলেই পণ্য ও সল্যুশনের ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে শীর্ষস্থান নিশ্চিত করতে পেরেছে।
বিশেষ করে ফাইভজি’র ক্ষেত্রে হুয়াওয়ে বিশ্বব্যাপী ৪০টি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে এবং ইতিমধ্যে ৭০ হাজার বেইজস্টেশন হস্তান্তর করেছে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতায় হুয়াওয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে অন্যদের চেয়ে অন্তত ১২ থেকে ১৮ মাস এগিয়ে।