ভারতীয় সেলফোন অপারেটর রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস (আরকম) বড় অংকের ঋণের বোঝা নিয়ে আইনি জটিলতা এবং পাওনাদারদের ঐকমত্যের অভাবে দেউলিয়া হওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেনা পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটি সম্পদ বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। আরকমের সম্পদ কিনতে আগ্রহী ভারতী এয়ারটেল ও ভারতী ইনফ্রাটেলের পাশাপাশি আরো একটি প্রাইভেট ইকুইটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপত্র পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। খবর হিন্দু বিজনেস লাইন।
ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির ছোট ভাই অনিল আম্বানির মালিকানাধীন আরকম কয়েক বছর ধরে খারাপ সময় পার করছে। আরকমের ঋণের বোঝা ৩৩ হাজার কোটি রুপিতে দাঁড়িয়েছে। ভারতের তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ টেলিযোগাযোগ বাজারে বড় ভাই মুকেশ আম্বানি নিয়ন্ত্রিত সেলফোন অপারেটর রিলায়েন্স জিও ইনফোকম, ভারতী এয়ারটেল ও ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের কারণে পিছিয়ে পড়ে আরকম।
ভারতী এয়ারটেল ও ভারতী ইনফ্রাটেলের মতো প্রতিষ্ঠান আরকমের সম্পদ কিনতে দরপত্র জমা দিলেও রিলায়েন্স জিওর পক্ষ থেকে নিলামে অংশ নেয়ার বিষয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে জিওর পক্ষ থেকে নিলামে অংশ নিতে দরপত্র জমা দেয়ার সময়সীমা ১০ দিন বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
১১ নভেম্বর আরকমের সম্পদ ক্রয়ের দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ছিল। নিলাম আয়োজনের বিষয়ে গতকালই প্রতিষ্ঠানটির পাওনাদারদের বসার কথা ছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা দরপত্র জমা দেয়ার বিষয়ে জিওর আহ্বানে সাড়া দেয়া হবে কিনা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিষয়টি ঘিরে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যায়নি।
আরকমের পাওনাদার তালিকায় রয়েছে প্রায় ৪০টি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, দ্য চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়না উল্লেখযোগ্য ঋণদাতা।
আরকমের সম্পদ ক্রয়ে নিলামে অংশ নেয়ার বিষয়ে ভারতী এয়ারটেলের এক মুখপাত্র বলেন, প্রাথমিকভাবে তারা স্পেকট্রাম হস্তগত করতে শর্তসাপেক্ষ এ নিলামে অংশ নিতে দরপত্র জমা দিয়েছে।
২০১৭ সালের মার্চে শেষবার নিজেদের দেনা-সংক্রান্ত তথ্য জনসমক্ষে এনেছিল আরকম। ওই সময় তাদের ব্যাংকঋণের পরিমাণ ছিল ৭০০ কোটি ডলার। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির কাছে এরিকসনসহ বিভিন্ন ভেন্ডরের বড় অংকের অর্থ পাওনা রয়েছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতেও প্রায় দুই বছর ধরে দেনা পরিশোধ ও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে আসছিল আরকম। এজন্য অনিল আম্বানি রিলায়েন্স জিওর কাছে সম্পদ বিক্রির চেষ্টা চালায়। তবে জিও আরকমের দেনার দায় নিতে রাজি না হওয়ায় ভারতের ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমিউনিকেশন উভয় প্রতিষ্ঠানের স্পেকট্রাম লেনদেনের চুক্তিতে আপত্তি জানায়। এতে আরকম দেনা পরিশোধ নিয়ে নতুন ঝামেলায় পড়ে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দেনার সমস্যা মোকাবেলায় প্রতিষ্ঠানটি ভারতের ন্যাশনাল কোম্পানি ল’ ট্রাইব্যুনালের (এনসিএলটি) দ্বারস্থ হয়।
ওই সময় এক বিবৃতিতে আরকমের পক্ষ থেকে বলা হয়, টানা দুই বছর চেষ্টার পরও পাওনাদারদের কোনো অর্থ পরিশোধ করা যায়নি। দেনা পরিশোধে এখন পর্যন্ত বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি। বিভিন্ন আইনি জটিলতা ও পাওনাদারদের মাঝে ঐকমত্যের অভাবে প্রতিষ্ঠানটির সম্পদ বিক্রিও আটকে গেছে।
এর আগে এরিকসনও পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়া আরকমকে দেউলিয়া ঘোষণার জন্য এনসিএলটির কাছে আবেদন করে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কিছুদিন আগে আরকম নিজেই দেউলিয়া আদালতের দ্বারস্থ হয়। আরকমের এ পদক্ষেপের কারণে রিলায়েন্স জিওর কাছে স্পেকট্রাম ও টেলিকম টাওয়ার এবং কানাডার ব্রুকফিল্পের কাছে অন্যান্য সম্পদ বিক্রির চুক্তি বাতিল হয়ে যায়।
ঋণে জর্জরিত আরকম শুরু থেকে জিওর কাছে সম্পদ বিক্রির বিষয়টি এগিয়ে নিতে আগ্রহী ছিল। এজন্য প্রধান ঋণদাতা স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমতিও পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে দেউলিয়া ঘোষণার পদ্ধতি জটিল হওয়ায় আরকমের সম্পদ কিনতে জিওকে নতুন করে নিলামে অংশ নিতে হবে। এতে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও নিলামে অংশ নিতে পারবে।