সব সরকারি দপ্তর ও সরকার নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য সংস্থায় বিদেশী প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ করার চিন্তাভাবনা করছে চীন। এজন্য এসব দপ্তরে নতুন করে বিদেশী কোম্পানির তৈরি কোনো হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার কেনা হবে না। এমনকি আগে থেকে ব্যবহার হওয়া বিপুল পরিমাণ হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার পর্যায়ক্রমে বদলে ফেলবে চীন সরকার। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বাজার সুরক্ষায় চীন সরকার এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হলে চীনের ক্রমবিকাশমান প্রযুক্তি বাজারে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো চাপের মুখে পড়তে পারে। খবর সিএনএন ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
চীন সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চীনজুড়ে সরকারি ও সরকার নিয়ন্ত্রিত দপ্তরগুলো থেকে বিদেশী হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবহার বন্ধ করতে তিন বছরের সময়সীমা গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে এসব দপ্তর থেকে সব ধরনের বিদেশী হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সরিয়ে ফেলা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো থেকে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, সেলফোন, প্রিন্টার, স্ক্যানারসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রায় তিন কোটি ডিভাইস বদলে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে এসব দপ্তরের জন্য নতুন করে বিদেশী কোম্পানির তৈরি করা কোনো হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার কেনা হবে না।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে চীন সরকারের এ পরিকল্পনাকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্টেট কাউন্সেলরের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। আসেনি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন সরকারের এ পরিকল্পনা চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে এগিয়ে থাকার একটি কৌশল। প্রায় দুই বছর ধরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে আছে। একে অন্যের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন ও বেইজিং। আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসন না হলে আগামী দিনগুলোয় বাড়তি শুল্কের আওতায় পণ্যের তালিকা আরো দীর্ঘ হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে চীনের সরকারি দপ্তরে বিদেশী কোম্পানির তৈরি প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহার বন্ধের কৌশল দেশটিতে বাণিজ্যযুদ্ধের দামামায় এক ধাপ এগিয়ে দেবে। কেননা চীনের প্রযুক্তি বাজার দ্রুত বড় হচ্ছে। ক্রমবিকাশমান এ বাজারের অন্যতম ক্রেতা দেশটির সরকারি দপ্তরগুলো। নতুন এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো চীনের প্রযুক্তি বাজারের বড় হিস্যা হারাতে পারে।
একই সঙ্গে নতুন এ পরিকল্পনা চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য সুসংবাদ বয়ে আনবে বলে মনে করছেন নিউইয়র্কভিত্তিক ওনাডা করপোরেশনের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বাজার বিশ্লেষক জেফরি হ্যালি। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে ‘মেড ইন চায়না’ নীতি বাস্তবায়নে বেইজিং বদ্ধপরিকর। এ নীতির আওতায় সরকারি দপ্তরগুলোয় বিদেশী কোম্পানির বদলে নিজেদের তৈরি প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটি। এতে চীনের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজার বড় হবে। প্রযুক্তি খাতে দেশটি আরো স্বনির্ভর হবে।
তিনি আরো বলেন, নিজেদের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকির সুর তুলে চীনা টেক জায়ান্ট হুয়াওয়ের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বেইজিংকে প্রযুক্তি খাতে স্বনির্ভর হতে উৎসাহ জুগিয়েছে। চীন মনে করছে, নিজেদের তৈরি প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহারে একদিকে যেমন স্বনির্ভর হওয়া যাবে; অন্যদিকে এইচপি, ডেল, মাইক্রোসফটের মতো চীন সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করা পশ্চিমা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে পরোক্ষভাবে চাপে ফেলা যাবে। মূলত এ কারণে তিন বছরের মধ্যে সরকারি দপ্তরে নিজস্ব প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাইছে চীন। পরবর্তী সময়ে হয়তো দেশটি বেসরকারি দপ্তরের জন্যও একই নীতি চালু করতে পারে।