মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে স্মার্টফোন আসক্তি নিয়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে, স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের দেহ-মনের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে কর্মস্থলে এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যায়। ব্যতিক্রম নন ভারতীয়রাও। দিন দিন তাদের মধ্যেও স্মার্টফোনের ব্যবহার রীতিমতো আসক্তির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। চীনা টেক জায়ান্ট ভিভো ও সাইবারমিডিয়া রিসার্চের (সিএমআর) এক যৌথ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয়রা তাদের কর্মঘণ্টার এক-তৃতীয়াংশ সময় স্মার্টফোনে কাটিয়ে দেন এবং সিংহভাগই বিশ্বাস করেন, এ ধরনের প্রবণতা তাদের দেহ-মনের জন্য ক্ষতিকারক। এর পরও তারা স্মার্টফোনের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। খবর এনডিটিভি ও ইকোনমিক টাইমস।
বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার দুই হাজার ভারতীয়র মধ্যে স্মার্টফোনের ব্যবহার নিয়ে যৌথভাবে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে সিএমআর ও ভিভো। তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ নারী ও ৬৪ শতাংশ পুরুষ। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে একজন ভারতীয় নারী কিংবা পুরুষ তার কর্মঘণ্টার এক-তৃতীয়াংশ স্মার্টফোনে কাটিয়ে দেন। সেই হিসাবে একজন ভারতীয় প্রতি বছর সব মিলিয়ে ১ হাজার ৮০০ ঘণ্টা নিজেকে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে আবদ্ধ রাখেন। তারা স্মার্টফোনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে ভীষণ পছন্দ করেন। জরিপে অংশ নেয়া অর্ধেকের বেশি ভারতীয় জানিয়েছেন, তারা কখনই স্মার্টফোনে চালু থাকা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, টুইটারের মতো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে বেরিয়ে আসেন না বা লগ-আউট করেন না। এবং তারা কেউই স্মার্টফোন ছাড়া পুরো একটি দিন কাটিয়ে দেয়ার কথা চিন্তাও করতে পারেন না। জরিপে অংশ নেয়া ৩০ শতাংশের বেশি ভারতীয় স্মার্টফোন আসক্তির জের ধরে মাসে একাধিকবার প্রিয়জনদের সঙ্গে দেখা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।
ভারতীয়দের মধ্যকার এমন স্মার্টফোনপ্রীতি রীতিমতো আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ আসক্তি তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রাত জেগে স্মার্টফোনে বুঁদ হয়ে থাকায় কমছে কর্মক্ষমতা। কর্মস্থলেও স্মার্টফোনে আঙুলের ছোঁয়া বাড়িয়ে তুলছে আর্থিক ক্ষতি। বাড়ছে একাকিত্বে ভোগা মানুষের সংখ্যা। বাড়ছে বিষণ্নতা। বিঘ্ন ঘটছে সাবলীল সামাজিক জীবনে। জরিপে অংশগ্রহণকারী চারজনের মধ্যে তিনজন ভারতীয় মনে করছেন, স্মার্টফোন আসক্তি তাদের সুস্থ শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য দিন দিন হুমকি হয়ে উঠছে। এর পরও তারা স্মার্টফোন আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না।
এ বিষয়ে সিএমআরের ইন্ডাস্ট্রি ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের প্রধান প্রভুরাম বলেন, স্মার্টফোনের প্রতি ভারতীয়রা ভীষণ রকম নির্ভরশীল, এটা এ প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয়েছে। দিন দিন এ নির্ভরশীলতা বাড়ছে। তবে এটা স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বড় একটি হুমকি। ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে ভালো থাকতে এ আসক্তি কমিয়ে আনা জরুরি। মানুষকে বুঝতে হবে, হাতে থাকা স্মার্টফোনটি কখন সুইচড-অফ করতে হবে।
ভিভো ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর অব ব্র্যান্ড স্ট্র্যাটেজি নিপুণ মারওয়া বলেন, বর্তমান প্রজন্ম ইন্টারনেট সম্প্রসারণের যুগে জন্ম নিয়েছে। তাদের ধ্যান-জ্ঞান ইন্টারনেটকেন্দ্রিক। কোনোভাবেই তাদের ইন্টারনেট বিমুখ করা সম্ভব নয়। তবে আসক্তি এড়াতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময় ইন্টারনেট কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য বরাদ্দ রাখলে আসক্তি অনেকটাই কমে আসবে। সাশ্রয় হবে কর্মঘণ্টা। উৎপাদনশীলতার অপচয় কমিয়ে আর্থিক লোকসান কমানোও সম্ভব হবে।