জাপান ডিসপ্লে ইনকরপোরেশন নিজেদের প্রধান স্মার্টফোন স্ক্রিন কারখানা বেচতে প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল ইনকরপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি শার্প করপোরেশনের কাছেও কারখানাটি ক্রয়ের আহ্বান জানিয়েছে। কারখানাটি বিক্রির জন্য ৮ থেকে ৯ হাজার কোটি ইয়েন (৭৩ থেকে ৮২ কোটি ডলার) মূল্য প্রত্যাশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল নিক্কেই বিজনেস ডেইলি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানায়।
জাপানভিত্তিক অন্যতম ডিসপ্লে নির্মাতা জাপান ডিসপ্লে খারাপ সময় পার করছে। অর্থ সংকটে থাকা প্রতিষ্ঠানটি চলতি মাসেই জানায়, তাদের এক বৃহৎ ডিসপ্লে ক্রেতার কাছ থেকে তারা ২০ কোটি ডলার অর্থসহায়তা পেতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, এ বৃহৎ ডিসপ্লে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি হলো আইফোন নির্মাতা অ্যাপল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে অ্যাপলের কাছ থেকে আর্থিক সমর্থন পাওয়া নিয়ে আলোচনা হলেও এখন কারখানাটির নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। জাপান ডিসপ্লে বিক্রি করতে যাওয়া কারখানাটি স্থাপনে চার বছর আগে অ্যাপলের কাছ থেকে ৮০ থেকে ১৫০ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা পেয়েছিল। গতকাল প্রধান স্মার্টফোন স্ক্রিন উৎপাদন কারখানা বিক্রির খবর প্রকাশের পর জাপান ডিসপ্লের শেয়ারদর বেড়েছে ৪ দশমিক ১ শতাংশ।
এদিকে শার্প করপোরেশনের এক বিবৃতিতে কারখানাটি ক্রয়ের অনুরোধ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা জাপান ডিসপ্লের হাকুসান স্মার্টফোন স্ক্রিন উৎপাদন কারখানা ক্রয়ের প্রস্তাব সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে কারখানাটি অধিগ্রহণের ফলে বর্তমান ও ভবিষ্যতে নিজেদের আয়ে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা সে বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি এ অধিগ্রহণের ফলে বাড়তি কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি হবে কিনা সেটাও বিবেচনা করা হচ্ছে।
জাপান ডিসপ্লে পাঁচ বছর ধরে লোকসানে রয়েছে এবং গত মাসে টানা একাদশ প্রান্তিক ধরে লোকসানের তথ্য দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ডিসপ্লে প্যানেল বিক্রি কমে যাওয়া ও পুনর্গঠিত মূল্যের কারণে লোকসানে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও (এপ্রিল-জুন) অ্যাপলের অন্যতম পণ্য সরবরাহকারী জাপান ডিসপ্লের লোকসান ৮৩ দশমিক ২৭ বিলিয়ন জাপানিজ ইয়েনে পৌঁছেছে, যা এক বছর আগে একই প্রান্তিকে ছিল ১ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন জাপানিজ ইয়েন।
জাপান ডিসপ্লে স্মার্টফোনের লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে (এলসিডি) নির্মাতা। এর অর্ধেকের বেশি রাজস্ব আসে অ্যাপলের কাছ থেকে। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে আইফোন বিক্রি ১২ শতাংশ কমার তথ্য দিয়েছে অ্যাপল। ফলে আইফোন বিক্রি থেকে প্রতিষ্ঠানটির রাজস্ব কমে ২ হাজার ৫৯৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে জাপান ডিসপ্লের রাজস্ব আয়ে।
গত জুনে ধুঁকতে থাকা জাপান ডিসপ্লেকে উদ্ধারে এগিয়ে আসে অ্যাপল। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটিতে ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি।
জানা যায়, গত বছর অ্যাপল আইফোনের ডিসপ্লে প্রযুক্তি পরিবর্তন করার কারণে চরম আর্থিক সংকটে ভুগছে জাপান ডিসপ্লে। ২০১৮ সালে অ্যাপলের লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে (এলসিডি) প্রযুক্তির ডিসপ্লের একমাত্র ও সর্বশেষ মডেল ছিল আইফোন এক্সআর। কিন্তু মডেলটি বাজারে খুব কম বিক্রি হওয়ায় অ্যাপল এলসিডি প্রযুক্তি ছেড়ে অ্যামোলেড প্রযুক্তিতে চলে গেছে। যে কারণে জাপান ডিসপ্লের এলসিডি প্যানেলের কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অ্যামোলেড ডিসপ্লের নতুন প্লান্ট স্থাপনের প্রক্রিয়া চললেও অর্থাভাবে বেশি দূর এগোতে পারেনি। যেখানে কোম্পানির ৬০ শতাংশ রাজস্বই আসত অ্যাপলের কাছ থেকে।
জাপান ডিসপ্লে ব্যবসা রক্ষায় চীনা-তাইওয়ান কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিল। কিন্তু কনসোর্টিয়ামের সদস্যরা নতুন করে কোম্পানির সম্ভাবনা যাচাই করতে গিয়ে বিলম্ব করে ফেলে। ৭৪ কোটি ১০ লাখ ডলারের এ বেইলআউট চুক্তি চূড়ান্তে গত জুনেই চীনা দুই কোম্পানির সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই তাইওয়ানের কোম্পানি টিপিকে হোল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড এবং সিজিএল গ্রুপ আলোচনা থেকে সরে যায়। ওই পরিস্থিতিতে অ্যাপলের ১০ কোটি ডলার বিনিয়োগের খবর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা টিকিয়ে রাখার ইতিবাচক খবর হয়ে এসেছিল, যা এখন অধিগ্রহণ পর্যায়ে পৌঁছাতে যাচ্ছে।