বিশ্বব্যাপী দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে পঞ্চম প্রজন্মের ফাইভজি নেটওয়ার্ক। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোনের চাহিদাও। আগামী দিনগুলোয় ফাইভজি ডিভাইসের চাহিদা আরো বাড়বে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে এরই মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানি ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন নিয়ে বাজারে হাজির রয়েছে। বিদায়ী বছরে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে ফাইভজি ডিভাইস নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছিল স্মার্টফোন নির্মাতারা। এ প্রতিযোগিতায় লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হয়েছে দক্ষিণ কোরীয় জায়ান্ট স্যামসাং। ২০১৯ সালে লক্ষ্যের বেশি ফাইভজি স্মার্টফোন বিক্রি করেছে কোম্পানিটি। খবর সিএনএন ও সিএনবিসি।
ফাইভজি নেটওয়ার্কের পরীক্ষামূলক সূচনা হয় দক্ষিণ কোরিয়ায়। গত বছর ইউরোপ-আমেরিকায় এ নেটওয়ার্কের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হতে দেখা গেছে। তবে ফাইভজির বিস্তৃতিতে বড় অবদান রেখেছে চীন। বেইজিং, সাংহাইসহ দেশটির ৫০টি বড় শহরে একযোগে এ নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সীমানা ছাড়িয়ে চীন, ইউরোপ, আমেরিকায়ও স্যামসাং তুমুল জনপ্রিয়। এ কারণে কোম্পানিটি আগে থেকেই ফাইভজি স্মার্টফোনের বাজারে নিজস্ব ডিভাইস নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
স্যামসাংয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে ৪০ লাখ ইউনিট ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে বছর শেষে এ লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে। গত বছর বিশ্বজুড়ে গ্রাহকদের হাতে ৬৭ লাখ ইউনিট ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন তুলে দিতে পেরেছে স্যামসাং। অর্থাৎ লক্ষ্যের অতিরিক্ত ২৭ লাখ ইউনিট ফাইভজি স্মার্টফোন বিক্রি করেছে কোম্পানিটি। এর মধ্য দিয়ে ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোনের বৈশ্বিক বাজার হিস্যার ৫৪ শতাংশ দখলে নিয়েছে স্যামসাং। মূলত দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে সবচেয়ে বেশি ফাইভজি ডিভাইস বিক্রি করেছে স্যামসাং। বাড়তি চাহিদা ছিল চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বাজারেও।
আগাম বাজার দখলের লড়াইয়ে নামা ফাইভজি ডিভাইসের বাজারে স্যামসাংকে এক ধাপ এগিয়ে রেখেছে বলে মনে করছেন টেক বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ কোরিয়ায় ফাইভজি নেটওয়ার্ক বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গেই নতুন ডিভাইস হাজির করে কোম্পানিটি। এ সময় স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এস১০ সিরিজের ডিভাইস তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। অল্প সময়ের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এস১০ সিরিজের জনপ্রিয়তা।
এর বিপরীতে ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোনের ঘোষণা দিতে মার্কিন টেক জায়ান্ট অ্যাপলের অনেকটা সময় লেগেছে। তবে অ্যাপল তুলনামূলক পিছিয়ে থাকলেও এ খাতে চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা হুয়াওয়ে, শাওমি স্যামসাংয়ের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত রয়েছে। তবে চীনা জায়ান্ট হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে চলমান মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এ খাতে স্যামসাংকে বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে হুয়াওয়ের ডিভাইস বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। এর বিপরীতে ক্রেতারা অনেকেই বিকল্প হিসেবে স্যামসাংয়ের পণ্য কিনছেন। স্যামসাংয়ের ফাইভজি সমর্থিত ডিভাইস বিক্রি বাড়ার পেছনে এটাও বড় একটি কারণ।
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া স্যামসাংয়ের ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোনগুলোর মধ্যে রয়েছে নোট ১০, নোট ১০ প্লাস, এ৯০ ও গ্যালাক্সি ফোল্ড। এসব ডিভাইসের সফলতার ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্যামসাং বাজারে আনছে তাদের প্রথম ফাইভজি সমর্থিত ট্যাবলেট। গ্যালাক্সি ট্যাব এস৬ নামের এ ডিভাইস শুরুতে দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে ছাড়া হবে। পরে এশিয়ার অন্যান্য দেশ এবং ইউরোপ-আমেরিকায় পাওয়া যাবে ট্যাবটি। আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি আরো এক গুচ্ছ ডিভাইস বাজারে আনছে স্যামসাং। এ সময় কোম্পানির ফ্ল্যাগশিপ সিরিজ এস২০ বাজারে ছাড়া হবে। এ সিরিজের ডিভাইসগুলোও ফাইভজি সমর্থিত।
এক বিবৃতিতে স্যামসাং মোবাইলের কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান গবেষক টিএম রোহ বলেন, পঞ্চম প্রজন্মের ফাইভজি নেটওয়ার্কের আওতায় নতুন নতুন ডিভাইস বাজারে আনতে পেরে আমরা আনন্দিত। আগামীতে গ্রাহকরা স্যামসাংয়ের ফাইভজি ডিভাইসে এমন সব সেবা পাবেন, যা আগে ভাবেননি।