চীনভিত্তিক অপোর সাব-ব্র্যান্ড হিসেবে রিয়েলমির যাত্রা হয়। ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। অপো থেকে পৃথক হয়ে স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড হিসেবে কার্যক্রম শুরুর প্রথম বছরে ২ কোটি ৫০ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন সরবরাহ করে বাজারে সাড়া ফেলেছে রিয়েলমি।
এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চলতি বছর পাঁচ কোটি ইউনিট স্মার্টফোন সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। রিয়েলমির পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার নিজেদের প্রথম ফাইভজি ডিভাইস উন্মোচন মঞ্চে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। খবর রয়টার্স।
বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে সাশ্রয়ী মূল্যের (১০০-৩০০ ডলার) স্মার্টফোন সরবরাহ করে অন্য ব্র্যান্ডগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে রিয়েলমি। চলতি বছরও সাশ্রয়ী ডিভাইস সরবরাহ করে নিজেদের অবস্থান আরো দৃঢ় করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
রিয়েলমি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের তকমা দখলে নিয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ ও ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোন বাজার ভারত। বাজারটিতে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে রিয়েলমি। আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরুর প্রথম বছরেই ভারতে ১ কোটি ৫০ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রিতে সক্ষম হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। রিয়েলমি এখন চীনের বাজারে আধিপত্য বাড়াতে কাজ করছে। চীনে ফাইভজি মোবাইল নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে স্থানীয় বাজারে ফাইভজি ফোন উন্মোচন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চীনে রিয়েলমির ‘এক্স৫০ ফাইভজি’ স্মার্টফোনের দাম ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৯৯ ইউয়ান (৩৬০ ডলার)। নিজেদের প্রথম ফাইভজি স্মার্টফোনের ক্ষেত্রেও সাশ্রয়ী মূল্যনীতি অনুসরণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
রিয়েলমি চলতি বছর শুধু ভারতে তিন কোটি স্মার্টফোন বিক্রি করতে চায়। বাজারটিতে শুরু থেকে চীনা ব্র্যান্ড ভিভো ও অপোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে রিয়েলমি। ভিভো ও অপোর মতোই অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে বিপণন ও অফলাইন ডিস্ট্রিবিউশন বিনিয়োগে গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারতে ব্যবসা বাড়াতে বাজার দখলে শীর্ষে থাকা শাওমিকে অনুসরণ করছে রিয়েলমি।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশনের (আইডিসি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ভারতের বাজারের ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ দখলে নিয়ে চতুর্থ শীর্ষ স্মার্টফোন ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে রিয়েলমি। একই প্রান্তিকে ভারতের স্মার্টফোন বাজারের ২৭ দশমিক ১ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে শাওমি। এছাড়া ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ বাজার দখল নিয়ে দেশটিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং। অথচ ২০১৮ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিক শেষে ভারতের স্মার্টফোন বাজারে রিয়েলমির দখল ছিল মাত্র ৩ দশমিক ১ শতাংশ।
শুধু ভারতের বাজারেই নয়; চীনের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, রাশিয়া ও ইউরোপের বাজারের ২০ শতাংশ দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে রিয়েলমি। জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে প্রতিষ্ঠানটির ডিভাইস সরবরাহ এক কোটি ইউনিটে পৌঁছেছে। রিয়েলমি সি২, রিয়েলমি ৩আই ও রিয়েলমি ৫-এর মতো প্রতিষ্ঠানটির আরো কয়েকটি ডিভাইস একাধিক বাজারে সর্বাধিক বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের তকমা দখলে নিয়েছে।
এ বিষয়ে রিয়েলমি ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাধব শেঠ বলেন, কার্যক্রম শুরুর প্রথম বছরে তারা বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে সপ্তম শীর্ষ অবস্থানে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। চলতি মাস শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে অপো থেকে পৃথক হয়ে কার্যক্রম শুরুর প্রথম বছরপূর্তি উদযাপন করা হবে। রিয়েলমি গত দীপাবলির সময় এক মাসে ভারতে ৫২ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন বিক্রিতে সক্ষম হয়।
তিনি বলেন, আমরা এখন ভারতে অফলাইনে বিক্রির জন্য একটি বিশেষ সিরিজের ডিভাইস উন্মোচনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি। শিগগিরই এ সিরিজের ডিভাইসের নাম জানানো হবে। সিরিজটির হ্যান্ডসেটগুলো মাঝারি-প্রিমিয়াম রেঞ্জের হবে। আমরা ডিভাইসের ব্যাটারির আয়ুষ্কাল এবং উন্নত ফিচারের মাধ্যমে ক্রেতাদের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি। ক্রেতাদের ভিন্ন অভিজ্ঞতা দিতে রিয়েলমির ফোনগুলোর ডিজাইনে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। বৈশ্বিক বাজারে এখন মোট চারটি সিরিজের স্মার্টফোন সরবরাহ করছে রিয়েলমি। এগুলো হলো সি সিরিজ, নম্বর সিরিজ, প্রো ও এক্স সিরিজ।
শাওমির মতো শুরু থেকে অনলাইনে ডিভাইস বিক্রির কার্যক্রমে গুরুত্ব দিয়ে আসছে রিয়েলমি। ব্র্যান্ডটি তাদের সবচেয়ে বড় বাজার ভারতে ই-কমার্স সাইট ফ্লিপকার্টে ডিভাইস বিক্রিতে শীর্ষ অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে। এছাড়া দেশটিতে সামগ্রিকভাবে অনলাইনে ডিভাইস বিক্রির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এখন অফলাইনেও ডিভাইস বিক্রি বাড়ানোতে গুরুত্ব দিচ্ছে। রিয়েলমি তাদের ৭০ শতাংশ ডিভাইস অনলাইনে বিক্রি করতে চায় এবং বাকি ৩০ শতাংশ অফলাইনে বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।