বৈশ্বিক বাজারে চলতি বছর পার্সোনাল কম্পিউটার (পিসি), ট্যাবলেট ও মোবাইল ডিভাইসের সরবরাহ গত বছরের চেয়ে দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ২১৬ কোটি ইউনিটে পৌঁছবে। বিশ্বব্যাপী পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন সরবরাহে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। খবর ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিস।
গার্টনারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর মোট যত সংখ্যক ইউনিট মোবাইল ফোন সরবরাহ হবে, তার ১২ শতাংশ থাকবে ফাইভজি সমর্থিত মডেল। এছাড়া ২০২২ সাল নাগাদ বৈশ্বিক বাজারে যত সংখ্যক ইউনিট মোবাইল ফোন সরবরাহ হবে তার ৪৩ শতাংশই ফাইভজি সমর্থিত মডেল হবে।
গার্টনারের জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক রঞ্জিত আটওয়াল বলেন, গত বছরের পুরোটা স্মার্টফোন বাজারের জন্য খারাপ গেছে। ২০১৮ সালের চেয়ে গত বছর স্মার্টফোন সরবরাহ ২ শতাংশ কমেছে। তবে চলতি বছর বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজার কিছুটা সরবরাহ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে। মোবাইল ডিভাইস; বিশেষ করে স্মার্টফোন সরবরাহ প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে ফাইভজি নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি। এরই মধ্যে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ কিছু টেলিযোগাযোগ বাজারে ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। সেলফোন অপারেটরগুলো দ্রুতগতির এ নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিতে সেবা দিতে কার্যক্রম জোরদার করেছে। ফাইভজির সুযোগ-সুবিধা পেতে প্রয়োজন ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন। যে কারণে ব্যবহারকারীদের মধ্যে ডিভাইস পরিবর্তনের প্রবণতা বাড়বে, যা বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারকে টানা কয়েক বছর পর প্রবৃদ্ধির ধারায় ফেরাবে।
বৈশ্বিক বাজারে গত বছর পিসি, ট্যাবলেট ও মোবাইল ফোন সরবরাহ ২১৫ কোটি ইউনিটে পৌঁছেছিল। এককভাবে বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে চলতি বছর ১ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বৃহত্তর চীন ও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের উদীয়মান ডিভাইস বাজারগুলো।
টেলিযোগাযোগ খাতের গুরুত্বপূর্ণ বাজার চীন একযোগে অর্ধশতাধিক শহরে ফাইভজি চালু করেছে। এরই অংশ হিসেবে দেশটিতে ফাইভজি ফোনের চাহিদা বেড়েছে। বিভিন্ন ডিভাইস ব্র্যান্ড গত বছরের শেষ মাসে চীনে ৩৫টি মডেলের নতুন ফাইভজি স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে। একই সময় দেশটিতে সরবরাহকৃত মোট স্মার্টফোনের মধ্যে ৫৪ লাখ ১৪ হাজার ইউনিট ফাইভজি স্মার্টফোন ছিল। এছাড়া গত ডিসেম্বরে চীনের ব্র্যান্ডগুলো আরো ১১টি নতুন ফাইভজি ফোন উন্মোচনের জন্য তালিকাভুক্ত করেছে। সামগ্রিকভাবে গত বছর দেশটিতে স্মার্টফোন সরবরাহ ৩৮ কোটি ৯০ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে এবং বছরজুড়ে ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন বিক্রি ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ইউনিটে পৌঁছেছে।
চীনে পাওয়া যাচ্ছে এমন ফাইভজি স্মার্টফোনগুলো হলো—জিটিই অ্যাক্সন ১০ প্রো ফাইভজি, হুয়াওয়ে মেট ২০এক্স ফাইভজি, হুয়াওয়ে মেট ৩০ সিরিজ, হুয়াওয়ে মেট এক্স (ফোল্ডিং), অনার ভি৩০ সিরিজ, চায়না মোবাইল পাইওনিয়ার এক্স১, ভিভো আইকিউওও প্রো ফাইভজি, ভিভো নেক্স৩ ফাইভজি, স্যামসাং নোট ১০ প্লাস ফাইভজি, শাওমি মি৯ প্রো ফাইভজি, হুয়াওয়ে নোভা ৬ ও অপো রেনো৩ প্রো ইত্যাদি।
চলতি বছর চীনের স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর ডিভাইস সরবরাহে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে, যা গত বছরের চেয়ে দশমিক ৭ শতাংশ বেশি হতে পারে। এছাড়া দেশটিতে ফাইভজি স্মার্টফোন সরবরাহে গত বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে।
‘চায়না মোবাইল ২০২০ টার্মিনাল প্রডাক্ট প্ল্যান’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর চীনের ফাইভজি স্মার্টফোন বাজারের আকার ১৫ কোটি ইউনিটে পৌঁছবে। এছাড়া চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ফাইভজি ফোনের দাম এখনকার চেয়ে এক-দেড় হাজার চাইনিজ ইউয়ান কমবে, যা বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারের প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।