যুক্তরাজ্যের ১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের প্রায় অর্ধেকেরই কাছে রয়েছে ব্যক্তিগত স্মার্টফোন। দিনের অনেকটা সময় তারা এই যন্ত্রবন্ধুটির পেছনে নষ্ট করে। আর ৩ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের ২৪ শতাংশের ফোন না থাকলেও আছে ব্যক্তিগত ট্যাব। এসমস্ত তথ্য উঠে এসেছে টেলিযোগাযোগ সংস্থা অফিস অব কমিউনিকেশনের (অফকম) একটি গবেষণায়।
অফকমের বার্ষিক সমীক্ষায় শিশুদের ফোন, ট্যাব এবং বিভিন্ন মিডিয়া ব্যবহারের ধরন পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৩ হাজার ২০০ শিশু ও তাদের বাবা-মায়ের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মাত্র ৫ থেকে ৭ বছরের শিশুদের হাতেও পৌঁছে গেছে ব্যক্তিগত ফোন। আর ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের ৮৩ শতাংশ ব্যবহার করে নিজস্ব ফোন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম স্ন্যাপচ্যাট এবং ফেসবুকে সক্রিয় থাকতেই তারা ফোন বেশি ব্যবহার করে। যদিও সম্প্রতি ৬২ শতাংশ হোয়াটস অ্যাপেই বেশি সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। তুলনামূলক বেশি বয়সী শিশুরা বিভিন্ন সামাজিক ইস্যু বা সংগঠনকে সমর্থন দিতে সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। এ প্রবণতাকে ‘গ্রেটা প্রভাব’ বলে বর্ণনা করেছে অফকম। ১৭ বছর বয়সী পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের নামেই এ নামকরণ।
৩ থেকে ৪ বছরের শিশুদের ২৪ শতাংশের ফোন না থাকলেও আছে ব্যক্তিগত ট্যাব। যারা ভিডিও দেখার কাজেই মূলত এটি ব্যবহার করে। এদের ১৫ শতাংশ ঘুমানোর সময়ও বিছানার পাশে ট্যাব রাখার অনুমতি পায়।
৫ থেকে ১৫ বছর বয়সীরা অনলাইন গেমস খেলে কাটিয়ে দেয় দিনের অনেকখানি সময়। এর মধ্যে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় কম খেলে, তাও তাদের ৪৮ শতাংশ আর ছেলেদের ৭১ শতাংশই গেমসের পোকা। ছেলেরা সপ্তাহে সাড়ে চৌদ্দ ঘণ্টারও বেশি সময় গেমস খেলে পার করে। মেয়েরা খেলে সাড়ে সাত ঘণ্টা।
যত যাই হোক টেলিভিশনের আবেদন এখনো তুঙ্গে। ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের ৯৯ শতাংশ টেলিভিশন দেখে। স্মার্টস্পিকার ব্যবহরের ক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। স্মার্ট স্পিকার ব্যবহর করে এই বয়সী ২৭ শতাংশ আর রেডিও শোনে ২২ শতাংশ।
৮০ শতাংশ শিশু ফোন বা ট্যাবে নিজের পছন্দানুযায়ী ভিডিও দেখে। টিভিতে প্রচারিত সরাসরি অনুষ্ঠানে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই ২৫ শতাংশের। নয় বছর বয়সী এক মেয়ের অভিযোগ, সে টিভিতে তার পছন্দের চ্যানেল পায় না।
শিশুদের ইন্টারনেট আসক্তি নিয়ে অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন আসছে। সাক্ষাৎকার নেয়া অভিভাবকদের ৪৫ শতাংশ মনে করেন, ইন্টারনেট ব্যবহারে শিশুদের ক্ষতির চেয়ে উপকারই বেশি হচ্ছে। তবে ব্যবহারের বিষয়ে বাবা-মাকে সচেতন থাকার কথাও তারা জানান। তবে নিজের ক্ষতি করে এমন কোনো কনটেন্ট শিশু ইন্টারনেটে দেখছে কিনা এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।
অন্যদিকে ৪৭ শতাংশ মনে করেন, বিভিন্ন গেমস, টুলস এসবের পেছনে বিনা কারণে অর্থ নষ্ট হয়। এদের সবার শিশুরই বয়স ৫ থেকে ১৫ বছর। ৮৭ শতাংশ বাবা-মা শিশুদেরর অনলাইন সুরক্ষা বিষয়ে পরামর্শ নেন। ৫-১৫ বছর বয়সী শিশুদেরত বাবা-মায়ের ৮৭ শতাংশই সন্তানকে অনলাইনে কীভাবে নিরাপদ রাখা যায় সে বিষয়ে পরামর্শ চেয়েছেন।
অফকমের কৌশল এবং গবেষণা গ্রুপের পরিচালক ইহ চৌঙ তেহ বলেন, আশার কথাটি হলো অনলাইনে নিরাপদ থাকার বিষয়ে নিয়ে বাবা মা বেশ সচেতন। এমনকি সারা দেশে এ বিষয় নিয়ে বেশ চর্চা হচ্ছে। বাচ্চাদের দাতব্য সংস্থা এনএসপিসি বাচ্চাদের ক্ষতিকারক কনটেন্ট দেখা থেকে বিরত রাখতে সামাজিক মাধ্যমকে বাধ্য করে।
শিশুদের অনলাইন সুরক্ষা নীতির প্রধান অ্যান্ডি বুড়োস বলেছেন, ‘ বাবা-মায়েরা তাদের শিশুদের সাথে মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে কথা বলেন ,এটা বেশ ভালো দিক। আমরা এটাও চাই টেক জায়েন্ট গুলো বাচ্চাদের দিকে নজর দিক। তাদের নিশ্চিত করতে হবে যে বাচ্চারা মিডিয়া থেকে খারাপ কিছু দেখবে বা শিখবে না।’