করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোতে আগামী মার্চ মাসে অনুষ্ঠেয় মার্কেটিং সম্মেলন বাতিল করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সান ফ্রান্সিসকোর মসকোন সেন্টারে মার্চ মাসে চার হাজার মানুষকে নিয়ে বিপণন সম্মেলনের আয়োজন করার পরিকল্পনা করেছিল ফেসবুক। তবে করোনার ভয়ে তা বাতিল করা হয়েছে।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জকে ফেসবুকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমাদের দলের সদস্যদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি সবার আগে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তাই করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত ঝুঁকি বিবেচনায় জনস্বাস্থ্যের বাড়তি সতর্কতা হিসেবে বৈশ্বিক মার্কেটিং সম্মেলন বাতিল করা হয়েছে।’
ফেসবুকের এই বড় সম্মেলন বাতিলের আগে করোনাভাইরাসের ভয়ে বার্সেলোনায় অনুষ্ঠেয় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের মতো আয়োজনও বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ। দ্য জিএসএম অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, চলতি বছর পরিকল্পনামাফিক এ প্রদর্শনী আয়োজন করা ‘অসম্ভব’ হয়ে উঠেছে। ব্যাপারটা হলো, করোনাভাইরাসের ভয়ে বিটি, ফেসবুক, এলজি, নকিয়া, সনি ও ভোডাফোনের মতো বড় কোম্পানিগুলো প্রদর্শনী থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে।
স্পেনে এ রোগ নিয়ে ভীত হওয়ার কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালভাদর ইলা। গত বুধবার তিনি বলেন, স্পেনের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় মানুষের আস্থা থাকা উচিত। তাঁর মতে, বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
বার্সেলোনায় এ বছরের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২৪ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি। লক্ষাধিক মানুষ সাধারণত এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এর মধ্যে ছয় হাজার মানুষ চীন থেকে আসেন। কারণটা খুবই অনুমেয়, মোবাইল ফোন ও অবকাঠামো নির্মাতাদের বেশির ভাগের কারখানা যে চীনে অবস্থিত।
প্রদর্শনীতে হাজার হাজার কোম্পানি তাদের নিত্যনতুন উদ্ভাবন প্রদর্শন করে থাকে। এ প্রদর্শনীর বদৌলতে স্থানীয় অর্থনীতির পালে হাওয়া লাগে।
গত সপ্তাহের শুরুতেই আমাজন, সনি, এলজি ইলেকট্রনিকস, এরিকসন, ফেসবুক ও চিপনির্মাতা কোম্পানি ইনটেল ও নিভিদিয়া জানায়, তারা এ বছরের প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে না। সঙ্গে যোগ দেয় ফরাসি টেলিকম গ্রুপ অরেঞ্জ; যদিও অরেঞ্জের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন রিচার্ড এ প্রদর্শনীর সভাপতিত্ব করে থাকেন।
ডয়চে টেলিকম বলেছে, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ রকম বড় একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে কর্মীদের পাঠানো ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কাজ হবে।
প্রদর্শনীর প্রধান নির্বাহী জন হফম্যান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বার্সেলোনা ও স্পেনের নিরাপদ স্বাস্থ্য পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই বলছি, দ্য জিএসএম অ্যাসোসিয়েশন চলতি বছরের আসর বাতিল ঘোষণা করছে।’ জন হফম্যান জানান, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগ, ভ্রমণজনিত উদ্বেগ ও অন্যান্য পরিস্থিতির কারণে এ বছর প্রদর্শনী করা সম্ভব হচ্ছে না।
মোবাইল ফোন শিল্পের বিশ্লেষক বেন উড বিবিসিকে বলেছেন, এবারের প্রদর্শনী এমন এক পরিস্থিতির বলি হয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। বেন উড বলেন, ‘এবার প্রদর্শনী না হওয়া আমাদের সবার জন্য বড় হতাশার কারণ।’
দ্য ভার্জের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৪৯ হাজার জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ১ হাজার ৩৮৩ জন এতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। করোনাভাইরাসের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে প্রযুক্তি খাতে। এতে পণ্য সংরক্ষণ, উৎপাদনের মতো নানা ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। চীনের বাইরে এখন পর্যন্ত অন্য কোনো দেশে ব্যাপক আকারে এ রোগ ছড়ায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকেও চীনের বাইরে কোনো আয়োজনকে বাতিল করার পরামর্শ দেওয়া হয়নি।