৭০ মিলিয়ন ডকুমেন্ট! ম্যানচেস্টার সিটি তো বটেই, পৃথিবীর অনেক বড় বড় ক্লাবসহ নানা প্রতিষ্ঠানের ডাটা রয়েছে সেখানে। তারই একটা ২০১৮ সালের নভেম্বরে জার্মান সংবাদপত্র ‘ডার স্পিগেল’-এ প্রকাশিত হয়। রীতিমতো বোমা ফাটানোর মতো অবস্থা! উয়েফার ক্লাব লাইসেন্স ও ফেয়ার প্লে নীতির ‘মারাত্মক লঙ্ঘন’ই করেছে ম্যানচেস্টার সিটি। এর প্রেক্ষিতে ইউরোপিয়ান ক্লাব প্রতিযোগিতা থেকে আগামী দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে ক্লাবটি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই তথ্য কীভাবে পেল ‘ডার স্পিগেল’?
আসল খবর, নিজেরা কোনো অনুসন্ধান করে এসব তথ্য পায়নি ‘ডার স্পিগেল’। তাদেরকে ই-মেইল করে পুরো বিষয়টি জানায় ‘জন’ নামের এক যুবক। তার পাঠানো মেইলে সব ধরনের প্রমাণ থাকায় তা প্রকাশও করে সংবাদ মাধ্যমটি। পরবর্তীতে বিষয়টি জানাজানি হলে তখন থেকে আলোচনা কে এই ‘জন’?
প্রায় ছয় মাস পর্তুগালসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে ‘জন’কে। অবশেষে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে তাকে হাঙ্গেরি থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে জানা যায়, সে যুবকের নাম ‘জন’ নয়। এমনকি তিনি হাঙ্গেরির নাগরিকও নন। তার মূল নাম রুই পিন্টো। ৩০ বছর বয়সী এ হ্যাকারের বাড়ি পর্তুগালে। আন্তর্জাতিক অঙ্গন তাকে ‘হুইসেল ব্লোয়ার’ বা তথ্য ফাঁসকারী হিসেবে মানলেও পর্তুগিজ আদালত তাকে প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত করে।
২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন নামিদামি ফুটবল ক্লাব হতে শুরু করে বড় বড় সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে আসছিলেন পিন্টো। এ সকল তথ্যের মধ্যে খেলোয়াড়দের যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য, টিম অফিসিয়ালদের অভ্যন্তরীণ ডকুমেন্ট, প্রয়োজনীয় ই-মেইল, খেলোয়াড়দের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য এবং ট্যাক্স প্রদানের তথ্যও ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পর্তুগিজ ফুটবল তারকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলারও নানা তথ্য ছিল। এ সবই পিন্টো ফাঁস করেন।
২০০৯ সালে রোনালদোর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক মডেল ক্যাথরিন মায়োরগা। তখন দুই পক্ষের গোপন আলোচনায় বিষয়টি দফা-রফা হয়ে যায়। পিন্টোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে ‘ডার স্পিগেল’ ২০১৮ সালে সংবাদ প্রকাশ করেছিল। তার ভিত্তিতে হয় মামলা। তবে তখন খুব বেশি আলোচনা হয়নি। পরে ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলনে নিজের পরিচয় প্রকাশের সাহস করেন মায়োরগা। এরপর ২০১৯ সালের জুলাইয়ে পর্যাপ্ত প্রমাণ না পাওয়ায় রোনালদোকে মুক্তি দেওয়া হয় সে অভিযোগ থেকে।
বর্তমানে জেলে রয়েছেন পিন্টো। আগের দিনই তার জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে পর্তুগালের কোর্টে। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে মোট ১৪৭টি নানা ধরনের প্রতারণামূলক মামলা রয়েছে। যদিও পিন্টোর একজন আইনজীবী তেক্সেইরা দ্য মোতা আশা করছেন, তার মক্কেল একজন সাধারণ হ্যাকার হিসেবে চিহ্নিত হবেন, যাতে তিনি প্রতারণা মামলা থেকে মুক্তি পান।