আফ্রিকার ভোক্তারা সবচেয়ে বেশি দামে ইন্টারনেট কিনছেন। যেখানে আজকাল ইন্টারনেটকে মৌলিক চাহিদার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি উঠছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এমনকি আফ্রিকার অনেক দেশের মানুষকে মাত্র ১ গিগাবাইট মোবাইল ব্রডব্যান্ড ডাটা কিনতে তাদের মাসিক গড় আয়ের পাঁচ ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়।
দ্য অ্যালায়েন্স ফর অ্যাফোর্ডেবল ইন্টারনেট (এফোরএআই) নামের একটি সংগঠন ১৩৬টি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের বার্ষিক সক্ষমতা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করেছে। মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ভারত, জ্যামাইকা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ঘানার মতো মধ্যম আয়ের দেশ এবং নেপাল, মালি, হাইতি, লাইবেরিয়া, ইয়েমেন এবং মোজাম্বিকের মতো নিম্ন আয়ের দেশে গড় আয়ের তুনলায় ইন্টারনেটের মূল্য বিচার করে এ প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। অবশ্য ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যয় সবচেয়ে বেশি।
এফোরএআই হলো ডব্লিউ ডব্লিউ ডব্লিউ এর উদ্ভাবক টিম বার্নস লির প্রতিষ্ঠিত ওয়েব ফাউন্ডেশনের একটি উদ্যোগ। গুগল ও ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠান এ সংস্থার অংশীদার।
এফোরএআই ইন্টারনেট সক্ষমতা বলতে বুঝায় ১ জিবি মোবাইল ব্রডব্যান্ড ডাটা কিনতে গড় মাসিক আয়ের ২ শতাংশের বেশি ব্যয় না হওয়া। কিন্তু আফ্রিকা মহাদেশে এই পরিমান ডাটা কিনতে গড়ে খরচ হয় ৭ দশমিক ১২ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাসিক গড় আয়ের পাঁচ ভাগের এক ভাগও চলে যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাতেগোণা কয়েকজন সম্পদশালী বাদে আফ্রিকার মানুষের জন্য ইন্টারনেট খুবই ব্যয়বহুল বিলাসপণ্য হয়ে রয়েছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৯ শতাংশ মানুষ যে এখনো ইন্টারনেট সংযোগের বাইরে থাকছে এটি তার অন্যতম কারণ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের লেখকরা দাবি করছেন, আফ্রিকায় শ্লথ গতির বাজার এবং একচেটিয়া ব্যবসার কারণেই ইন্টারনেট ডাটার দাম এতো বেশি। একই সঙ্গে তারা এ সমস্যা নিরসনে বেশ কিছু পরামর্শও তুলে ধরেছেন।
এফোরএআই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চাদ, কঙ্গো এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের জনগণকে মাত্র ১ জিবি ইন্টারনেট কিনতে তাদের মাসিক গড় আয়ের ২০ শতাংশেরও বেশি ব্যয় করতে হয়। অথচ একই মহাদেশের সবচেয়ে সস্তা ইন্টারনেট পাচ্ছে মিশর ও মরিশাসের বাসিন্দারা। তাদের একই পরিমান ডাটা কিনতে যথাক্রমে মাসিক গড় আয়ের দশমিক ৫ এবং দশমিক ৫৯ শতাংশ ব্যয় করতে হয়।
তবে সার্বিকভাবে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে মধ্যম আয়ের দেশের তুলনায় ইন্টারনেটের খরচ দ্রুত কমছে। যদিও বহু ক্ষেত্রেই দাম এখনো গ্রাহক বিস্তারে বাধা হয়ে রয়েছে। এ কারণে বাজার উদারীকরণের তাগিদ দিয়েছেন গবেষকরা।
ওয়েব ফাউন্ডেশনের গবেষণা পরিচালক ধনরাজ ঠাকুর বলেন, এখানে যেটি দরকার তা হলো সমন্বিত কৌশল নির্ধারণ…এখানে নিঃসন্দেহে সরকারের ভূমিকা রয়েছে। যেসব এলাকায় এখনো ইন্টারনেট পৌঁছায়নি সেখানে সেবা পৌঁছাতে সর্বজনীন সেবা তহবিলের যথাযথ ব্যয় নিশ্চিত করতে পারে একমাত্র সরকারই।
সেই সঙ্গে তিনি এও স্বীকার করেন যে, ইন্টারনেটের সহলভ্যতা বিস্তারে সরকারকে বুঝানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু সমস্যাও রয়েছে। যেমন, ক্যামেরুন এবং মিশরের মতো দেশের সরকার সাধারণ নাগরিকের ইন্টারনেট ব্যবহার কঠোরভাবে সীমিত রাখার পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করেছে।