চীনভিত্তিক টেলিকম নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা জিটিই মার্কিন বিচার বিভাগের নতুন তদন্তের মুখে পড়েছে। এবার প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা পরিচালনায় বিশেষ সুবিধা পেতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। খবর এনবিসি নিউজ।
২০১৭ সালে প্রথম মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল জিটিই। ওই সময় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত টেলিকম সরঞ্জাম ইরান ও উত্তর কোরিয়ায় সরবরাহ করায় প্রতিষ্ঠানটির ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর ফলে নিজেদের পণ্য উৎপাদনে মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টর পণ্য ক্রয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটির।
দোষ স্বীকার করে ৯০ কোটি ডলার মুচলেকা দিয়ে তখন নিষেধাজ্ঞার কবল মুক্ত হয় জিটিই। এর এক বছর পর ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন আবার জিটিইর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তখন অভিযোগ করা হয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরান ও উত্তর কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত পণ্য অবৈধভাবে সরবরাহের সঙ্গে জড়িত মোট ৩৫ কর্মীর তথ্য গোপন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তদন্তে মার্কিন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা করা হয়নি। ২০১৮ সালে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগকে আরো ১০০ কোটি ডলার জরিমানা পরিশোধ করে দ্বিতীয় নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পায় জিটিই। ভবিষ্যতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোনো দেশে পণ্য সরবরাহ করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে এবং অতিরিক্ত আরো ৪০ কোটি ডলার জামানত পরিশোধ করে।
জিটিই বিশ্বের বৃহৎ নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেডের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী। গত বছরের মে মাসে হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ। একই সময় প্রতিষ্ঠানটিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এতে জিটিইর মতো নিজেদের পণ্য উৎপাদনে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর কাছ থেকে সরঞ্জাম কেনার পথ বন্ধ হয়ে যায় হুয়াওয়ের। তবে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর মার্কিন গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে ৯০ দিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। এখন পর্যন্ত অস্থায়ী লাইসেন্স দিয়ে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
জিটিই ও হুয়াওয়ের ওপর কেন এমন নিষেধাজ্ঞা? জিটিইর বিরুদ্ধে অভিযোগ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরান ও উত্তর কোরিয়ায় পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। অন্যদিকে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম দিয়ে মার্কিনিদের ওপর নজরদারির কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং সংগৃহীত তথ্য সরাসরি চীন সরকারের কাছে হস্তান্তর করে আসছে। যদিও এসব অভিযোগের বিপরীতে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
বিবৃতিতে জিটিই জানায়, চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে একের পর এক ভিত্তিহীন অন্যায্য সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তিন বছর আগে প্রথমবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় তাদের টিকে থাকা এবং উন্নয়ন কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। যে কারণে জিটিইর বহু অংশীদারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এসব অংশীদারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
জিটিইর দাবি, তারা বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি অনুসরণ করে ব্যবসা করে আসছে। ব্যবসায় সৌহার্দ্য বজায় রাখতে দেশটির রফতানি নিয়ন্ত্রণ সম্মতি প্রকল্পে তারা বিনিয়োগ করে আসছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বড় অংকের আর্থিক জরিমানা পরিশোধের মাধ্যমে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবল মুক্ত হওয়ার পর গত বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) জিটিইর নিট মুনাফা প্রথমবার চারগুণ বেড়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে গত দুই বছর প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছিল, যা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নেতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত এলে তা তাদের ব্যবসা ধ্বংসের পায়তারা হবে।
বিবৃতিতে জিটিই জানায়, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তাদের নিট মুনাফা এক বছর আগের একই সময়ের ২৬৬ কোটি চাইনিজ ইউয়ানের চেয়ে ৩৭০ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া গত বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার পরিমাণ ছিল ৪১৩ কোটি ইউয়ান।