বৈশ্বিক সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে সৃষ্ট রোগ কভিড-১৯। প্রতিনিয়ত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। বৈশ্বিক এ অনিশ্চয়তার মধ্যে বহুজাতিক পার্সোনাল কম্পিউটার (পিসি) নির্মাতা হিউলেট প্যাকার্ড (এইচপি) অধিগ্রহণ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেরক্স হোল্ডিংস করপোরেশন। খবর এএফপি।
বিবৃতিতে জেরক্স জানায়, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা বাড়ছে। এর ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব সব খাতের প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়ছে। অনিশ্চিত এ পরিস্থিতিতে বড় কোনো অধিগ্রহণ চৌকস সিদ্ধান্ত হবে না। কৌশলগত কারণে আমরা এইচপি অধিগ্রহণ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।
গত বছর নভেম্বরে প্রথম এইচপি অধিগ্রহণে ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার মূল্য পরিশোধের প্রস্তাব দেয় জেরক্স, যা বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় প্রত্যাখ্যান করে এইচপি। এরপর গত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে আগের প্রস্তাবিত মূল্য আরো এক ধাপ বাড়িয়ে ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার পরিশোধের প্রস্তাব দেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে সে প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে এইচপি।
গত মার্চে সর্বশেষ অধিগ্রহণ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এইচপি জানায়, জেরক্স এইচপি অধিগ্রহণে আগের প্রস্তাবিত মূল্য বাড়িয়েছে। এইচপি অধিগ্রহণে প্রতি শেয়ারের দাম ২ ডলার থেকে বাড়িয়ে ২৪ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি শেয়ারের দাম ২৪ ডলার হিসেবে এইচপির মূল্য দাঁড়ায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার, যা এখনো প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম। অধিগ্রহণের জন্য জেরক্সের প্রস্তাবিত মূল্য বাস্তবসম্মত নয়। যে কারণে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে।
এইচপি বাজারমূল্য ও প্রভাব বিবেচনায় জেরক্সের তুলনায় তিন গুণ বড় প্রতিষ্ঠান। যে কারণে জেরক্সের এইচপি অধিগ্রহণের স্বপ্নকে উচ্চাভিলাষী বিবেচনা করা হচ্ছিল। এইচপি অধিগ্রহণে বড় কোনো বহুজাতিক ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেরক্সের পেছনে রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে জেরক্সের দাবি, তারা পূর্বতন ব্যবসার সম্পদ বিক্রি করে এইচপি অধিগ্রহণ করতে চায়।
২০১৫ সালে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেয় হিউলেট প্যাকার্ড করপোরেশন। পিসি ও সার্ভার, ডাটা স্টোরেজ গিয়ার ও সংশ্লিষ্ট সেবা খাতে ব্যবসা জোরদারের লক্ষ্যে বিভক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি। ওই সময় থেকে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত বছরের অক্টোবরের শুরুর দিকে পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নতুন করে নয় হাজার বা কর্মী বাহিনীর ১৬ শতাংশ ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন এইচপির নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এনরিক লরেস। আগামী তিন বছরে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানানো হয়।
ওই সময় বিবৃতিতে এনরিক লরেস বলেন, আগামী তিন বছরে সাত থেকে নয় হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে মোট কর্মী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা কমিয়ে ৫৫ হাজারে নামিয়ে আনা হবে। একযোগে বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে ২০২২ অর্থবছরের শেষ থেকে বার্ষিক ১০০ কোটি ডলার পরিচালন ব্যয় কমানো সম্ভব হবে।
২০১৬ সালের অক্টোবরে এইচপির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দিয়েছিল, যা ২০১৯ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের তথ্য জানানো হয়। পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সে সময় চার হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হবে বলে জানিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে একই বছরের মে মাসে এইচপি জানায়, কর্মী ছাঁটাই ১-২ শতাংশ বাড়তে পারে।
বৈশ্বিক পিসি বাজার খারাপ সময় পার করছে। বাজারটিতে খুব একটা ভালো পরিস্থিতিতে নেই এইচপি। বৈশ্বিক পিসি বাজারে ক্রমেই বিক্রি কমছে। কম্পিউটিংয়ের জন্য ব্যবহারকারীরা এখন সহজে বহনযোগ্য মোবাইল ডিভাইসে ঝুঁকছেন।
এইচপির দাবি, বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোয় দিন দিন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ও ব্যয়সংকোচনের লক্ষ্যে কর্মী ছাঁটাইয়ের পূর্বনির্ধারিত সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তবে জেরক্সের এইচপি অধিগ্রহণে ধাপে ধাপে মূল্য বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে মন্তব্য করেনি এইচপি।