ফাইভজি টেলিকম সেবা সবার আগে চালু করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। নতুন প্রজন্মের এ সেবায় বিশ্বনেতৃত্বে আসার সবচেয়ে বেশি সুযোগ ছিল তাদেরই। কিন্তু দেশটির সে আশার গুড়ে বালি ঢেলে দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশটিতে ফাইভজি প্রযুক্তি নিয়ে গ্রাহকদের আগ্রহ কমেছে। এ প্রযুক্তির স্মার্টফোনের বিক্রিও পড়তির দিকে। দক্ষিণ কোরিয়ার এ পরিস্থিতি অন্যদের জন্যও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ফাইভজি প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক বাজারে চাঙ্গা ভাব ফিরে পাওয়ার আশা করছিল মোবাইল অপারেটররা, সেই প্রযুক্তি নিজেই আজ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। খবর রয়টার্স।
শীর্ষ দুই অপারেটর এসকে টেলিকম ও কে টি করপোরেশনের হাত ধরে ঠিক এক বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় ফাইভজি নেটওয়ার্ক সেবার যাত্রা হয়। আর ডিভাইস তৈরিতে নেতৃত্ব দেয় দেশটির শীর্ষ মোবাইল ফোন নির্মাতা স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। প্রায় সমসাময়িক সময়েই বিশ্বের প্রথম ফাইভজি স্মার্টফোন উন্মোচন করে তারা।
প্রথম দিকে নতুন প্রযুক্তির স্মার্টফোনের প্রতি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে ব্যাপক আকারে ভর্তুকি দেয়া হয়। ফলে এ সময়ে স্মার্টফোনগুলোর বিক্রিতেও ছিল ঊর্ধ্বগতি। কিন্তু ক্রেতারা ডিভাইসের উচ্চমূল্য ও সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করায় ধীরে ধীরে পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। এর সঙ্গে করোনা সংকট যোগ হওয়ায় ফাইভজি ডিভাইসের চাহিদা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।
স্যামসাংয়ের সর্বশেষ ফাইভজি স্মার্টফোন হলো গ্যালাক্সি এস২০। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে স্মার্টফোনটি উন্মোচন করা হয়। এর দাম ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৯৫ হাজার ওন (প্রায় ১ হাজার ৩০৯ ডলার)। এস সিরিজে কোম্পানিটির আগের ডিভাইসটি ছিল এস১০। দক্ষিণ কোরীয় একটি অপারেটরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, উন্মোচনের পর প্রথম দিকে এস১০ যে পরিমাণে বিক্রি হয়েছিল, তার তুলনায় এস২০-এর বিক্রি কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। তুলনামূলক এ পরিসংখ্যানকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, কারণ সাধারণত নতুন কোনো স্মার্টফোন বাজারে এলে প্রথম দিকে তার বিক্রি বেশি থাকে। কিন্তু এস২০-এর ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। এতেই বোঝা যাচ্ছে ফাইভজির বাজারে বেশ সংকটের মধ্যেই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।
নভেল করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ফাইভজি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে কতটা প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে, দক্ষিণ কোরিয়া যেন তারই জলজ্যান্ত প্রমাণ। দুই বছর ধরে স্মার্টফোনের বৈশ্বিক বাজার খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। এ কারণে অ্যাপল ইনকরপোরেশনের মতো শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতা ফাইভজি প্রযুক্তির আশায় বসে রয়েছে। তারা মনে করছে, নতুন প্রযুক্তিটি ব্যাপক হারে চালু হলে এর সুবিধাসংবলিত স্মার্টফোনের বিক্রিও বাড়বে। ফলে বাজারে বাড়তি গতি আসবে। এ আশায় চলতি বছরের শেষের দিকে ফাইভজি স্মার্টফোন বাজারে আনার পরিকল্পনা রয়েছে অ্যাপলের।
কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার পরিস্থিতিকে ফাইভজির বৈশ্বিক বাজারের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এদিকে স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স ও অস্ট্রিয়া তো করোনা পরিস্থিতিতে ফাইভজি স্পেকট্রামের নিলামই স্থগিত করে দিয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, নতুন প্রযুক্তির টেলিকমসেবার জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।